আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে সাদ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা
Published: 16th, February 2025 GMT
গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগ তীরে মাওলানা সাদ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। রোববার দুপুর ১২টায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা সাদের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।
বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সকাল সাড়ে ৯টায় মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ সাহেব হেদায়েতের বয়ান শুরু করেন, যার বাংলা তরজমা করেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। হেদায়েতের বয়ান শেষে শুরু হবে আখেরি মোনাজাত।
এদিন আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত করেছেন।
এ পর্বের আখেরি মোনাজাত আরবি ও উর্দু ভাষায় পরিচালিত হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল বাদ ফজর তাবলিগের ছয় উসুলের ওপর বয়ান করেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ, যার তরজমা করেন মাওলানা ওসামা ইসলাম। এছাড়া দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আলোচক বয়ান পেশ করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৫০টিরও বেশি দেশের প্রায় ১,৭০০ বিদেশি মেহমান উপস্থিত হয়েছেন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, বাহরাইন, কম্বোডিয়া, কানাডা, চীন, ফিজি, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুদান, থাইল্যান্ড ও তিউনিশিয়া থেকেও সাদ অনুসারীদের আসতে দেখা যায়।
বিদেশি মেহমানদের জন্য ইজতেমা ময়দানে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে পৃথক তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে বিশ্ব ইজতেমার এবারের আয়োজন শেষ হলেও, আগামী বছর নতুন উদ্দীপনায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহৎ এই ধর্মীয় সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি আবারও শুরু হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইজত ম স দপন থ ব শ ব ইজত ম র অন স র
এছাড়াও পড়ুন:
কোরআনের বিষয়ভিত্তিক অনুবাদ
বাংলা ও ইংরেজিসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কোরআন শরিফের তরজমা বা অনুবাদ হয়েছে। এসব অনুবাদের বিভিন্ন ধরনও আছে। কিছু অনুবাদ আরবি থেকে সরাসরি হয়েছে, কিছু অনুবাদ আবার অনুবাদের অনুবাদ। যেমন: বাংলা ভাষায় প্রচলিত তরজমাগুলোর একটা বড় অংশই কোরআনের উর্দু তরজমার সাহায্যে করা হয়েছে। আবার কোরআনের কিছু অনুবাদে টীকা বা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা যুক্ত করা হয়েছে স্পষ্টীকরণের জন্য। কিছু অনুবাদ তাফসিরভিত্তিক বা বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক বা কোরআনে আলোচিত বিভিন্ন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েও অনুবাদ করা হয়েছে। ড. মুস্তাফা খাত্তাবের দ্য ক্লিয়ার কোরআন: আ থিমেটিক ইংলিশ ট্রান্সলেশন সে রকমই একটি অনুবাদ যা প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
এই অনুবাদে কোরআনের তিনটি প্রধান বিষয়কে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—
(১) উপদেশ-নির্দেশ, (২) ঘটনা-কাহিনি এবং (৩) অদৃশ্য বা গায়েবি বিষয়।
আরও পড়ুনহজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা–জীবন২৫ নভেম্বর ২০২৩প্রথমটিতে প্রধানত মুসলমানদের সঙ্গে আল্লাহর, অন্যান্য মানুষের ও আল্লাহর বাকি সৃষ্টির সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক আলোচিত হয়েছে। যেমন: ইবাদত, পারিবারিক সম্পর্ক ইত্যাদি। দ্বিতীয়টিতে হজরত আদম (আ.), ইব্রাহিম (আ.), মুসা (আ.) ও আরও কয়েকজন নবী-রাসুলের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এর একাধিক উদ্দেশ্য আছে। প্রথমত, ইসলাম প্রচারকালে মুহাম্মদ (সা.) যখন কাফেরদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছিলেন, তখন তাঁকে আশ্বস্ত করা এবং কাফেরদেরও সতর্ক করা। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন কাহিনির মধ্যে মুসলমানদের নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া। সর্বশেষ গায়েবি বা অদৃশ্য বিষয়ের মাধ্যমে একজন মুসলমানকে এটা বোঝান যে আল্লাহ, তাঁর গুণাবলি, তাঁর ফেরেশতাকূল, কেয়ামতের পর পুনরুত্থান ও শেষ বিচারসহ বিভিন্ন অদৃশ্য বিষয়গুলো চোখে না দেখেই অন্তর থেকে বিশ্বাস করতে হবে। তা না হলে সে সত্যিকার ইমানদার মুসলমান হতে পারবে না।
বইটিতে কোরআনের ১১৪টি সুরার মধ্যে উক্ত তিনটি বিষয়ের কোনটি বা কোন কোনটির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, তার একটি প্রতীকযুক্ত তালিকা দেওয়া আছে প্রথমে। যেমন: সুরা বাকারায় তিনটি বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আবার, সুরা ইয়াসিনে কাহিনি ও গায়েবি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।
আরও পড়ুনহজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনা–জীবন০২ ডিসেম্বর ২০২৩সুরার ভেতরে আলোচিত ও বর্ণিত বিষয়গুলোর সার-সংক্ষেপ প্রতিটি সুরার শুরুতে দেওয়া হয়েছে। তারপর বিভিন্ন আয়াতের অনুবাদের পাশাপাশি আয়াতগুলোর মূল কথা একবাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: সুরা আল-আরাফের (৭ম সুরা) ১০ থেকে ১৮ আয়াতের মূল কথা হলো: ‘শয়তানে ঔদ্ধত্য।’
সহজ ইংরেজিতে করা এই অনুবাদের অন্যতম লক্ষ্য হলো, পশ্চিমা দুনিয়ায় ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের মাঝে ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ও বিকৃতি ধারণা অবসানে সহযোগিতা করা। সে কারণে, কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন নবী-রাসুলের নাম বাইবেলের প্রচলিত নামানুসারে অনুবাদ করা হয়েছে। যেমন: সুরা ইউসুফের ক্ষেত্রে মূল নামের পাশাপাশি ’জোসেফ’ উল্লেখ করা হয়েছে।
সর্বোপরি প্রারম্ভে কোরআনের কাঠামো, ভাষা শৈলী ও গুরুত্বের ওপরে আলোকপাত করা হয়েছে এবং পাশ্চাত্য জগতের ইসলামভীতি ও ইসলামবিদ্বেষ বিষয়ক কিছু প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। তরজমাটি মিশরের আল-আজহার ইসলামিক রিসার্চ একাডেমি থেকে অনুমোদিত হয়েছে। আর মুদ্রিত হয়েছে তুরস্ক থেকে।
দ্য ক্লিয়ার কোরআন: আ থিমেটিক ইংলিশ ট্রান্সলেশন; ড. মুস্তাফা খাত্তাব; বুক অব সাইনস ফাউন্ডেশন, আমেরিকা, ২০১৬।
আরও পড়ুনপ্রাঞ্জল বাংলা অনুবাদে কোরআন১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫