তুরাগ তীরে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা
Published: 16th, February 2025 GMT
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মাওলানা সাদ কান্দলভী অনুসারীদের দ্বিতীয় পর্বের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা।
আজ রোববার দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১টা ৭ মিনিটে। আরবি ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত করা হয়।
মোনাজাতের দিন রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ হেদায়েতের বয়ান শুরু করেন। বাংলা তর্জমা করেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। হেদায়েতের বয়ান শেষ হলেই শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ।
এসময় ধনী-গরীর নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশা ও গোষ্ঠীর মানুষ আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিশাল জনসমুদ্র থেকে আকাশ কাঁপিয়ে ধ্বনিত হয় ‘ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ’। আখেরি মোনাজাতের সময় মুঠোফোন, বেতার, ওয়ারলেস সেট, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের ফলে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তুলেছেন আল্লাহর কাছে।
দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন টঙ্গীর এলাকায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ মহাসড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
এই পর্বে ৯ যুগলের যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়। বিয়ে পড়ান মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী, বর-কনের সম্মতিতে বর ও উভয় পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়ে থাকে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় মোহরে ফাতেমি’র নিয়মানুযায়ী। এতে মোহরানার পরিমাণ দেড়শ তোলা রুপা বা তার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নবদম্পতির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও খুরমা খেজুর এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার ৭০০ বিদেশি মেহমান উপস্থিত হন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, বাহরাইন, কম্বোডিয়া, কানাডা, চায়না, ফিজি, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুদান, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়া উল্লেখযোগ্য।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ ব ইজত ম আল ল হ ইউস ফ
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকার প্রো-বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে দাবি করে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, “বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে।”
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ওঠা প্রশ্নের ব্যাখ্যায় শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন।
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড শতাব্দী ধরে অসংখ্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাত মিলিয়েছে। একই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জাপানে বোমাবর্ষণ করেছিল, কিন্তু পরে তারা মিত্রে পরিণত হয়।”
আরো পড়ুন:
অবশেষে জিম্বাবুয়ে সিরিজ সম্প্রচারকারী চ্যানেল পেলো বিসিবি
পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতার বিষয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য নাকচ ভারতের
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কি পাকিস্তানপন্থী হয়ে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। এ ধরনের প্রশ্ন আমাদের মোটেও অবাক করেনি। এমন কিছু মানুষ সব সময়ই থাকবে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়ে খুব কমই বিশ্বাস করবে।”
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব বলেন, “আমাদের জবাব স্পষ্ট ছিল। অতীতে দেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যা–ই ঘটুক না কেন, এখন থেকে এটি বাংলাদেশপন্থী নীতি হবে, যা আমাদের নিজস্ব স্বার্থে পরিচালিত হবে।”
এক প্রতিবেশীকে খুশি রাখতে অন্য প্রতিবেশী থেকে দূরে সরে যাওয়া একটি স্বাধীন জাতির পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, “সফররত পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচকে দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার তার কথাগুলোকে কাজে রূপ দিতে ২৪ ঘণ্টার কম সময় নিয়েছে। একই সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মতি জানিয়েছে।”
আজাদ মজুমদার বলেন, “বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী একটি আবেগঘন বিষয় হলো ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য দেশটির পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি। এমনকি পাকিস্তানের সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বিশ্বাস করতেন, ক্ষমা চাওয়া-সদিচ্ছা ও উদারতার একটি কাজ হবে। কিন্তু পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর ও সামরিক আমলাতন্ত্র সর্বদা এই ধরনের কথার বিরোধিতা করেছে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো ক্ষমা চাওয়া হয়নি।”
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশ সম্পদের বিভাজনের বিষয়টির ওপরও জোর দিয়েছে, যা অতীতের শাসকদের কাছে ভুলে যাওয়া একটি বিষয় ছিল। অতীতে শাসকেরা এটি আলোচনার চেয়ে বিচ্ছিন্নতা পছন্দ করতেন।
তিনি বলেন, “১৯৭৪ সালের একটি অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন (৪৩২ কোটি) মার্কিন ডলার। অভ্যন্তরীণ মূলধন সৃষ্টি, বৈদেশিক ঋণ নিষ্পত্তি এবং বৈদেশিক আর্থিক সম্পদ ধরে রাখার অনুমিত হিসাবের ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়।”
আজাদ মজুমদার বলেন, “বাংলাদেশের আরো প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করেছে, যা ১৯৭০ সালের নভেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ/সংস্থা অনুদান দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের লাহোর শাখায় স্থানান্তরিত হওয়ার আগে এই অর্থ ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের অফিসে পড়ে ছিল।”
আজাদ মজুমদার তার পোস্টে উল্লেখ করেন, আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন আরেকটি বিষয় ছিল, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করেছিল। অতীতে পাকিস্তান তাদের লোকদের মাত্র এক লাখ ২৫ হাজার জন ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ১৪টি জেলার ৭৯টি শিবিরে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার জন ছিল।
তিনি বলেন, “এই বিষয়গুলোই দুই দেশের মধ্যে একটি সুস্থ ও ভবিষ্যৎমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম বিকল্প হলো আলোচনা এবং অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক এটাই করার চেষ্টা করছে। অনেক বছর পর বাংলাদেশ পাকিস্তানকে আলোচনায় এনেছে এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার পাশাপাশি যথাযথভাবে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছে।”
উপ-প্রেস সচিব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ডিসেম্বরে মিশরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে এক বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বালুচের সঙ্গে বৈঠক করার সময় তিনি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতের সুবিধার্থে অতীতের ইস্যুগুলো সমাধানের জন্য সম্ভবত এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের এক সঙ্গে কাজ করা ও এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।”
ঢাকা/হাসান/সাইফ