গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ইজতেমার তৃতীয় ধাপ বা ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের ইজতেমা। আজ রোববার দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতে তাবলিগ জামাতের সাথি ছাড়াও অংশ নেন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার অসংখ্য মুসল্লি।

এর আগে আজ ফজরের নামাজের পর ভারতের মাওলানা মোরসালিনের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার তৃতীয় বা শেষ দিনের কার্যক্রম। বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুফতি আজিম উদ্দিন। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয় হেদায়েতি বয়ান। এ বয়ান শেষে দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়। মোনাজাত শেষ হয় বেলা ১টা ৭ মিনিটে।

মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকাসহ দূরদূরান্তের হাজারো মুসল্লি। এ সময় তাঁরা দুহাত তুলে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ সময় হাজারো মুসল্লির ‘আমিন’ ‘আমিন’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে সব ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ মানবতার কল্যাণ কামনা করা হয়।

মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন ঢাকার দক্ষিণখানের বাসিন্দা মো.

ফজলুর রহমান। তিনি ইজতেমা মাঠের ভেতর ৬ নম্বর সড়কে মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাত শেষে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি ইজতেমার কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির (মাওলানা সাদ বা জোবায়ের) অনুসারী নই। প্রতিবছরই ইজতেমার মোনাজাতে অংশ নিই। এবার আগের দুই ধাপের ইজতেমার মোনাজাতে অংশ নিতে পারিনি। তাই আজ এসেছি। এবার মাঠে মুসল্লিদের ভিড় কম। খুব সুন্দরভাবে মোনাজাত করতে পেরেছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইজত ম র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী-বিএনপি পাল্টাপাল্টি হামলা, আহত ৪

চট্টগ্রামে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের সঙ্গে হামলা পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুই দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের চারজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

আহতরা হলেন- ছাত্রঅধিকার পরিষদ নেতা মো. মারুফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ মীর ও কর্মী মো. সজীব এবং ছাত্রদল কর্মী রায়াদ হাসান। নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় অবস্থিত মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠন ও এক নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে বারণ করাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি কলেজের পরিচালনা কমিটি গঠন হয়। এতে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনসহ চার বিএনপি নেতা। আজ সকালে তাদেরকে কলেজে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কমিটি গঠনের পর সিরাজ উদ্দিনকে নিয়ে কটূক্তি করেন এক নারী শিক্ষক। আরেক শিক্ষক সেটি সিরাজ উদ্দিনকে জানিয়ে দেন। এর জের ধরে সিরাজ উদ্দিন ওই নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে বারণ করেন। 

বিষয়টি শিক্ষার্থীরা জানতে পারলে আজ সংবর্ধনা চলাকালে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদ জানান। খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও জড়ো হন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মো. সজীব নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে বিকেলে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধি দল কলেজে যান। তারা অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কলেজ গেইটের বাইরে থেকে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের ওপর চড়াও হন ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি নেতারা থানায় যান। সেখানে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আবারও তাদের ওপর চড়াও হন। থানার বাইরে ছাত্রঅধিকার পরিষদ নেতা মারুফকে পেয়ে মারধর করেন। পরে পুলিশ উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘সম্প্রতি কলেজটির পরিচালনা কমিটি গঠন হয়। এরমধ্যে চারজনই বিএনপির। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কলেজে তাদের সংবর্ধনা দেয় ছাত্রদল। কলেজটিতে রাজনীতি নিষিদ্ধ। এরপরও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে তারা। খবর পেয়ে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল গেলে তাদের ওপরও চড়াও হয় ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে অভিযোগ দিতে থানায় গেলে সেখানে আমাদের একজনকে মারধর করে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রদল ও বিএনপি। হামলায় জড়িত এই নব্য ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আবার রাজপথে নামবো।’

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জোবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, ‘এক শিক্ষককে কলেজে আসতে বারণ করার প্রতিবাদ করায় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নিবো। পুলিশের সামনে এই ধরনের হামলার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা।’

আকবরশাহ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মাইনুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষকদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জের ধরে শিক্ষার্থীরা বিরোধে জড়িয়েছেন। এই বিষয়ে মীমাংসাও হয়েছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় দেওয়া ছেলেরা যাওয়ার সময় ছাত্রদলের এক কর্মীকে বেধড়ক পিটিয়েছে। তারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি।’ তার দাবি, ছাত্রদল নয়; কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। 

শিক্ষককে বের করে দেওয়ার হুমকি প্রসঙ্গে কলেজ পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘কাউকে বের করে দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। এখানে বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে কিছু মানুষ বিশৃঙ্খলা করছে। যারা একসময় ছাত্রলীগ-শিবির করত।’

আকবরশাহ থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘কলেজ কমিটির এক সদস্যকে নিয়ে এক শিক্ষকের কটূক্তির জেরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছেলেরা ছাত্রদলের এক ছেলেকে পিটিয়েছে। পরে তারা আবার একা পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজনকে মারধর করেছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ