সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে জমিতে গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার সকালে উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা ও কামরূপদলং গ্রামবাসীর মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে  কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেলে আস্তমা গ্রামের কৃষক বজলু মিয়ার গরু কামরূপদলং গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়ার জমির ধান খায়। এ নিয়ে সেখানে ওই দুই কৃষকের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও মারামারি হয়। পরে এ নিয়ে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এর জের ধরে আজ সকালে গ্রামের পশ্চিম বন্দে দুই পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

আস্তমা গ্রামের আঙ্গুর মিয়া বলেন, গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁদের গ্রামের বজলু মিয়া ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে মারধর করেন জমির মালিক কামরূপদলং গ্রামের সুরুজ মিয়া। এতে গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় কামরূপদলং গ্রামের নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন এসেছিলেন বিষয়টি সালিস মীমাংসার জন্য। গ্রামের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আজ সকালে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষ হয়।

কামরূপদলং গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে গতকাল বিকেলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল। আমরা চেয়েছিলাম বিষয়টি সালিসের মাধ্যমে শেষ করতে। কিন্তু আস্তমা গ্রামবাসী বিচার মানেননি। আজ সকালে তাঁরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেশি অস্ত্র নিয়ে আমাদের গ্রামের দিকে এগিয়ে আসে। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।’

সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আক্তার হোসেন ও দুলাল মিয়াকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া বাতির আলী, সুন্দর আলী ও সুজন মিয়াকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা শান্তিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কোনো আটক নেই। যদি কোনো পক্ষ মামলা করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র কর স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

এস আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামলা দুটি করেন। পরে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দুটি করা হয়েছে।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৪ আগস্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

মামলায় সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। আয়কর নথি অনুযায়ী করবর্ষ ২০১০-১২ এর রিটার্ন দাখিলের আগ পর্যন্ত তাঁর আগের সঞ্চয় ছিল ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা।

২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত অতীত সঞ্চয়সহ সাইফুল ইসলামের গ্রহণযোগ্য আয় ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৫ টাকা। এ সময় তাঁর মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৯৪০ টাকা।

অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পেয়েছে, সাইফুল আলম ৯৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৩৯৯ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।

অন্যদিকে, সাইফুল আলমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, তিনি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানার স্থাবর-অস্থাবর, ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৩ টাকা। তাঁর অতীত সঞ্চয়সহ গ্রহণযোগ্য আয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাকি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই, যা তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ সম্পদকে পাচার বলছে দুদক। বিদেশে সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার ওপর নির্ভর করে মামলার তদন্তে তা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ