Prothomalo:
2025-02-22@23:03:43 GMT

উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে জমি 

Published: 16th, February 2025 GMT

রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল) গিলছে ৮৩টি ইটভাটা। কতিপয় কৃষক নগদ টাকার লোভে ওই মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন। এতে জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। এতে কৃষি বিভাগের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেও কৃষকেরা তেমন বুঝতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদেরা।

গত এক সপ্তাহে সরেজমিনে প্রথম আলোর দুই প্রতিবেদক ওই দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখেছেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি তিন-চার ফুট গর্ত করে ট্রাক্টরে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইটভাটার মালিকেরা এই মাটি কিনছেন। কৃষকেরা এর ক্ষতিকর দিক বুঝতে পারছেন না।

মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি আবার ফিরতে ১৫ থেকে ২০ বছর লেগে যেতে পারে। তাই কৃষকদের জমির মাটি বিক্রি না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ধীবা রানী, কৃষি কর্মকর্তা, তারাগঞ্জ 

বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বদরগঞ্জে ৭১টি ইটভাটা রয়েছে। একেকটি ইটভাটা ৫-১৫ একর পর্যন্ত কৃষিজমিজুড়ে স্থাপিত। বিভিন্ন দ্বন্দ্বে ১১টি ভাটা এবার বন্ধ রয়েছে। চলতি বছর ৬০টি ইটভাটায় কাঁচা ইট পোড়ানো হচ্ছে। এই ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি। ৬০টি ইটভাটার মধ্যে ৫১টির বৈধ কাগজপত্র নেই। তারাগঞ্জে ২২টি ইটভাটার ১৯টির বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই।

১৩টি ইটভাটার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ইটভাটায় বছরে ৫০ থেকে ৮০ লাখ কাঁচা ইট পোড়ানো হয়। একেকটি ইটের ওজন সাড়ে তিন কেজির বেশি।

কৃষকেরা আবাদি জমির মাটি কেন বিক্রি করছেন, এ বিষয়ে অন্তত ৫০ কৃষক ও ৪ জন কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকেরা সাংসারিক যাবতীয় ব্যয় সামাল দেন ফসল বিক্রি করে। পাশাপাশি সেই টাকা ফসল চাষাবাদেও ব্যয় করেন, কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাঁরা ব্যয় সামাল দিতে পারছেন না। অনেক সময় উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য তাঁরা পান না। কখনো উৎপাদন খরচ ওঠে না। এবার অনেকে আলু লাগিয়ে লোকসানের দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। ১০০ টাকা কেজি দরে আলুবীজ কিনে সেই আলু ১০ টাকা কেজিতে কৃষকেরা বিক্রি করছেন। এবারে বিভিন্ন সবজি চাষেও কৃষকেরা লোকসান গুনেছেন। এসব কারণে অভাব–অনটনে পড়ে তাঁরা অনেকে নগদ টাকার জন্য আবাদি জমির মাটি বিক্রি করছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, বদরগঞ্জের মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর মৌজায় ইটভাটা রয়েছে ২৫টি। সেখানে এক্সকাভেটরের (ভেকু) সাহায্যে কৃষিজমির মাটি কেটে ট্রাক্টরে তুলতে দেখা গেছে। সেখানে কথা হয়, ট্রাক্টরশ্রমিক আনারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জমির মালিক মাটি বেচাইচে ইটভাটার মালিকের গোড়োত। হামাক অর্ডার (আদেশ) করছে হামরা কাটি নিয়া যাওচি। ভালো–মন্দ হামার বুঝার দরকার নাই।’

জানতে চাইলে পাশের বিবিএল ইটভাটার মালিক মোকছেদুল হক বলেন, ‘ইট তৈরিতে প্রচুর মাটি লাগে। যেখান থেকে পাই, কিনে ইট বানাই।’

বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ী, চম্পাতলী, শেখেরহাট, বকশীগঞ্জ, ঘাটাবিল এবং পাঠানের হাট এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।

আমরুলবাড়ী গ্রামের কৃষক সুমন মিয়া বলেন, ‘দুই বছর আগে আমার আবাদি জমির দুই পাশের দুই কৃষক জমির মাটি বিক্রি করায় চার–পাঁচ ফুট গভীর হয়েছে। এখন আমার উঁচু জমিটা ভেঙে পড়ছে।’

রামনাথপুরের কৃষক আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাধ্য হয়া আবাদি ভুঁইয়ের মাটি ইটভাটায় ব্যাচে দিচু। ওরা (ইটভাটার মালিক) গাড়িপ্রতি (ট্রাক্টরপ্রতি) মাটির দাম দেওচে ৩০০ টাকা।’

বদরগঞ্জ কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহেববুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে কৃষকেরা অভাবে পড়ে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করছেন। ইটভাটার মালিকেরা তিন-চার ফুট গভীর করে মাটি খুঁড়ে ইটভাটায় নিচ্ছেন। আগে এসব উঁচু জমিতে ধানসহ সবজির চাষ হলেও নিচু হওয়ায় এখন আর সবজির চাষ হয় না। তুলনামূলক ধানের ফলনও অর্ধেক কমেছে। আমরা চেষ্টা করেও কৃষকদের মাটি বিক্রি করা থেকে নিবৃত্ত করতে পারছি না।’

তারাগঞ্জের উত্তর পাড়া গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, ‘কৃষকেরা জমির মাটি ব্যাচায়, আমরা কিনি। জোর করি তো কারও জমির মাটি কাটি আনি না।’

তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী, সয়ার, কুর্শা, আলমপুর ও হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার মালিকের নিযুক্ত লোকজন কৃষকের আবাদি জমির মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা আগামী বছরের জন্য মাটি কিনে ইটভাটায় মজুতও করছেন।

তারাগঞ্জের বালাপাড়া গ্রামের কৃষক মমিনুল হক বলেন, ‘আবাদি জমির মাটি বেচলে ক্ষতি হয়, এইটা তো জানি না।’ ওই ইউনিয়নের ইটভাটার আরেকজন মালিক এজাজুল হক বলেন, ‘মাগনায় তো কায়ও মাটি দ্যায় না, অভাবের সময় হামারটে টাকা নিয়া যায়। পরে জমির মাটি কাটি আনি।’

তারাগঞ্জের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী বলেন, ফসল উৎপাদনে জমির উপরিভাগের উর্বর এক ফুট মাটি কাজে লাগে। এ মাটিতেই প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ থাকে। দেদার মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি আবার ফিরতে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তাই কৃষকদের জমির মাটি বিক্রি না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজ বলেন, ‘উপরিভাগের মাটি কেটে নিলে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়। আমরা কৃষকদের আবাদি জমির মাটি বিক্রি না করার পরার্মশ দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু তাঁরা অভাবে পড়ে টাকার জন্য তা বিক্রি করছেন।’

বদরগঞ্জের ইউএনও মো.

মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোথাও কৃষিজমির মাটি কাটার অভিযোগ পেলে অভিযান চালাচ্ছি। সম্প্রতি কয়েকজনকে জরিমানাও করেছি। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হচ্ছে।’ অনেকটা অভিন্ন কথা বলেন তারাগঞ্জের ইউএনও রুবেল রানাও।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইটভ ট র ম ল ক র উপর ভ গ র ম ট ক ষকদ র ইটভ ট য় করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বদরগঞ্জে ভুট্টাখেত থেকে মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেওয়া নারীর লাশ উদ্ধার

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার একটি ভুট্টাখেত থেকে আনুমানিক ২৮ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা এক নারীর মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেওয়া লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের কালীরহাট বালাপাড়া গ্রামের পাশের একটি ভুট্টাখেত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, লাশের মাথাসহ পুরো মুখমণ্ডল ও শরীরের কিছু অংশ ঝলসানো ছিল। চেহারা বিকৃত হওয়ায় চেনা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। লাশ উদ্ধারের সময় নিহত নারীর বাঁ হাত ছিল না।

ওসি আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে কেরোসিন ঢেলে আগুনে কিংবা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ দিয়ে লাশের মাথাসহ মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভুট্টাখেতের ভেতরে পড়ে থাকায় লাশের বাঁ হাতটি শিয়াল ছিঁড়ে নিয়ে যেতে পারে। উদ্ধারের সময় লাশের পরনে লাল রঙের পোশাক ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল ১০টার দিকে বালাপাড়া গ্রামের এক ব্যক্তি ঘাস কাটতে গিয়ে ভুট্টাখেতের ভেতরে ওই নারীর লাশ দেখতে পান। পরে এলাকার লোকজন থানা-পুলিশে খবর দেন।

বেলা আড়াইটার দিকে বদরগঞ্জ থানার পুলিশ, সিআইডি ও পিআইবি পুলিশের দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল। এ ঘটনায় থানায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বদরগঞ্জে ভুট্টাখেত থেকে মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেওয়া নারীর লাশ উদ্ধার