নাহিদ আহ্বায়ক, সদস্যসচিব পদে আলোচনায় তিনজন
Published: 16th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম চূড়ান্ত হতে পারে চলতি সপ্তাহে। আর এ মাসের শেষ সপ্তাহে দলটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে দলটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন মো. নাহিদ ইসলাম।
তবে নতুন দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে (সদস্যসচিব) কে আসছেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই পদের জন্য আলোচনায় আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃস্থানীয় দুজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নাহিদ ইসলাম নতুন দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে বা তার পরের সপ্তাহে সরকার থেকে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকছেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাঁরা এখনই নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন না।
ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে দলের নামসহ অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এরপর এই মাসের শেষ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে দলের যাত্রা শুরু হবে। দিনটি হতে পারে ২৫ ফেব্রুয়ারির আগে বা পরে। নতুন দলের যাত্রা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকছেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাঁরা এখনই নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন না।১৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যেকোনো দিন নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে গত শুক্রবার প্রথম আলোকে জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। অন্যদিকে সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষাংশে দলের ঘোষণা আসতে পারে।
নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, নতুন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে কে আসছেন, তা নিয়ে একধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। প্রধান দুটি পদের বাইরে অন্য শীর্ষ পদগুলোতে ‘পছন্দের নেতাদের’ বসাতে তৎপর নাগরিক কমিটির বিভিন্ন অংশ। বিশেষ করে নাগরিক কমিটিতে থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা এ ব্যাপারে বেশ সক্রিয় বলে জানা গেছে। জাতীয় নাগরিক কমিটিতে মধ্যপন্থী ও বামধারার নেতারাও রয়েছেন। তাঁরা চান, প্রধান দুটি পদের বাইরে শীর্ষ পর্যায়ের অন্য পদগুলোতে নিজেদের ‘পছন্দের নেতারা’থাকুক।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, শীর্ষ পদে নাহিদ ইসলামকেই সবার পছন্দ। দ্বিতীয় শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন আখতার হোসেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সারজিস আলম।
এই মাসের শেষ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে দলের যাত্রা শুরু হবে। দিনটি হতে পারে ২৫ ফেব্রুয়ারির আগে বা পরে। নতুন দলের যাত্রা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে হতে পারে।দল নিয়ে জনমত জরিপনতুন দলের বিষয়ে জনমত জরিপ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই কর্মসূচির নাম ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’। এই জরিপ হচ্ছে অনলাইনে। এর পাশাপাশি জেলায়-জেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত (প্রশ্নোত্তর) সংগ্রহ করা হচ্ছে। জরিপে মানুষ ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, শীর্ষ পদে নাহিদ ইসলামকেই সবার পছন্দ। দ্বিতীয় শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন আখতার হোসেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সারজিস আলম।জরিপে মানুষের কাছে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়েছে। এগুলো হলো: ১.
জরিপে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নতুন দলের জন্য বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করছেন। এসব নামের মধ্যে কিছু সাধারণ কি-ওয়ার্ড পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। তবে এখনো নাম চূড়ান্ত হয়নি।
এই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে যেকোনো দিন দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা ভাবা হচ্ছে।সামান্তা শারমিন, মুখপাত্র, জাতীয় নাগরিক কমিটিএ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ কি-ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে বেশি এসেছে ‘গণতন্ত্র’, ‘নাগরিক’, ‘জাস্টিস’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী’। অর্থাৎ বেশির ভাগ মানুষ চান নতুন দলের নামের মধ্যে এ ধরনের শব্দ থাকুক। তিনি বলেন, মানুষের মতামতের ভিত্তিতে দলের নাম চূড়ান্ত করা হবে। আর এই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে যেকোনো দিন দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা ভাবা হচ্ছে।
তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে অবশ্য গত ২৫ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন, সেটি জনগণকে হতাশ করবে। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তরুণেরা নতুন পথ রচনা করবেন। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথ নয়। পথটি অবশ্যই স্বচ্ছ হওয়া উচিত।
এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া চার পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যের এক জায়গায় বলা হয়, ‘সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন বলে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা ধরনের লক্ষণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে। এটি দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যেকোনো দলের আত্মপ্রকাশকে আমরা স্বাগত জানাব।’
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ কি-ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে বেশি এসেছে ‘গণতন্ত্র’, ‘নাগরিক’, ‘জাস্টিস’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী’। অর্থাৎ বেশির ভাগ মানুষ চান নতুন দলের নামের মধ্যে এ ধরনের শব্দ থাকুক।বিএনপির এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নাগরিক কমিটির নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, উপদেষ্টাদের কেউ নতুন দলে এলে পদত্যাগ করেই আসবেন। অন্তর্বর্তী সরকারে থেকে রাজনৈতিক দলে যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গত বছরের ১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন একপর্যায়ে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার সেই অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর আগে আন্দোলন পরিচালনায় গত ৮ জুলাই ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে গত ৩ আগস্ট তা বাড়িয়ে ১৫৮ সদস্য করা হয়।
গত বছরের ২২ অক্টোবর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক টিম বিলুপ্ত করে চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানার ফ্যাসিবাদের পতন ত্বরান্বিত করেছে। তাই দেশের মানুষ মনে করে, এই ব্যানারের কার্যক্রম এখানেই স্থগিত হওয়ার সুযোগ নেই। এরপর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি, নির্বাহী কমিটি ও বিভিন্ন সেল গঠনের পাশাপাশি জেলায় জেলায় ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
অন্যদিকে অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংগঠিত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারা এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় ৩০০ থানায় কমিটি করেছে। নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
নতুন ছাত্রসংগঠনের চিন্তাজাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন দল গঠনের পাশাপাশি একটি ছাত্রসংগঠনের কথাও ভাবছেন তাঁরা। তবে সেটির নাম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে হবে না। ছাত্রসংগঠনটি হবে ভিন্ন নামে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি যেহেতু গণ-অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম, তাই এটি এই নামেই থেকে যাবে। জাতীয় নাগরিক কমিটিও বহাল থাকবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে অনেকে নতুন দলে যোগ দেবেন, আর ছাত্রদের অনেকে যোগ দেবেন নতুন ছাত্রসংগঠনে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, নতুন ছাত্রসংগঠন তৈরির বিষয়টি এখনো পরিকল্পনা পর্যায়ে আছে। নামও চূড়ান্ত হয়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স র দ দ ন প টওয় র ন হ দ ইসল ম আখত র হ স ন সদস যসচ ব চ ড় ন ত হয় দল র য ত র ল গঠন র প দল গঠন র গত বছর র শ র ষ পদ দল র ন ম উপদ ষ ট সরক র র র জন য সদস য ব এনপ পছন দ
এছাড়াও পড়ুন:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ফ্রন্টের নতুন কমিটি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৯ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইভান তাহসীব ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন একই শিক্ষাবর্ষের শামসুল আলম মারুফ।
বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনে ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৩তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি ইভান তাহসীব বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
কমিটিতে সহসভাপতি হয়েছেন খাদিজা তুল কুবরা, সাংগঠনিক সম্পাদক আপেল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক তৌকির আহমেদ, অর্থ সম্পাদক সিদ্ধার্থ কুমার রায়, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খিজির আল সিফাত, স্কুলবিষয়ক সম্পাদক পল্লব কুমার, সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক জুনায়েদুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক সাজু আহমেদ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক দীপংকর রায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আহাম্মদ নাঈম। কার্যকরী সদস্য ফারিহা তাসনিম, মিশকাতুল জামান, তাজুল ইসলাম, সৌরভ আহমেদ, তাজওয়ার ইসলাম, নাজিব মাহমুদ ও রিয়াদ সরকার।
কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।
কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির স্কুলবিষয়ক সম্পাদক দীপা মজুমদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।