দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশ দেন। 

একইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেন তিনি। বক্তব্যের আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি।

সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মাঠ প্রশাসন সম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে মুক্ত আলোচনা হয় ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের। এ সময় সরকারের উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী, জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এবার সম্মেলনে ৩৫৪টি প্রস্তাব উঠছে। সম্মেলন শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার)।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সম্পর্কে প্রথম কার্য অধিবেশন হয়। অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। এবারের ডিসি সম্মেলনে ৩৪টি অধিবেশন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিন রয়েছে ছয়টি, দ্বিতীয় দিন ১২টি ও তৃতীয় দিন ১৬টি অধিবেশন। প্রথম দিন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা বিভাগের সঙ্গে দুটি অধিবেশন হবে।  

একইভাবে অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ডিসি-বিভাগীয় কমিশনাররা। এ সময় প্রতি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী, সচিব এবং অধিদপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। এবারের সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয় ও সংস্থা সম্পর্কে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা করবেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্তের মাত্র ৪৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আগের সরকারের অগ্রাধিকারমূলক অনেক বিষয় বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে না। এ কারণেই অনেক বিষয় কম বাস্তবায়ন হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদার করা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এ সম্মেলনে।

কয়েকজন ডিসি জানান, প্রতিবছর ঘটা করে ডিসি সম্মেলন করা হলেও এর সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন আটকে থাকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। বাস্তবায়নাধীন, চলমান অথবা বাস্তবায়ন হয়নি– এসব শব্দের আবরণে চাপা পড়ে ডিসি সম্মেলনে গৃহীত উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত। ফলে অন্য বছরের প্রস্তাবগুলো ঘুরেফিরে আবার এসেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কাগজে-কলমে প্রায় প্রতিবছরই ডিসি সম্মেলনে গৃহীত ৯০ শতাংশের বেশি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ চিত্র ৬০ শতাংশেরও নিচে বলে জানিয়েছেন এ বিভাগের এক কর্মকর্তা।

একজন জেলা প্রশাসক বলেন, ডিসিরা মাঠ প্রশাসনে কাজ করতে গিয়ে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন, সমাধানের জন্য তা সম্মেলনে তুলে ধরেন। এসব সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। কিন্তু যেসব সমস্যার সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রশাসন জড়িত, সেগুলোর বেশির ভাগই আটকে থাকে। ডিসিরা উদ্যম নিয়ে সম্মেলনে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। জেলার সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হয় না বলে জানা গেছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স ব যবস থ মন ত র সমস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি: সেলিমা রহমান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমরা সবাই মিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, দেশে সুন্দর একটি পরিবেশ আসবে, তাঁরা সুন্দর একটি নির্বাচন দেবেন। কিন্তু পতিত সরকারের দোসররা আজ দেশের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। সরকার তাদের কিছু করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। দেশের মানুষ আজ না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথাগুলো বলেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়। নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান। সমাবেশ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

সমাবেশে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা চাই এই সরকার ব্যর্থ না হোক। তাহলে আমরা ব্যর্থ হয়ে যাব। এ জন্য তারেক রহমান আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখুন।’

ফ্যাসিস্ট সরকার আর ফিরতে পারবে না—উল্লেখ করে সেলিমা রহমান বলেন, ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো দেশের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। তাঁরা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, ক্ষতির ষড়যন্ত্র করছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন কলেজে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে। ফ্যাসিস্টদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আগস্ট অভ্যুত্থানের শক্তি পড়ে গেছে। এটা তাঁদের বুঝতে হবে।

হাসিনা ভারতের সঙ্গে অসম বিভিন্ন চুক্তি করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দেশ ধ্বংস করেছে হাসিনা, দেশের টাকা লুট করে দেশের অর্থনীতি শেষ করে দিয়েছে হাসিনা। এখনো তারা ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হলে দরকার বিএনপি ও দেশপ্রেমিক জনতাকে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন, জবাবদিহিমূলক সরকার না হলে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, স্থিতিশীলতা আসে না।’ তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপি ১৬ বছর সংগ্রাম করেছে। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশ ফুঁসে উঠেছিল। এর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছিল।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, ‘হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে। আজও আমরা অপেক্ষায় থাকি আমাদের গুম হওয়া ভাইদের জন্য। বিএনপি যখন ১৬ বছর সংগ্রাম করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে শামিল হয়েছিল।’

মজিবর রহমান বলেন, ‘জনগণের কাছে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা চাই তারেক রহমানের অবিলম্বে দেশে প্রত্যাবর্তন। আমরা চাই, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাসিনার সরকারের হাজার হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার। আমরা চাই, দেশের সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করবে, রাজনীতি করবে।’

সমাবেশ শুরুর আগে বরিশাল জেলার সব উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগদান করেন নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহাবুবুল হক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শরফুদ্দিন আহমেদ, এবায়দুল হক, মোহাম্মদ দুলাল হোসেন, আবু নাসের রহমাতুল্লাহ, শহীদ হাসান প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মধ্যনগরে অনির্দিষ্টকালের ১৪৪ ধারা জারি
  • ‘বইয়ের অনুবাদ স্বত্ব কেনা মোটেও সহজ নয়’
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি: সেলিমা রহমান
  • ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ সারাদেশে গ্রেপ্তার ৬৮৪৯
  • এক সপ্তাহে অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে দুই দফা হামলা, থানায় জিডি
  • মহান শহীদ দিবসে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার র‍্যাবের
  • উত্তরায় কুপিয়ে জখমের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ২
  • আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতিতে নৈরাজ্য বাড়ছে: সাইফুল হক
  • কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের মামলা, আসামি অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০
  • শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় কুয়েট প্রশাসনের মামলা