ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে তরুণদের নতুন দল আসছে ফেব্রুয়ারি মাসেই। দলটির নেতৃত্বে থাকছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি আহ্বায়ক হবেন দলের। তবে সদস্যসচিব কে হচ্ছেন তা নিয়ে ছাত্র নেতৃত্বের মধ্যে চলছে বিতর্ক। 

জানা গেছে, ২১ ফেব্রুয়ারির কাছাকাছি যেকোনো দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এই দলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ছাত্রসংগঠনও নিয়ে আসবেন ছাত্রনেতারা। 

সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলাম, মূলত ছাত্ররাই এটার নেতৃত্বে ছিল। ছাত্র এবং গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে একটা নতুন রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা বা আলোচনা রয়েছে। সেই দলে যদি অংশগ্রহণ করতে হয় তবে অবশ্যই সরকারে থেকে সেটা সম্ভব না। সেই দলে যদি আমি যেতে চাই তবে সরকার থেকে পদত্যাগ করব।’

কবে পদত্যাগ করবেন- এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ঘোষণা হয়েছে যে, এ মাসেই দল গঠন হবে। যদি তাই হয় তবে এ মাসেই সরকার ছেড়ে দলে অংশ নেব। আর কয়েক দিনের মধ্যেই একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সবাই পাবেন, আপনারা জানতে পারবেন।’

এদিকে নাহিদ ইসলাম দলের আহ্বায়ক পদে চূড়ান্ত হলেও সদস্যসচিব কে হচ্ছেন তা নিয়ে দরকষাকষি চলছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে এই দরকষাকষি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও গড়িয়েছে। 

ছাত্রনেতাদের সূত্রে জানা গেছে, অভ্যুত্থানে সামনে এবং পর্দার আড়ালে থাকা তরুণ ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি প্লাটফর্ম গঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে আছেন আখতার হোসেন, আসিফ-নাহিদদের গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, সাবেক শিবিরের নেতা, ছাত্র ফেডারেশন, বামপন্থীসহ নানা অংশীজন। তাদের মধ্য থেকে নতুন দল আসছে। এখন রাজনৈতিক দলে সবাই শীর্ষ নেতৃত্বে অবস্থান চান। 

দলের সদস্যসচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি ও নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম আলোচনায় রয়েছেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিডিয়া সেলের সম্পাদক আল মাশনূন ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আখতার হোসেন যদি আমাদের ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বস্থানের কোথাও না থাকে এই রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের না। রাজনীতি আমরা তাকে মাথার উপর রেখেই করব।’ 

আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম ফেসবুকে এক পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘আখতার হোসেন ভাই আমার পীর। ভাইয়ের হাতে আমার রাজনীতিতে বায়াত। ভাই যদি আমার চোখ বেঁধে দিয়ে বলে ঝাঁপ দে, আমি ভাবব না সামনে কি আছে। ভাইয়ের নামে দুটো কথা বলার আগে নিজ নিজ খাতা খুলে দেখে নেওয়া উচিত।’

এদিকে ঢাবি শিবিরের সাবেক আরেক সভাপতি নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব রাফে সালমান রিফাত ফেসবুকে পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘আখতারকে মাইনাস করতেছে কে? নাহিদ নাকি মাহফুজ? কই থেকে মাইনাস করতেছে? দলে নেবে না?’ 

এদিকে নতুন দলের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, দল গঠনের প্রক্রিয়া হিসেবে আমরা জনমত জরিপ করছি। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও বিভিন্ন জেলা থেকে মতামত আসছে। সে ডেটাগুলো অ্যানালাইসিস করা শুরু হবে। এরপরই আমরা বুঝতে পারব জনগণ কী ধরনের দল চাচ্ছে, কী ধরনের নাম চাচ্ছে, মার্কা চাচ্ছে। জনগণের মতামতকেই আমরা প্রাধান্য দেব। এছাড়া গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র আমরা প্রস্তুত করছি। আমরা ভাবছি যে, যাতে দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়। এক ব্যক্তি কিংবা পরিবারকেন্দ্রিক কালচার যেন তৈরি না হয়।’ 

দল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে, আমাদেরও দায়িত্ব গ্রহণের সময় এসেছে। সেজন্য আমরা রাজনৈতিক দল গঠনের সর্বোচ্চ প্রক্রিয়া চালু রেখেছি। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহকেই আমরা নির্ধারণ করেছি। সে অনুযায়ী আমরা খুব দ্রুত কাজ করছি। জনগণকে একটা সুন্দর রাজনৈতিক দল উপহার দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মানুষের বিপুল সাড়া আমরা পাচ্ছি। গুগল ফর্ম ছাড়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় লক্ষাধিক মানুষ মতামত দিয়েছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন ন হ দ ইসল ম ন হ দ ইসল ম আখত র হ স ন সদস যসচ ব ফ সব ক ন দল র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার পরামর্শ 

সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় (অফিসার্স অ্যাড্রেস) সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। সোমবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেনাপ্রধান সংকটময় সময়ে সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচারের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সারাদেশে সেনাসদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে যে দায়িত্ব পালন করছে, জাতি তা মনে রাখবে। তিনি সবাইকে পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন। এ সভায় সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার বাইরের কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত হন। 

সেনাপ্রধান বলেন, রমজানে অনেক সদস্য ক্যাম্পের বাইরে ইফতার করলেও তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো শিথিলতা আসেনি। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব প্রশংসিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, সম্প্রতি ঢাকা সফরে আসা জাতিসংঘ মহাসচিব শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অসাধারণ কাজের প্রশংসা করেছেন। 
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে শান্তিপূর্ণভাবে সেনানিবাসে ফিরে আসা হবে আমাদের বিজয়।’ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পরিশ্রমের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। 

সূত্র আরও জানায়, উস্কানিমূলক বক্তব্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোর আহ্বান জানান সেনাপ্রধান। এতে উস্কানিদাতারাই লাভবান হবে– মন্তব্য করেন তিনি।  গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। 

সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীর কাজ সম্পর্কে সরকার জানে, জনগণও জানে। নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু দেশে কোনো জরুরি অবস্থা জারি হয়নি। তিনি সবাইকে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরামর্শ দেন।   

অপরাধের হার পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় একই থাকলেও দৃশ্যমান অপরাধ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বলে জানান সেনাপ্রধান। তাই এসব অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন। যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই দৃঢ়তা বজায় রাখার কথা বলেন তিনি।  

উগ্রপন্থার অনুসারীরা যাতে কোনো অস্বাভাবিক কিছু করার চেষ্টা করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কথাও বলেছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশকে কোনো ক্ষতিকর শক্তি স্পর্শ করতে পারবে না বলেও অভিমত দেন সেনাপ্রধান। 

সোমবার রাতে এ সভার বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সমকালকে জানায়, এটি নিয়মিত সভা। সেখানে সেনাপ্রধান সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ