শেষ হলো বিদ্রোহ, অনুশীলনে ফিরতে রাজি নারী ফুটবলাররা
Published: 16th, February 2025 GMT
অবশেষে শেষ হলো কোচের বিরুদ্ধে ১৮ নারী ফুটবলারের বিদ্রোহ!
কোচ পিটার বাটলার থাকলে খেলবেন না বলে গণ অবসরের হুমকি দেওয়া ফুটবলাররা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। বাফুফে ক্যাম্পে থাকা ফুটবলাররা ২৪ ফেব্রুয়ারি ছুটিতে যাবেন। এরপর ছুটি কাটিয়ে এসে বাটলারের অনুশীলনে যোগ দেবেন। আজ বাফুফেতে সাংবাদিকদের এই কথা জানান বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘আমি আজ তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা অনুশীলনে ফিরতে রাজি হয়েছে। আপাতত ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্প ছুটি। তারাও (১৮ ফুটবলার) ছুটিতে যাবে। ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর তাদের সঙ্গে চুক্তিও করা হবে।'
এর আগে রোববার দুপুরে কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ১৮ ফুটবলারের সঙ্গে বৈঠক করেন মাহফুজা। সেখানে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত নারী উইংয়ের প্রধান মেয়েদের দ্রুত অনুশীলনে ফেরার তাগিদ দেন। আলোচনার একপর্যায়ে তারা নিজেদের আল্টিমেটাম প্রত্যাহারের কথা জানান।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী ছিল ১৮ নারী ফুটবলারের এই বিদ্রোহ। গত ৩০ জানুয়ারি বাফুফে ভবনের সামনে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে তিন পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগ তুলে ধরেন সাবিনারা। বাটলারকে কোচ রেখে দেওয়া হলে অনুশীলনে যোগ দেবেন না, এবং সবাই একযোগে অবসরের হুমকি দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসানকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাফুফে। সেই কমিটি তদন্ত শেষে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর কয়েক দফা বাফুফে সভাপতিও এই বিদ্রোহী ফুটবলারের অনুশীলনে ফেরার আহ্বান জানান।
বাফুফের নারী উইং থেকেও একাধিকবার বৈঠক হয় মেয়েদের সঙ্গে। কিন্তু এই ১৮ ফুটবলার সিদ্ধান্ত বদলাতে রাজি হননি। অবশেষে তারা পুরোনো সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন আজ।
এদিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ আর আগামী ২ মার্চ একই দলের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সাবিনা-মনিকাসহ ১৮ ফুটবলারের কেউ আমিরাত ম্যাচের স্কোয়াডে থাকছেন না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ টবল র র
এছাড়াও পড়ুন:
ফাগুনের বৃষ্টিতে ছন্দপতন
সকালের দিকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল কম। তাই প্রকাশকরা বিকেল ও সন্ধ্যার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টিতে সব আশায় গুড়ে বালি। ক্রেতা-দর্শনার্থীরা যে যার মতো এদিক-ওদিক চলে যান। পরে বৃষ্টি থামলেও মেলা তেমন জমেনি।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলায় কথাগুলো বলছিলেন আবিষ্কার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন। রাজধানীতে বসন্তের বিরল বৃষ্টি স্বস্তি আনলেও বইমেলায় বিক্রি এলোমেলো করেছে।
এদিন সকাল থেকে উন্মুক্ত ছিল মেলার দ্বার, ছিল শিশুপ্রহরও। তবে সকালে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় তেমন চোখে পড়েনি। প্রকাশকরা বিকেল ও সন্ধ্যায় বিক্রিতে জোয়ার আসবে– এমন প্রত্যাশা করছিলেন। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৫টার পর শুরু হয় বৃষ্টি। এতেই ঘটে ছন্দপতন।
সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টি আসার আগে বারবার মাইকিং করে স্টল মালিকদের সতর্ক করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রস্তুত থাকতে তাগিদ দেওয়া হয়। মাইকিং করে পাঠক-দর্শনার্থীকে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়।
তুমুল বৃষ্টি ও বাতাসে স্টলের তেমন ক্ষতি না হলেও বই বিক্রিতে ধস নামে বলে জানান অবসরের বিক্রয়কর্মী জামিল। তিনি বলেন, বিকেলের দিকে যখন লোক সমাগম ও বিক্রি বাড়তে শুরু করেছিল, তখনই বৃষ্টি এলো। তবে কিছু ক্রেতা বৃষ্টির মধ্যেও ছিলেন। পরে বই কিনেছেন। বৃষ্টি না হলে বিক্রি আরও বাড়ত।
দিনের শুরুতে শিশুচত্বরে লোক সমাগম ও শিশুদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ বিষয়ে ঝিঙেফুলের প্রকাশক গিয়াসউদ্দিন বলেন, আসলে বাচ্চাদের কাছে শিশুচত্বরে মূল আকর্ষণ থাকে সিসিমপুর। সেটা না থাকায় আমাদের বিক্রিতেও ঘাটতি পড়েছে। এমনিতে এ বছর মেলায় বিক্রি কম।
সন্ধ্যা ৭টার পর বৃষ্টি কমতে শুরু করলে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় কিছুটা বাড়ে। বৃষ্টিতে প্রায় ভেজা সাদিয়া জাহান বলেন, ‘চাকরির কারণে মেলায় আসার সময় পাই না। আজ এলাম কয়েকটি বই কিনতে। কিন্তু এসেই দেখি বৃষ্টি। তবুও যাইনি। কারণ পরে আসতে পারব না। তাই বই কিনেই যাব।’
বিদ্যাপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী কাউছার ইসলাম সজল বলেন, সন্ধ্যার দিকেই মূলত বই কেনার পাঠক আসেন। আজ ছুটির দিন ছিল। বৃষ্টিতে স্টলের তেমন ক্ষতি না হলেও বিক্রিতে ভাটা নামে।
বৃষ্টির পর মেলার বেশির ভাগ স্টল খুললেও বেশ কয়েকটি বন্ধ হয়ে যায়। লিটলম্যাগ চত্বরে কাদা-পানি জমে থাকতে দেখা যায়। এসব ডিঙিয়ে হলেও বৃষ্টির পর গাবতলায় আসেন পাঠক-দর্শনার্থী। তবে বৃষ্টিতে মেলা বেচাকেনা ব্যাহত হলেও চোখে পড়ে বিপুলসংখ্যক হকার। কেউ খাবার বিক্রি করছেন বা কেউবা ফুল।
নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৪টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অবসর প্রকাশনা সংস্থা থেকে গোলাম মুরশিদের ‘আত্মকথা ইতিকথা’, সৌম্য প্রকাশনী থেকে পীযূষ সিকদারের ‘অসীম শূন্যে হাঁটি’, সময় প্রকাশন থেকে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘অ্যাডভেঞ্চার মেঘবতী’, কিডস বুকস থেকে লিটন মোস্তাফিজের ‘অপ্রত্যাশিত মহাকাশযাত্রা’, সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে বুলবুল হাসানের বায়োফিকশন ‘অন্তহীন বিতর্কযাত্রা’।
মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কায়কোবাদের সাহিত্যে শ্মশানের চিত্রাবলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমরান কামাল। আলোচনায় অংশ নেন হাবিব আর রহমান। সভাপতিত্ব করেন আবু দায়েন। ইমরান কামাল বলেন, কায়কোবাদ স্বশিক্ষিত মানুষ হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। কবি হিসেবে কায়কোবাদের আবির্ভাব তখন, যখন বাংলার সাহিত্যধারায় কাহিনিকাব্যের প্রভাব ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসতে শুরু করেছে। কবি হিসেবে কায়কোবাদ নিজেকে চিহ্নিত করেছিলেন ‘পুরাতন’ পথের পথিক হিসেবেই।
হাবিব আর রহমান বলেন, কবি কায়কোবাদের মধ্যে খুব অল্প বয়সেই স্বদেশ চেতনা জাগ্রত হয়েছিল। তিনি কেবল কাহিনিভিত্তিক কাব্যেরই কবি নন, গীতিকাব্যেরও কবি।
‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আমিরুল মোমেনীন মানিক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মালেক মুস্তাকিম, কবি ড. শাহনাজ পারভীন, কবি মোশাররফ হোসেন খান ও কবি মমতাজ রহমান।