নাটোরে জমিতে পানি সেচ দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, নারীসহ গুলিবিদ্ধ ১২
Published: 16th, February 2025 GMT
নাটোরের সিংড়ায় জমিতে পানি সেচ দেওয়া নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের বন্দুকের ছোড়া ছররা গুলিতে ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের কদমকুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই আহতদের উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কদমকুড়ি গ্রামে জমিতে পানি সেচ দেওয়া এবং মসজিদের হিসাব-নিকাশ নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। তিন দিন আগে কদমকুড়ি গ্রামের প্রয়াত চান্দু ফকিরের ছেলে ওয়াদুদ ফকিরের জমিতে পানি সেচ বন্ধ করে দেন প্রতিপক্ষ রতন আলী ও তার ভাই বিএনপি নেতা মানিক হোসেন। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় প্রতিপক্ষ রতন আলী ও তার ভাই মানিক হোসেনের নেতৃত্বে অপর পক্ষের ওপর হামলা চালায় ১৫ থেকে ২০ জন। এতে তাদের বন্দুকের ছোড়া ছররা গুলিতে একপক্ষেরই ১২ জন গুলিবিদ্ধ আহত হন। বন্দুকের গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। পরে রাতেই আহতদের উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছররা গুলিতে আহতরা হল- ইব্রাহিম মন্ডল (৩২), এলাহী মন্ডল (২৮), হনুফা বেগম (৫২), আল আমিন মন্ডল (১৬), নাসিম আলী (২৫), সুজন আলী (১৭), শাকিল (১৮), রফিকুল ইসলাম (৪৮), ফরিদ আলী (৩৮), সুয়েল আলী (২৪), আব্দুল আজিজ (৪৯), মান্নান হোসেন (৫৮), শাহাদত আলী (৩৯) ও মাসুদ রানা (৩২)।
গুলিবিদ্ধ অন্তত চারজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমি নিয়ে বিরোধে পানি সেচ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। সেখান থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়। পরে মসজিদের হিসেব নিয়েও চলে উত্তেজনা। আর এই দুই বিষয় নিয়েই মানিক, রতনের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন বন্দুক নিয়ে আচমকা গুলি করেন।
আহতের স্বজন মামুন হোসেন বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে কদমকুড়ি জামে মসজিদ কমিটি দখল করে রয়েছেন রতন আলী, আবুল হোসেন ও এছার উদ্দিন। দীর্ঘ সময়ে মসজিদের কোনো উন্নয়ন হয়নি। রতনের কাছ থেকে বন্ধক রাখা জমিতে পানি দিতে গেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাতে এসে রতন, মানিক দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে বন্দুক দিয়ে গুলি চালিয়েছে।
এ বিষয়ে কদমকুড়ি জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি রতন আলী ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দেওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
অভিযুক্ত আরেক ভাই ডাহিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মানিক হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘এখানে মসজিদের হিসাব-নিকাশের কোনো ঘটনা নেই। জমিতে পানি সেচ দেওয়া নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। আমি সিংড়ায় থাকি, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমি শুনেছি, কে বা কারা রাতে বন্দুক দিয়ে গুলি করেছে।’
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক বলেন, জমিতে পানি সেচ দেওয়া নিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত আছে। বন্দুকের ছোড়া গুলিতে ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। চার জন নাটোর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি আছে। বন্দুক উদ্ধারে অভিযান চলছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রশিক্ষণ-কর্মসংস্থান কার্যক্রম শুরু
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ জনকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।
বুধবার দুপুর ১টায় রাজধানীর বাড্ডা সাঁতারকুল এলাকায় মাল্টিক্রাফট টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
ইকুয়ালিএবল ও বিদেশ ফাউন্ডেশন ইউএসএ নামের দুটি সংগঠনের আর্থিক সহায়তায় অ্যাসোসিয়েশন ফর ইকোনমিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অব বাংলাদেশ, মাল্টিক্রাফট টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন এই কার্যক্রম শুরু করেছে।
আয়োজকরা জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আন্দোলনে আহতদের শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায় তাদের জন্য বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষন, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, থাকা খাওয়ার পাশাপাশি ও প্রশিক্ষণ পরবর্তী তাদের কর্মসংস্থান পেতে সহায়তা দেওয়া হবে।
শুরুতে যে ১০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তারা হলেন- পাবনার মিরাজুল ইসলাম, নেত্রকোনার আকাশ মিয়া, কিশোরগঞ্জের জুনায়েদ আহমেদ, টাঙ্গাইলের মানিক মিয়া, মাদারীপুরের নেসার উদ্দিন, বরিশালের আবির হোসেন, ঢাকার উত্তরার আশরাফউদ্দিন ইমন, ঢাকার মহাখালীর রানা মিয়া, বরিশালের হানিফ মিয়া ও সিলেটের জুবেল মিয়া। তাদের কেউ পা হারিয়েছেন, কেউ গুলি ও অন্যান্য আঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নেসার উদ্দিন তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য সংগঠনগুলোকে ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিদেশ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শাহুদ আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০ জনকে নিয়ে শুরু পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে আরও প্রকল্প হাতে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মুস্তাফিজ সরকারকেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন আসিয়াব প্রতিনিধি রিয়াজুল ইসলাম, সন্তান ও অভিভাবক ফোরামের কেন্দ্রীয় সমন্বয় ডা. শাকিল আরিফ চৌধুরি, বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ফরিদ উদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি ডা. ইশরাত জাহান, প্রকল্প সমন্বয়ক ডা. দলিলুর রহমান, মাল্টিক্রাফট টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের প্রিন্সিপাল আব্দুল মান্নান প্রমুখ।