গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সুপারিশ

শিশুর সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক আসামি থাকলে বিচার যাতে শিশু আদালত আলাদাভাবে করতে পারেন, সে জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। 

ভিকটিম ও সাক্ষী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্য ও সম্পত্তির সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।

তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে—এমন অপরাধ প্রথমবার সংঘটনের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে প্রবেশন আদেশ অথবা শুধু জরিমানার বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বিয়ের সময় নিকাহনামায় মোহরানার পরিমাণ টাকায় নির্ধারণের সঙ্গে সঙ্গে সমমূল্যে স্বর্ণের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। পরিশোধের সময় ওই স্বর্ণের পরিমাণের ভিত্তিতে পরিশোধযোগ্য মোহরানার অঙ্কও নির্ধারণ করতে হবে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ‘আইনের সংস্কার’ অধ্যায়ে এমন সুপারিশ রয়েছে।

প্রতিবেদনে ‘মোহরানা ধার্যের বিধান সংশোধন’ বিষয়ে বলা হয়েছে, মুসলিম আইনে প্রদত্ত মোহরানাবিষয়ক আইনগত অধিকার সুরক্ষার স্বার্থে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অপরিশোধিত মোহরানা নির্ধারণের বিষয়টি যুক্তিসংগত ও ন্যায়সংগত নয়। এ ক্ষেত্রে বিয়ের পরে যেকোনো সময়ে এমনকি ২০–২৫ বছর পরেও বিচ্ছেদ হলে নিকাহনামায় লিখিত টাকার অঙ্কে প্রকাশিত মোহরানাকে ভিত্তি করে তা পরিশোধের ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। সাধারণত পারিবারিক আদালতে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে একই নিয়মে অপরিশোধিত মোহরানা ধার্য ও পরিশোধের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো টাকার ক্রয়ক্ষমতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিম্নগামী। ফলে মোহরানা ধার্যকরণ ও পরিশোধের অন্যতম মৌলিক উদ্দেশ্যে অর্থাৎ তালাকপ্রাপ্ত নারীর ন্যূনতম সুরক্ষার শর্ত সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়।

সুপারিশে সংস্কার কমিশন বলেছে, এই বাস্তবতার আলোকে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১–এর ধারা ১০ সংশোধন করা প্রয়োজন যে বিয়ের সময় নিকাহনামায় মোহরানার পরিমাণ টাকায় নির্ধারণের সঙ্গে সমমূল্যে স্বর্ণের পরিমাণ (ক্যারেটসহ) উল্লেখ করতে হবে এবং পরিশোধের সময় ওই স্বর্ণের পরিমাণের ভিত্তিতে পরিশোধযোগ্য মোহরানার অঙ্ক নির্ধারণ করতে হবে। যেহেতু মোহরানা পরিশোধ করা ধর্মীয় দায়িত্ব এবং কেবল চুক্তি থেকে উদ্ভূত দায় নয়, সেহেতু মোহরানার দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রযোজ্য হবে না।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে প্রধান করে আট সদস্যের বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল গত বছরের ৩ অক্টোবর। কমিশন তাদের ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৩১টি অধ্যায়ে নানা সুপারিশ ও প্রস্তাব তুলে ধরেছে।

শিশু আইন সংশোধনের সুপারিশ

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের শিশু আইন অনুযায়ী আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর বিচার শিশু আদালত করে থাকেন। কিন্তু একই ঘটনা থেকে উদ্ভূত অপরাধে প্রাপ্তবয়স্ক আসামি ও শিশু অভিযুক্ত থাকলে শিশুর বিচার শিশু আদালত এবং প্রাপ্তবয়স্কের বিচার উপযুক্ত ফৌজদারি আদালত করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন আদালতে বিচারের ফলে প্রাপ্তবয়স্ক আসামি ও শিশুর ক্ষেত্রে অনেক সময় বিচারের ফল সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে একই ঘটনা থেকে উদ্ভূত অপরাধে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক আসামি থাকলে তাদের বিচার যাতে শিশু আদালত আলাদাভাবে করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংশোধন দরকার। 

কিছু অপরাধে প্রবেশন বা জরিমানা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির অধিকাংশ ধারায় কারাদণ্ডের সঙ্গে অর্থদণ্ডের উল্লেখ আছে। এতে অনেক ছোটখাটো অপরাধেও এবং প্রথমবার সংঘটিত অপরাধেও দোষী ব্যক্তিকে আদালত কারাদণ্ড দিয়ে থাকেন। একজন অপরাধী কারাদণ্ড ভোগ করলে পরবর্তী সময়ে তার সংশোধনের সুযোগ কমে যায়। সুপারিশে সংস্কার কমিশন বলেছে, তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে—এমন অপরাধ প্রথমবার সংঘটনের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে প্রবেশন আদেশ অথবা শুধু জরিমানা দণ্ড প্রদানের বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

শাস্তিসংক্রান্ত শুনানি ও দণ্ড প্রদান নির্দেশিকা

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশে শাস্তি বা দণ্ড বিষয়ে শুনানি প্রচলিত আছে। অভিযুক্ত আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে কিংবা অপরাধ স্বীকার করে দেওয়ার পরে একটি পৃথক তারিখে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দেশে বিচারকেরা একই অধিবেশনে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠান। সুপারিশে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে শাস্তিসংক্রান্ত শুনানি পুনঃপ্রবর্তন এবং পৃথক দণ্ড প্রদান নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে হবে।  

সাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষায় সুপারিশ

আমাদের বিচারব্যবস্থায় ভিকটিম (ভুক্তভোগী) ও সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত ন্যায়বিচার ব্যাহত হয়। দেশে এখন পর্যন্ত সাক্ষীর সুরক্ষার জন্য কোনো আইন করা হয়নি। ভিকটিম একটি মামলার অন্যতম সাক্ষী। কিন্তু আমাদের দেশে একইভাবে ভিকটিমের সুরক্ষা, ভিকটিমের খরচ বা ক্ষতিপূরণসংক্রান্ত বিধান নেই। ক্ষতিপূরণসংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৫ ধারাটি অপ্রতুল। এ বিষয়ে তিন দফা সুপারিশে কমিশন বলেছে, ভিকটিম ও সাক্ষীর এবং তাদের পরিবারের সদস্য ও সম্পত্তির সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর শ ধ র অপর ধ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন করবে সরকার

বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

তিনি জানান, ২০২৭ সালের মধ্যে এ আইন প্রণয়ন করা হবে। ইতিমধ্যে সরকার এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে মরক্কোর মারাকাসে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্ব সড়ক নিরাপত্তা সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে একটি সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হবে। সরকার ইতিমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে একটি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কৌশলগত কর্মপরিকল্পনাও রয়েছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনা।

জানা যায়, সরকার ২০৩০ সালের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে বিশেষ করে লক্ষ্য ৩.৬ এবং ১১.২ অর্জনের জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৩ ও ১১ অর্জনে সড়ক নিরাপত্তার ভূমিকা স্বীকার করেছে।

এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করছে। বাংলাদেশ ২০২৭ সালের মধ্যে প্রথম জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা আইন চূড়ান্ত ও অনুমোদন করবে, যা নিরাপদ ব্যবস্থা (সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ) অনুসরণ করে প্রণয়ন করা হবে।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভিত্তিক ডেটাবেইস ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হবে।

২০২৬ সালের মধ্যে একটি গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে, যা ২০২৪ সালের মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের জন্য ২০২৬ সালের মধ্যে একটি বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নির্দেশিকা তৈরি করবে।

এই সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের অ্যানফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্টের পরিচালক নাজনীন হোসেন, গ্লোবাল রোড সেফটি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গ্রান্টস প্রোগ্রামের ম্যানেজার তাইফুর রহমান, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. শরিফুল আলম, নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ব্র্যাক রোড সেফটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ ও সিআইপিআরবি’র ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরীসহ বাংলাদেশ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা বিধি নেই। তাই এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০২৭ সালের মধ্যে একটি সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করবে।

ঢাকা/হাসান/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকরি বিধিমালা প্রণয়নের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার ডিএমটিসিএল কর্মীদের
  • ২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন করবে সরকার
  • নদী-পাহাড়-বন রক্ষায় ডিসিদের যেসব নির্দেশনা দিলেন উপদেষ্টা
  • মেট্রোরেলের চাকরিবিধি চূড়ান্ত করার দাবি, ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধে
  • ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেট্রোরেল সেবা বন্ধের হুমকি
  • শুক্রবার থেকে মেট্রোরেল বন্ধের হুমকি ডিএমটিসিএলের
  • চাকরি বিধিমালা প্রণয়নে সময় বেঁধে দিলেন ডিএমটিসিএলের কর্মীরা