যুক্তরাষ্ট্রের ২০ জন অভিবাসন বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে। কোনো ধরনের ব্যাখ্যা বা পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই তাদের বরখাস্ত করে ট্রাম্প প্রশাসন। এটি ফেডারেল সরকারের আকার কমানোর প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটে প্রেসের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাদ্যমগুলো এ খবর প্রকাশ করেছে।

আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অফ প্রফেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি ম্যাথিউ বিগস (যিনি অভিবাসন বিচারকদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি ইউনিয়নের প্রতিনিধি) বলেছেন, ১৩ জন বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে, যারা এখনও শপথ নেননি। এছাড়াও পাঁচ সহকারী প্রধান অভিবাসন বিচারককে গত শুক্রবার কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়েছে। একইভাবে আরও দুই বিচারককে গত সপ্তাহে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

ম্যাথিউ বিগস বলেন, এটি কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়, সত্যিই বিভ্রান্তিকর।

জানা গেছে, অভিবাসন আদালত ব্যাপকহারে অতিরিক্ত মামলার চাপে রয়েছে। যেখানে বর্তমানে ৩ দশমিক ৭ মিলিয়নেরও বেশি মামলা স্থগিত রয়েছে, যা দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে আশ্রয় আবেদন নিষ্পত্তিতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অভিবাসন পর্যালোচনা কার্যনির্বাহী অফিসে বড় পরিবর্তন হয়েছে, যার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মেরি চেংয়ের পরিবর্তে নতুন পরিচালক হিসেবে সির্সে ওউয়েনের নিয়োগ অন্তর্ভুক্ত। সাবেক অভিবাসন বিচারক ওউয়েন অনেক নতুন নীতি প্রণয়ন করেছেন।

সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত অভিবাসন বিচারক কেরি ডয়েল লিংকডইনে উল্লেখ করেছেন, তিনিসহ অন্যান্য বাইডেন প্রশাসনের আমলে নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের গত শুক্রবার ই-মেলের মাধ্যমে বরখাস্তের খবর জানানো হয়।

এ নিয়োগের আগে ডয়েল বাইডেন প্রশাসনের অধীনে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ডেপুটি জেনারেল কাউন্সিলর পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি তার নিজের লিংকডইন পোস্টে উল্লেখ করেন, এই বরখাস্তের ঘটনা এমন সময় ঘটলো, যখন অভিবাসন আদালতে প্রায় ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন মামলা স্থগিত রয়েছে। বিচার বিভাগের (ডিওজে) পক্ষ থেকে কংগ্রেসের কাছে ইওআই আর এতে আরও লোক নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত বাজেট চাওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব চ রকক

এছাড়াও পড়ুন:

'দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গ্যালো। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ