খাল ও পাড়ের মাটি লুট, কিছুই জানে না প্রশাসন
Published: 16th, February 2025 GMT
কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় একটি খালের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাটি কেটে লুট করে নেওয়া হয়েছে। শুধু খালের ভেতরেই নয়, লুট করা হয়েছে পাড়ের মাটিও। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও খালটির অস্তিত্ব রক্ষা হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন দাবি করেছে, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের চাঁদকলমিয়া ও বরল গ্রামে। লালমাই উপজেলার আশকামতা, বরল, চাঁদকলমিয়া, ফতেহপুর ও পশ্চিম অশ্বত্থতলা হয়ে খালটি ডাকাতিয়া নদীতে মিশেছে। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। এর মধ্যে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লুট করে নেওয়া হয়েছে মাটি। বর্তমানে সরেজমিন গেলে চাঁদকলমিয়া ও বরল গ্রাম এলাকায় খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।
প্রায় এক মাস ধরে মাটি কাটা চলতেছে। প্রশাসনের লোকজন সবকিছু জানে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটা হচ্ছে। শাহজাহান, স্থানীয় বিএনপির কর্মীস্থানীয়দের ভাষ্য, সম্প্রতি গভীর রাত থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত এই খালের মাটি কাটা হয়েছে। লুটের এসব মাটি গেছে আশপাশের বিভিন্ন ইটভাটা ও পুকুর ভরাটের কাজে। বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় থেকে প্রায় ৫০০ গজের মধ্যেই খালটির মাটি লুট হয়েছে। এরপরও খালটির অস্তিত্ব রক্ষা হয়নি।
জানতে চাইলে বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, ‘মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সরেজমিন তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে শিগগিরই।’
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, খালটির ওপর দিয়ে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ গেছে। উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের চাঁদকলমিয়া ও বরল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের একটি রেলসেতু–সংলগ্ন স্থানে খালের ভেতরে বড় বড় গর্ত। খালটির দুই পাড়েও মাটি নেই। কোথাও কোথাও পাড়েও গর্ত তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক আবদুস ছোবহান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এক মাডি কারবারি খালের দুই হাড়ের মাডি (দুই পাড়ের মাটি) কাটতো চাইছিল। তখন আমরা প্রতিবাদ করছি। কিন্তু এইবার আর রক্ষা করতাম পারিনো। সব কাডি লই গেছে তারা। খালটার কোনো অস্তিত্ব রাখেনো।’
স্থানীয় লোকজন জানান, গত সোমবার সকালে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে চাঁদকলমিয়া গ্রামের শাহজাহান ও তাঁর লোকজনের সঙ্গে বরল গ্রামের মহিন উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম পক্ষের মারামারি হয়েছে। শাহজাহানের সমর্থকেরা বরল গ্রামের মাটিশ্রমিকদের মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি।
চাঁদকলমিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান স্থানীয়দের কাছে বিএনপি কর্মী হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার বিকেল এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাটি কাটার বিরুদ্ধে। বরল গ্রামের মহিন, জাহাঙ্গীর, মনির পুরা খালটারে শেষ করে ফেলছে। খালের কোনো অস্তিত্ব তারা রাখেনি। সোমবার আমরা তাদের বাধা দিতে গেছি, তখন সেখানে ঝামেলা হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে মাটি কাটা চলতেছে। প্রশাসনের লোকজন সবকিছু জানে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে যারা মাটি কাটে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। উল্টো আমাদের মতো যারা প্রতিবাদ করে, তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’
এ বিষয়ে জানতে বরল গ্রামের মহিন উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত এক মাসের বেশি সময় ধরে খালের মাটি লুট করে নেওয়া হয়েছে। আমরা বাধা দিয়েছি, কিন্তু মাটি লুটকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা থামেনি। প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই এসব বিষয়ে জানে, এরপরও মাটিকাটা বন্ধ হয়নি। সোমবার দুই পক্ষ যখন মাটির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে, তখন পুলিশ আসে।’
মঙ্গলবার বিকেলে লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
মঙ্গলবার বিকেলে লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এহসান মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ছাড়া স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। আমি ঘটনাটির খোঁজ নিয়ে দেখছি। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন স মব র ল ট কর ব গম র ল কজন ব ষয়ট উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের ১ম ধাপ ঢাকার বৈঠক
প্রায় ১৫ বছরের বিরতি শেষে ঢাকায় গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই পররাষ্ট্রসচিব। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের ৯ দিন আগে এ বৈঠক হলো। দুই পররাষ্ট্রসচিবের আলোচনাকে দেখা হচ্ছে দেড় দশকের স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের প্রথম ধাপ হিসেবে। কারণ, দুই পক্ষই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আলোচনার অন্য প্রক্রিয়াগুলো নিয়মিত রাখার ওপর জোর দিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠক নিয়ে দুই পক্ষই আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছে। দুই পক্ষ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন ও পাকিস্তানের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ নেতৃত্ব দেন। ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের কথা রয়েছে।
সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দিয়েছে। আর পাকিস্তান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে।
স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনে দুই পক্ষের একমতের বিষয়গুলো তাদের সংবাদ সম্মেলন আর বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিফলিত হলেও ব্যতিক্রমও আছে। বিশেষ করে একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার জন্য দেশটির আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান—এই অমীমাংসিত ঐতিহাসিক তিনটি বিষয়ের সমাধানের প্রসঙ্গ ঊহ্য থেকেছে পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে।
অথচ বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের মধ্য দিয়ে সম্পর্কটা যে জায়গায় এসেছে, তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর আশু সুরাহা জরুরি। পাকিস্তান এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার প্রসঙ্গ ঊহ্য রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একাধিক সদস্য জানান, আলোচনা হলেও পাকিস্তান বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার নীতি অনুসরণ করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পরও একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার কথা পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের বিজ্ঞপ্তিতে প্রসঙ্গটি উল্লেখ ছিল। এবারের মতো ২০১০ সালেও পাকিস্তান অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছিল।
এর দুই বছর পর পাকিস্তানের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন। ৬ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরের সময় শেখ হাসিনার হাতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ওই সময় হিনা রাব্বানি অতীত ভুলে সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়াসহ তিন বিষয়ে সুরাহা চেয়েছে বাংলাদেশ১৭ এপ্রিল ২০২৫সাবেক কূটনীতিক এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। সামনে রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হলে বাংলাদেশ জবাব আশা করতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশের দাবি যৌক্তিক, পাকিস্তান আজ না হোক কাল আমাদের দাবি মানবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এদিকে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন একটি প্রতিবেদন ছেপেছে, যার শিরোনাম ‘শীর্ষ কূটনীতিক ১৫ বছর পর ঢাকায় বরফ গলিয়েছেন’। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ বছর ধরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘শীতল যুদ্ধ’ বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। দুই পররাষ্ট্রসচিব তাঁদের বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন।
আরও পড়ুনবিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে : প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব৫ ঘণ্টা আগে