রেফারিকে কী বলায় লাল কার্ড দেখলেন বেলিংহাম
Published: 16th, February 2025 GMT
কমপক্ষে ৪ ম্যাচ, সর্বোচ্চ ১২। হ্যাঁ, এই মুহূর্তে এমন বড় নিষেধাজ্ঞারই মুখে আছেন জুড বেলিংহাম। শনিবার লা লিগায় ওসাসুনার বিপক্ষে ম্যাচে লাল কার্ড দেখেছেন এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। ম্যাচের ৩৮ মিনিটে রেফারি মুনুয়েরা মন্তেরোর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। এরপরই স্প্যানিশ রেফারি তাঁকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান।
বেলিংহামের দাবি, রেফারিকে এমন কিছু বলেননি, যাতে লাল কার্ড দেখানো যায়। এখানে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তিও রেফারির সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, রেফারি বেলিংহামের ইংরেজি বোঝেননি।
স্প্যানিশ দৈনিক এএস জানিয়েছে, খেলা শেষে রেফারি যে প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন, সেখানে লেখা হয়েছে ‘বেলিংহাম রেফারিকে “ফাক ইউ” বলেছেন’। শব্দটি গালি বা অপমানসূচক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে ম্যাচের পর স্প্যানিশ সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান মুভিস্টার+কে বেলিংহাম বলেন, ‘আমি রেফারির প্রতি সম্মান রেখেই বলেছি “ফাক অফ”।’ বেলিংহাম যে শব্দটি উচ্চারণ করেছেন, সেটি সাধারণত বিরক্তি বা ‘দূর হও’–জাতীয় কথা বোঝাতে ব্যবহার হয়।
২১ বছর বয়সী ইংলিশ মিডফিল্ডারের দাবি, রেফারি বুঝতে ভুল করেছেন, ‘আপনারা ঘটনার ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন আমি শুধু একটা অনুভূতি প্রকাশ করেছি। একটা ভুল–বোঝাবুঝির কারণেই ঝামেলাটা বেধেছে। রেফারিকে অপমান করার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না। আমি তাঁকে অপমান করিনি। রেফারিই ভুল করেছেন।’ কর্তৃপক্ষ ঘটনার ফুটেজ পর্যালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন বেলিংহাম।
রিয়ালের তারকা মিডফিল্ডার যখন লাল কার্ড দেখেন, রিয়াল মাদ্রিদ তখন ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে। কিন্তু পরে ১০ জনের দল নিয়ে রিয়াল বেশিক্ষণ এগিয়ে থাকতে পারেননি। ওসাসুনার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে পয়েন্ট খুইয়েছে লা লিগা পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষস্থানধারীরা।
ম্যাচের পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে রিয়াল কোচ আনচেলত্তিও রেফারি বুঝতে ভুল করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন। রেফারির পারফরম্যান্স বিশ্লেষণে তিনি বলেন, ‘ফুটবলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ম্যাচটা আমরা ভালোভাবেই শুরু করেছিলাম। এরপর বেলিংহামের লাল কার্ডটা.
শুধু ওসাসুনার বিপক্ষে ম্যাচে নয়, সর্বশেষ তিন ম্যাচেই রেফারির নেতিবাচক ভূমিকার ভুক্তভোগী হয়েছেন বলেও দাবি আনচেলত্তির, যদিও শাস্তির ভয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারছেন না বলেও ইঙ্গিত করেছেন, ‘(রেফারিং নিয়ে) একটা সমস্যা আছে। সর্বশেষ তিন ম্যাচেই আমাদের সঙ্গে এমন কিছু হয়েছে, যা হওয়া উচিত ছিল না। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলব না। কারণ, পরের ম্যাচেও ডাগআউটে দাঁড়াতে চাই।’
লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের পরের ম্যাচ ২৩ ফেব্রুয়ারি জিরোনার বিপক্ষে। রেফারির প্রতিবেদন আমলে নেওয়া হলে এই ম্যাচসহ লিগে রিয়াল বেতিস ও রায়ো ভায়েকানো এবং সোসিয়েদাদের বিপক্ষে কোপা দেল রে সেমিফাইনালে প্রথম লেগের ম্যাচে অবধারিতভাবে মাঠের বাইরে থাকতে হবে বেলিংহামকে, যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরতে পারে যেভাবে
মাঝে মাঝে কিছুটা ঝলকানি দিলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বস্তুত দুই যুগ ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। আমরা বেশির ভাগ সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতার দিকেই আঙুল তুলেছি, মাঝে মাঝে ব্রোকার-ডিলারদের দায়ী করেছি। খুব কম প্রতিবেদনই বাজারের অতিরিক্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নির্ভরতা আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের স্বল্পতা নিয়ে বলেছে। কম কথা হয়েছে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের ভূমিকা নিয়েও। প্রায়ই মনে হয়, আমাদের কর্তাদের মধ্যে পুঁজিবাজারের গুরুত্ব নিয়েও রয়েছে সংশয়। স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউসের মালিকানা চাইলেও নিজের উৎপাদনশীল বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনতে একেবারেই অনীহ।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়ানোর বিষয়টি সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে আছে সুশাসন আর জবাবদিহি, যা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ভরসা পান না। পুঁজিবাজার প্রায়ই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। শেয়ারদর কারসাজির মাধ্যমে সূচকের অস্বাভাবিক ওঠানামা পরিলক্ষিত হয়। দীর্ঘ মেয়াদে সূচক নিম্নগামী হয়ে যায়। দুঃখজনকভাবে, আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের বেশ ঘাটতি রয়েছে। নেই নিয়ম-নীতির পরিপালনও।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং খাতে দুর্দশা, উচ্চ সুদহারের মতো সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিরাজমান সংকটের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা তৈরি হয়েছে। তারও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ও মুনাফা কমেছে। কেউ কেউ লোকসানের মধ্যেও পড়েছে। অর্থনীতির এমন দোদুল্যমান অবস্থায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের পরিবর্তে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে উচ্চসুদের এবং নিরাপদ প্রতীয়মান বন্ডের দিকে ঝুঁকছেন, যা পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট তৈরি করেছে।
সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারকে নিয়ে এক প্রকার অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অংশীজন। অনেকেই এরই মধ্যে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন। অনেকেই নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। কমেছে বিদেশি ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগও। অথচ পুঁজিবাজারের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করেই একটি স্থানীয় বা আঞ্চলিক পুঁজিবাজার বৈশ্বিক হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালে দেশের পুঁজিবাজারের মোট লেনদেনে বিদেশিদের অংশগ্রহণ ১ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ফ্লোর প্রাইস, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, ভালো শেয়ারের অপ্রাচুর্য, বিনিময় হারের অস্থিরতা ও সুশাসনের ঘাটতির কারণে বিদেশিরা দেশের পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পাশাপাশি অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় এটি অপরিণতই থেকে গেছে। এখান থেকে অর্থ সংগ্রহে দীর্ঘসূত্রতা ও কার্যকর বন্ড মার্কেটের অনুপস্থিতি উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজারবিমুখ করছে। যে কারণে এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে প্রায় সব সূচকেই আমাদের পুঁজিবাজারের অবস্থান সবার নিচে।
পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বাড়াতে হলে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের কিছু দৃশ্যমান কার্যক্রম হাতে নিতে হবে, যা বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করবে। বর্তমান সংকট কাটিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পুঁজিবাজার টেকসই হবে– এমন বার্তা বিনিয়োগকারীদের দেওয়া প্রয়োজন।
গেল আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের মতো পুঁজিবাজারেও অবাধ লুটতরাজ হয়েছে। অসংখ্য দুর্বল ও প্রায় অস্তিত্বহীন কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করে পুঁজিবাজারের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। লাগামহীন কারসাজির মাধ্যমে দুর্বল মৌলভিত্তির, জাঙ্ক কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস আরোপ, ঘন ঘন সার্কিট ব্রেকারের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমা বেঁধে দেওয়া ইত্যাদি কৃত্রিম ব্যবস্থায় বাজারের শোচনীয় অবস্থা ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার বিভিন্ন সময়ে শেয়ার কারসাজিতে অভিযুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো বিচার ও শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এভাবে মূলত বিগত সরকার পুঁজিবাজারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
এমন এক পরিস্থিতিতে যখন অভ্যুত্থানের মুখে বিগত সরকারের পতন ঘটে এবং অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন অনেক অংশীজনের মনেই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা জন্মায়। সেই প্রত্যাশার প্রতিফলনও দেখা যায় পুঁজিবাজারের প্রধান সূচকে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপর কয়েকদিন সূচক ও লেনদেনে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল। তা দীর্ঘায়িত হয়নি। এমনকি ছয় মাস অতিবাহিত হলেও সরকারের দিক থেকে কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে পুঁজিবাজারে কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও শেয়ারদর কারসাজি প্রতিরোধে কাঠামোগত সংস্কারের শক্তিশালী কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
পুঁজিবাজার সংস্কারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিবেদন আমরা দেখিনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রতিবেদন জমার পর এতে যেসব সুপারিশ উঠে আসবে, সেগুলোরও যথাযথ বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম।
পত্রিকান্তরে জানা গিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৯২৫ পয়েন্টে। সেদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। এর পর থেকে পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেন ক্রমেই নিম্নমুখী। দুই সপ্তাহ আগে ডিএসইএক্স সূচক ৫ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে সূচকটি ৭৪৬ পয়েন্ট হারিয়েছে। তখন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৩০ কোটি টাকা। এক্সচেঞ্জটিতে সর্বশেষ ৫০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল গত বছরের ৩ ডিসেম্বর। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত লেনদেনের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা স্পর্শ করেনি।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের জরুরি ভিত্তিতে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়ানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। এতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বল্প সময়ে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। গত ১৬ বছরে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে, তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এরই মধ্যে দুর্বল কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যেমন তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে, তেমনি এর বিপরীতে ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা আবশ্যক। নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান এ ব্যাপারে আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন। আমি মনে করি, ব্যাংকের ঋণ প্রদানকে যেমন তাদের পুঁজির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়, তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিক ঋণগ্রহীতাদের ঋণের সর্বোচ্চ পরিমাণকেও তাদের কোম্পানির পুঁজির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিতে পারে। তাহলে তারা তাদের নতুন অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারে যেতে অনেকটা বাধ্য হবে।
এর বাইরে সুশাসন নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজার কারসাজি প্রতিরোধে কমিশনের উদ্যোগ অনেক দুর্বল। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত অনিয়ম ও কারসাজির দায়ে ৭০০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হলেও বাজারে এখনও স্বস্তি আসছে না।
এটিও সত্য, অভিনব ও অপরাপর সমপর্যায়ের বা প্রতিযোগী দেশের মতো বাজার সংস্কার না করে শুধু কমিশন বদলে বা দু-একজনের বিচার করে আমাদের পুঁজিবাজারের সম্যক সম্ভাবনা আদায় করা যাবে না। সামগ্রিক রাজনৈতিক সুশাসনের বিষয়টিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
মামুন রশীদ: অর্থনীতি বিশ্লেষক