আমার কবিতা চায় মৃত্যুর গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে: আশরাফ জুয়েল
Published: 16th, February 2025 GMT
আশরাফ জুয়েল পেশায় চিকিৎসক আর নেশায় লেখক। কবিতা ও গল্প লিখে চলেছেন সমান্তরালে। তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘রাষ্ট্রধারণার বিরুদ্ধে মামলা ও বিবিধ গল্প’ জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত এবং পাঠক ও সমালোচক মহলে বেশ সমাদৃত৷ এই লেখক পশ্চিমবঙ্গ থেকে অর্জন করেছেন ‘ইতিকথা মৈত্রী সাহিত্য সম্মাননা ২০১৭’। অমর একুশে বইমেলায় আশরাফ জুয়েলের কবিতার বই ‘কবিরা আজীবন বিরোধী দল’ প্রকাশিত হয়েছে। নতুন বইয়ের প্রেক্ষাপটসহ নানা বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন আশরাফ জুয়েল। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।
রাইজিংবিডি: পেশাগত জীবনে আপনি মানুষের মৃত্যু এবং বেঁচে থাকার আকুতি খুব কাছ থেকে দেখেন— এই দেখা আপনার ভাবনায় কতটা প্রভাব ফেলে?
আশরাফ জুয়েল: পেশাগত জীবনে মানুষের মৃত্যু এবং বেঁচে থাকার সংগ্রাম প্রত্যক্ষ করা একটি গভীর দার্শনিক ও মানবিক অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এটি শুধু চিকিৎসক হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবেও আমাকে প্রতিদিন নতুনভাবে ভাবায়। এই অভিজ্ঞতার প্রভাবকে কয়েকটি স্তরে বোঝার চেষ্টা করি। নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র-তে প্রতিদিন দেখি, কীভাবে একটি শ্বাস-প্রশ্বাস, একটি হৃদস্পন্দনই জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দেয়। এটা আমাকে শেখায় যে জীবন অতিক্ষণস্থায়ী এবং অবিশ্বাস্য রকমের মূল্যবান। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক দূর এগোলেও, কিছু পরিস্থিতিতে আমরা সম্পূর্ণ অসহায়—যেমন একটি দুরারোগ্য ক্যান্সার বা অপ্রত্যাশিত অর্গান ফেইলিউর। এই ‘নিয়ন্ত্রণহীনতা’ আমাকে শিখিয়েছে যে নম্রতা এবং বিশ্বাস (যেমন রোগীর পরিবারের প্রতি, নিজের দক্ষতার প্রতি) একসাথে বহন করতে হয়। কখনো কখনো এটা কঠিন, কিন্তু এটাই বাস্তবতা। মৃত্যু একটি মানবিক ইতিবৃত্ত। প্রতিটি মৃত্যু আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে আমরা সবাই এই যাত্রাপথের যাত্রী মাত্র। এর প্রভাবে আমি মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার চেয়ে জীবনের সম্পূর্ণতা নিয়ে ভাবতে শিখেছি। রোগীর কষ্ট বা পরিবারের কান্না দেখলে হৃদয় সাড়া দেয়, কিন্তু পেশাদারিত্বের দাবি হলো আবেগকে সিদ্ধান্তে বাধা হতে না দেওয়া। এই দ্বন্দ্ব আমাকে মানবিক থাকার নতুন সংজ্ঞা শিখিয়েছে—যেখানে সহমর্মিতা ও যুক্তিবাদ একসাথে চলতে পারে। কখনো কখনো এই ভারসাম্য ভাঙে, তখন নিজেকে পুনরায় গুছিয়ে নিতে হয়। নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে কিছু রোগী অলৌকিকভাবে সুস্থ হন, আবার কেউ কেউ চলে যান সব চেষ্টা সত্ত্বেও। এই দোলাচল আমাকে শিখিয়েছে যে আশা কখনো ত্যাগ করা যায় না, কিন্তু বাস্তবতাকেও স্বীকার করতে হয়। এই দ্বৈততা মেনে নেওয়াই হয়তো এই পেশার সবচেয়ে বড় শিক্ষা। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে জীবন ও মৃত্যু একই মুদ্রার দুই পিঠ। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার ভূমিকা হলো এই মুদ্রাটিকে সম্মান করা—যতক্ষণ সম্ভব জীবনকে সহায়তা করা, আর যখন সময় আসে, মৃত্যুকে মর্যাদা দেওয়া। এই যাত্রা কঠিন, কিন্তু এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে অর্থের খোঁজ।
রাইজিংবিডি: ‘কবিরা আজীবন বিরোধী দল’—নামটি আপনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অবস্থানের জানান দিচ্ছে কি? এই বইয়ে কেমন কবিতা স্থান পেয়েছে। এগুলোর সৃষ্টিকাল জানতে চাই।
আরো পড়ুন:
বইমেলায় কামরান চৌধুরীর ২য় গল্পগ্রন্থ ‘কমলা রোদ্দুর’
জনবিচ্ছিন্ন হয়ে লেখার বিলাসিতা আমার নেই: কিযী তাহ্নিন
আশরাফ জুয়েল: আমি হিসাব করে দেখলাম, রাজনৈতিকভাবে আমি সচেতন হতে আরম্ভ করেছি, যখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। সেই সময় হাতের কাছে বই না থাকার ফলে পত্রিকা পড়তাম, পুরনো, নতুন। এমনও হয়েছে একই পত্রিকা কয়েকবার পড়েছি। মানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, ধরে নিলাম বিজ্ঞপ্তি থেকে আরম্ভ করে, সিনেমার খবর, বাড়ি ভাড়া বা গাড়ি বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন থেকে সিনেমার খবর, কলাম বা খেলার পাতা- সবই। হয়ত এই কারণেই আমি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠেছি। এবং আজ অবধি প্রায় সারাজীবন আমার অবস্থান বিরোধীদের পক্ষেই। কারন জুলুম, নির্যাতন, বঞ্চনার শিকার কিন্তু সবসময়ই বিরোধীদেরই সইতে হয়। আমার মতে বিরোধী অবস্থানে থাকা বলতে সাধারণত কোনো নীতি, সিদ্ধান্ত, বা কর্তৃত্বের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াকে বোঝায়। ধরেন, মহাত্মা গান্ধীর ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলন। ৫২ ভাষা আন্দোলনের বিরোধীপক্ষ কারা ছিলো, যদি সেইসময় বিরোধিতা না করা হতো তাহলে এই যে বাংলায় কথা বলছি, সেটাও হয়ত আদায় হতো না। ১৯৬০-এর দশকে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের নেতৃত্বে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবার ফলেই না আজ কালো মানুষরাও ফিরে পেয়েছেন তাদের অধিকার। বা ধরা যাক, ছোট্ট একটি মেয়ে, মালালা ইউসুফজাই পাকিস্তানে নারী শিক্ষার বিরোধী নীতির বিপক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন। কারখানার মালিকের বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ধর্মঘট বা প্রতিবাদ,এবং আদায় এটাও কিন্তু সেই বিরোধী অবস্থানে থেকেই আদায় করে নিতে হয়। অথবা এই যে বাংলাদেশেই, কত তরুণ বিরোধিতা করেই জীবন বিলিয়ে দিলো, আদায় করে নিলো তদের চাওয়া। আসলে বিরোধিতা ব্যতীত কোনোকিছুই আদায় করা যায় না। আমাদের ধর্মসহ প্রায় প্রত্যেক ধর্মই কিন্তু সাম্যের কথা বলে, সহাবস্থানের কথা বলে, বলে ন্যায়ের পক্ষ এবং অন্যায়ের বিপক্ষে একজন সত্যিকারের মানুষের অবস্থানের কথা, কবি হিসেবেও আমার কবিতায় আমি এসবই বলেছি।
কবিরা আজীবন বিরোধীদল বই, মূলত মানুষের প্রতি মানুষের বৈরী মনোভাবের বিরুদ্ধে একজন মানুষের অবস্থান, এখানে কবি বলতে আসলে আমি প্রতিটি অত্যাচারিত মানুষকেই বুঝিয়েছি। আসলে আমরা সবাই কবি, আমাদের স্মৃতিতে ক্ষণে ক্ষণে না পাবার বেদনা, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি, হারানোর কষ্ট লিপিবদ্ধ করেই চলেছি, কেউ সেগুলো প্রকাশ করছে লেখায়, কেউ করছে বইয়ে। বইয়ে মোট ৫২টি কবিতা স্থান পেয়েছে যেগুলো গত আট বছর ধরে লেখা। উল্লেখ্য আমার সর্বশেষ কবিতার বই এসছিলো ২০১৬ সালে।
রাইজিংবিডি: আপনার কবিতায় প্রতিশোধের বার্তা আছে আবার কিছুদূর এগিয়ে নিজেকে থামিয়ে দেবারও তাড়না আছে, যদি বলি ‘বাঁ তর্জনীর নখ কেটে ফেলার পর/ভাবলাম, থাক না …’—। আপনার কবিতাভাবনা জানতে চাই।
আশরাফ জুয়েল: আমার কবিতায় প্রতিশোধ এক অগ্নিগর্ভ মেঘের মতো, যা বিদ্যুৎ কেটে কেটে অন্ধকারে জবাব চায়—কিন্তু সেই আগুনের গুড়িগুলো শেষমেশ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে মাটির গহ্বরে। নিঃশব্দের ভিতরে যত চিৎকার জমে, তারই পাঁজরে আমার কবিতা হাতড়াই শান্তির শব্দমালা। আমি লিখি ক্ষতের ভাষায়, কিন্তু ক্ষত দিয়ে লেখা শব্দগুলো হঠাৎ কখনও কখনও থমকে যায় এক চিলতে আলোর সামনে—যেন ছুরির ফলায় আটকে যায় আয়না, আর রক্তের ছাপে ফুটে ওঠে নিজের মুখ। প্রতিশোধের খড়গ চাইলে তো শুধুই মৃত্যু, কিন্তু আমার কবিতা চায় মৃত্যুর গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে—যে স্পর্শে মৃত্তিকা জেগে ওঠে অঙ্কুরের গন্ধে, আর আমার কবিতায় প্রতিপক্ষের নাম লিখি সময়ের শিরার ভিতরে। নিজেকে থামিয়ে দেওয়ার তাড়না আসে যখন বুঝি— প্রতিশোধের বীজ বুনলে ফসল ফলবে বিষের, আমারই জিহ্বায় জমবে লবণের স্বাদ, আমারই চোখে মিলিয়ে যাবে দর্পণের প্রতিচ্ছবি। তাই আমার লেখায়, বিশেষত কবিরা আজীবন বিরোধীদল বইয়ে আমি শব্দকে অস্ত্র হিসেবে তুলে নিয়েছি, আমার কবিতা কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে পাথর ছোঁড়ে না—পাথরে গেঁথে দেয় ফুলের বাগান। ক্ষমা নয়, আমার কবিতা সন্দধান করে ক্ষমার চেয়েও বড় কোনো গহীন নদীর— যেখানে ডুবে যাওয়া মানে ভেসে ওঠা সম্ভাবনার নতুন কোনো তীরে।
রাইজিংবিডি: পড়া এবং লেখার সময়টা কীভাবে ভাগ করেন?
আশরাফ জুয়েল: পড়া এবং লেখার মধ্যে সময়ের ভারসাম্য একটি গতিশীল প্রক্রিয়া, যা একজন লেখকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার সৃজনশীল উদ্দেশ্য, শেখার পর্যায় এবং দৈনন্দিন জীবনের ছন্দের ওপর নির্ভর করে এতে ভিন্নতা আসে। ভার্জিনিয়া উলফ বলেছেন, ‘লেখার টেবিলে বইগুলোই আমার নীরব সহযোগী।’ কিন্তু এই ফেসবুক-মিম আর এক্সের যুগে পড়ার সময় ছিনিয়ে নিয়েছে ইন্টারনেট। সাথে পেশাগত ব্যস্ততাও আছে। আগের মতো পড়তেও পারিনা, অথচ খুব ইচ্ছে হয় কোন এক সুনশান পাহাড়ি নদীর তীরে একটা ছোট্ট ঘর, নদীমুখো একটা জানালার পাশে একটা টেবিল! সাথে আকাঙ্ক্ষার কমনীয় স্নিগ্ধ নারী, আহা হয়ত স্বপ্নই থেকে যবে। আসলে পড়া এবং লেখা একে অপরের প্রতিপক্ষ নয়—একটি অদৃশ্য সেতু। সময় ভাগ করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কীভাবে পড়া আপনাকে লেখায় উৎসুক করে, আর লেখা আপনাকে পড়ার গভীরে টেনে নিয়ে যায়।
রাইজিংবিডি: বই প্রচারে লেখকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?
আশরাফ জুয়েল: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বই প্রচার নিয়ে অনেক রকম উদ্যোগ দেখা যায়। এই উদ্যোগে লেখকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকাশক বা বিপণন টিমের ওপর পুরো দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার চেয়ে লেখকের সক্রিয় অংশগ্রহণ বইটিকে সফল করতে পারে। পাঠকদের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন (ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদির মাধ্যমে) করা যেতে পারে। বইয়ের উধ্বৃতি, চরিত্র বা কাহিনি সম্পর্কে নিয়মিত পোস্ট শেয়ার করা। লাইভ সেশন, Q&A, বা ভার্চুয়াল বই আলোচনায় অংশগ্রহণ করা। ব্যক্তিগত উপস্থিতি ও ইভেন্ট, বইমেলায় অংশগ্রহণ, সাইনিং সেশন, বা সাহিত্য উৎসবে যোগ দেওয়া। স্থানীয় লাইব্রেরি, স্কুল, বা কমিউনিটিতে বই নিয়ে আলোচনা করা, পাঠকদের সাথে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, পত্রিকা, ব্লগ, পডকাস্ট, বা YouTube চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেওয়া। বইয়ের পিছনের গল্প, লেখার প্রেরণা, বা চ্যালেঞ্জগুলো শেয়ার করা। অন্যান্য লেখক, বুক ব্লগার, বা ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে যৌথ প্রচারণা (যেমন: গেস্ট ব্লগিং, সমন্বিত ইভেন্ট) চালানো। গুডরিডস, অ্যামাজন রিভিউ, বা অনলাইন কমিউনিটিতে পাঠকদের রিভিউ লেখার জন্য উৎসাহিত করা।
লেখক শুধু লেখক নন, তাকে একজন স্টোরিটেলার ও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করতে হয়। পাঠকদের সাথে সংযোগ, সৃজনশীল মার্কেটিং, এবং আত্মবিশ্বাসী উপস্থাপনা একটি বইকে দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য দিতে পারে। প্রচারে লেখকের নিজস্ব স্বকীয়তা ও আন্তরিকতাই পাঠকদের আকর্ষণের অন্যতম চাবিকাঠি। তবে খেয়াল রাখতে হবে, প্রচারণার সময় বইয়ের মূল বার্তা বা শৈল্পিক মূল্যবোধের সাথে সমঝোতা না করা এবং পাঠকের প্রত্যাশা ও প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দেওয়াও জরুরি।
রাইজিংবিডি: প্রকাশনীগুলোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আশরাফ জুয়েল: প্রকাশনা শিল্প এখনো এদেশে বিকাশমান শিল্প। আমরা সবাই শিখছি- লেখক, প্রকাশক সবাই। আমার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা খারাপ নয়। লেখক- প্রকাশক সম্পর্ক থাকা উচিৎ সবচেয়ে মধুর এবং বিশ্বাসের। আমরা এই জায়গায় পেশাদ্বারিত্বের নিরিখে অনেক পিছিয়ে আছি। তবে এই অবস্থার উন্নতি ঘটছে এবং সকলের অংশীদারিত্বে উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটবে। মনে রাখতে হবে একজন ভালো লেখক তৈরিতে একজন ভালো প্রকাশকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আশর ফ জ য় ল অবস থ ন আম র ক বইয় র আপন র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
আমাকে কেন বাজে কথা শুনতে হলো, প্রশ্ন কাজী মারুফের
গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে সিনেমা দেখে বের হওয়ার সময় বরেণ্য নির্মাতা কাজী হায়াতের গাড়ি আটকে রাখেন শাকিব ভক্তরা। এরপর কাজী হায়াৎ গাড়ি থেকে নেমে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে ‘তুমি কে আমি কে, শাকিবিয়ান, শাকিবিয়ান’ বলে স্লোগান দিতে থাকে তারা। কেবল তাই নয়, এই পরিচালকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় শাকিব ভক্তদের।
এ ঘটনার পর ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ করেন কাজী হায়াতের পুত্র চিত্রনায়ক কাজী মারুফ। প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী, ডিপজলও। তারপরও কাজী মারুফ, কাজী হায়াতকে নিয়ে ট্রল করছেন নেটিজেনরা। এসব নজরে পড়েছে আমেরিকা প্রবাসী কাজী মারুফের। ফের এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
কাজী মারুফ বলেন, “আমি আমেরিকার নিউ ইয়র্কে বসবাস করি। আমি কি বাংলাদেশ সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য? আমি কি ‘বরবাদ’ সিনেমার কেউ? কার সিনেমা আসলো কার আসলো না এতে আমার কি কোনো লাভ-ক্ষতি আছে? আমি কি কোনো সিনেমার প্রমোশনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত? আমার কি কোনো সিনেমা এই ঈদে বা আগামী ঈদে মুক্তি পাচ্ছে? তাহলে আমাকে কেন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মানুষের বাজে কথা শুনতে হলো?”
আরো পড়ুন:
জটিলতা কাটিয়ে আসছে ‘কৃষ-ফোর’, নয়া অবতারে হৃতিক
এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক-নিন্দনীয়, কাজী হায়াৎ প্রসঙ্গে ডিপজল
কাজী হায়াতের হার্টে ৯টি রিং পরানো হয়েছে। বাবার অসুস্থতার তথ্য জানিয়ে কাজী মারুফ বলেন, “৭৮ বছর বয়সি একজন মানুষ কাজী হায়াৎ(আমার বাবা)। একবার স্ট্রোক করেছে, একবার ওপেন হার্ট করা, ৯টা রিং পড়ানো একজন মানুষ, তার গাড়ি আটকানো কেন হলো? সেন্সর বোর্ডে কি উনি একাই ছিলেন সদস্য? সিনেমার পরিচালক/প্রযোজক, বোর্ডের সদস্যদের সাথে কেন ভিতরে মিটিং করলো না? তবে কি এটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল?”
শাকিব খান অভিনীত আলোচিত সিনেমা ‘বরবাদ’। ঈদুল ফিতরে সিনেমাটির মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার সিনেমাটির প্রদর্শনী দেখতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে যান নির্মাতা ও বোর্ড সদস্য কাজী হায়াৎ। আর সেদিন দুপুরে আনকাট সেন্সর সার্টিফিকেটের দাবিতে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সামনে মানববন্ধন করেন শাকিবভক্তরা। সেখানে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
ঢাকা/শান্ত