ভারতের রাজধানী দিল্লির প্রধান রেলস্টেশনে শনিবার রাতে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অন্তত ১৮ জন মারা গেছেন।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আজ রোববার ভোরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং এএফপি একে পদপিষ্টের ঘটনা বলে বর্ণনা করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় শনিবার রাত আটটার দিকে দিল্লি রেলস্টেশনের দুটি প্ল্যাটফর্মে ওই ঘটনা ঘটে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে (সাবেক এলাহাবাদ) কুম্ভমেলা চলছে। ওই মেলায় যোগ দিতে যাওয়ার জন্য শনিবার বহু মানুষ দিল্লির রেলস্টেশনটিতে জড়ো হয়েছিলেন। ট্রেন আসার পর লোকজন হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করলে হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই হিন্দু পুণ্যার্থী। তাঁরা মহাকুম্ভে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।

১২ বছর পরপর ভারতের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। কোটি কোটি মানুষ ওই মেলায় যোগ দিতে আসেন।

ভিড়ের চাপে সেখানে মাঝেমধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটে। যেমন গত মাসে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সংগমস্থলে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ৩০ জন মারা যান।

শনিবার রাতে হুড়োহুড়ির ঘটনার পর হতাহত ব্যক্তিদের বেশ কয়েকজনকে দিল্লির লোক নায়ক হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালটির উপাধ্যক্ষ ডা.

ঋতু সাক্সেনা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি এই হাসপাতালে ১৫ জনের মৃত্যুর হওয়ার খবর নিশ্চিত করছি। তাঁদের কারও শরীরে আপাতদৃষ্টে কোনো ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়নি। বেশির ভাগই খুব সম্ভবত অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হয়ে অথবা ভোঁতা কোনো কিছুর আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। ময়নাতদন্তের পর তাঁদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে।’

আরও পড়ুনমহাকুম্ভে যে কারণে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে২৯ জানুয়ারি ২০২৫

হাসপাতালটিতে আহত আরও ১১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন এই চিকিৎসা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আহতদের বেশির ভাগের অবস্থাই স্থিতিশীল, তাঁরা হাড়ে আঘাত পেয়েছেন।’

স্থানীয় অন্য একটি হাসপাতালে আরও তিনজন মারা গেছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে এনডিটিভি। এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি এ খবর দিয়েছে বলে এএফপি জানিয়েছে।

এ ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্সে এক পোস্টে মোদি লেখেন, ‘যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আমি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’

রেলওয়েমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের ভিড় কমিয়ে আনতে দিল্লি থেকে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের এই মেলায় খরচ ৭ হাজার কোটি রুপি, ৪০ কোটি মানুষ অংশ নিতে পারেন১২ জানুয়ারি ২০২৫

গত মাস থেকে কুম্ভমেলা শুরু হয়েছে। ছয় সপ্তাহ ধরে এই মেলা চলে। কুম্ভমেলা শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে ৫০ কোটি মানুষ এই মেলায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।

১৯৫৪ সালে কুম্ভমেলায় এক দিনে চার শতাধিক মানুষ পদপিষ্ট হয়ে অথবা ডুবে মারা গিয়েছিল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদপ ষ ট র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

কীর্তনখোলার তীর থেকে উদ্ধার সেই শিশু ফিরল মায়ের কোলে

বরিশাল নগরীর উপকণ্ঠে কীর্তনখোলার তীর থেকে উদ্ধার পরিচয়হীন সেই নবজাতক ফিরেছে আপন ঠিকানায়। বাবার কোলে চড়ে গত রোববার রাতে ঢাকা থেকে বাগেরহাটে মায়ের কোলে পৌঁছে। তবে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় শিশুটিকে বাড়ি ফিরতে হয়।

শিশুটির বাবা বাগেরহাট শহরে ফুটপাথের চা দোকানি গণেশ শ্যাম আজ বুধবার বিকেলে সমকালকে বলেন, গত রোববার দুপুরে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। রাতে তিনি ও তার শাশুড়ি সুমি দাস বাসে শিশুটিকে নিয়ে বাগেরহাটের ফেরেন। 

রিলিজ দেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গণেশ জানান, শিশুটির পিঠের টিউমার নিরসনে অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু, একমাস বয়স হওয়ার আগে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। যেহেতু শিশুটির বয়স এক সপ্তাহ, তাই আরও তিন সপ্তাহ পর ঢামেকে ভর্তির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

শিশুটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বাবা গণেশ বলেন, পিঠের টিউমার থেকে পানি বের হচ্ছে। বাগেরহাটের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু, ঈদের ছুটি হওয়ায় চিকিৎসক পাচ্ছি না।

গত ২২ মার্চ রাত ১২টার দিকে বরিশাল নগরীর কীর্তণখোলার তীরে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় পরিত্যক্ত বাথরুমে অজ্ঞাত হিসেবে শিশুটি উদ্ধার হয়। স্থানীয় ফুচকা বিক্রেতা পারভীন বেগম শিশুটি উদ্ধার করে বরিশাল শের-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান। গত ২৮ মার্চ শিশুটির অভিভাবকের সন্ধান পাওয়া যায়। তার আগের দিন উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর ও শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে শিশুটিকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

বাবা গণেশ দত্ত জানান, বরিশাল নগরীর সদর রোড মোখলেসুর রহমান ক্লিনিকে ২১ মার্চ তার স্ত্রী অন্তরা দাস শিশুটির জন্ম দেন। এটি তাদের প্রথম সন্তান। জন্মের পর শিশুটির পিঠে টিউমার ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিনই নবজাতককে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলো। ব্যয়বহুল চিকিৎসা ও পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ার আশঙ্কায় ২২ মার্চ দুপুরে ওয়ার্ডে বসেই শিশুটিকে এক রিক্সাচালকের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর আর কিছু তাদের জানা নেই।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউর মুনীর জানান, শিশুটির পিঠে মেরদণ্ডের টিসু থেকে টিউমারের উৎপত্তি হয়েছে। এটি পুরোপুরি ভাল হওয়ার সম্ভাবনা কম। চিকিৎসাও অনেক ব্যয়বহুল। তিনি জানান, শিশুটি দত্তক নিতে অনেকে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তবে শারীরিক অবস্থা দেখে ফিরে যান। বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজও জানান, শিশুটির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ