কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর কুড়িখাই মেলার ঐতিহ্য ৪০০ বছরের। এই ঐতিহ্য মেলার প্রচলিত সংস্কৃতি, লোকসমাগম ও বেচাকেনার দিক দিয়ে। এবার মেলায় লোকসমাগম অনেকটা কমে গেছে। কমেছে কেনাবেচাও। মেলা থেকে বড় মাছ কিনে শ্বশুরালয়ে যাওয়া এবং ওই মাছ দিয়ে একসঙ্গে ভূরিভোজে মিলিত হওয়া মেলার মূল ঐতিহ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন এই ঐতিহ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। 

আয়োজকদের ধারণা, দেশের চলমান পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব মেলায় পড়েছে। ফলে গেল বছরগুলোর তুলনায় এবার লোকসমাগম তুলনামূলক কম হয়েছে, বিক্রি কমেছে। সেই সঙ্গে জামাই নিমন্ত্রণের রীতিতে ভাটা পড়ার কারণ মাছের আকাশচুম্বী দাম। 

তারেকুর রহমান চাকরি করেন ঢাকায়। শ্বশুরবাড়ি কটিয়াদীর আচমিতা গ্রামে। মেলা উপলক্ষে ২০ বছর ধরে তিনি শ্বশুরবাড়ির নিমন্ত্রণ রক্ষা করে এসেছেন। এবার তিনি গত বৃহস্পতিবার মেলা থেকে ৩৫ হাজার টাকায় ২২ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ কেনেন। তারেকুর রহমান বলেন, মাছের অনেক দাম। এত দাম দিয়ে মাছ কিনে রীতি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। শুধু এই কারণে মেলায় জামাইদের উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িখাই মাজার লাগোয়া স্থানে ১৬ একর জায়গাজুড়ে দোকানপাট বসেছে। বিন্নিখই থেকে কারু, হস্ত, ইলেকট্রনিক, আসবাবসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ৩০০ দোকান রয়েছে। শিশুদের জন্য আছে নাগরদোলা, চরকিসহ রয়েছে ‘মৃত্যুকূপ’ খেলা দেখার ব্যবস্থা। এক পাশে বসেছে মাছের হাট। হাটে বড় মাছের সমাহার। কেউ কিনছেন বোয়াল, রুই, আইড়, চিতল কিংবা কালবাউশ মাছ। এবার মেলা বসেছে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। শেষ হবে আজ রোববার। নির্ধারিত দিনে মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয় না। চলে আরও কয়েকদিন।

মেলায় এবার আগের বছরের চেয়ে দোকান কিছুটা কম। ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার সবকিছুর দাম বেশি। বিশেষ করে মাছের। এবার তাজা মাছ খুব বেশি ওঠেনি। আবার দাম বেশি। এ কারণে ক্রেতারা দিন দিন মাছ কেনা থেকে দূরে থাকছেন।

কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আওয়াল মিয়া প্রায় ৫০ বছর ধরে মেলায় মাছ বিক্রি করেন। গত মঙ্গলবার রাতে প্রায় ২৫ কেজি ওজনের দুটি বোয়াল মাছ আর ৩০ কেজি ওজনের একটি কাতল বিক্রির জন্য ক্রেতা আকর্ষণে হাঁকডাক করছিলেন। অধিক দামের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য হলো, প্রথমত মেলা সাত দিনের। সাত দিনের মেলার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বসতে হয়। আবার লোকসমাগম কমে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে। খরচ উঠিয়ে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, হজরত শাহজালাল (রহ.

)–এর সফরসঙ্গীদের একজন ছিলেন হজরত শাহ শামছুদ্দিন বুখারী (রহ.)। তিনি তাঁর তিন সঙ্গী শাহ নাসির, শাহ কবীর ও শাহ কলন্দরকে নিয়ে কটিয়াদীর মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই গ্রামে আসেন। এটি ১২২৫ সালের কথা। এই জনপদে শামছুদ্দিন বুখারীর আসার কারণ ইসলাম প্রচার করা। তাঁর মৃত্যুর পর ভক্তরা মাজার প্রতিষ্ঠা করেন। একপর্যায়ে মাজার ঘিরে প্রতিবছর মাঘের শেষ সপ্তাহে মেলা বসা শুরু হয়।

মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ। বিশেষ করে হাওরের মাছ। মেলা চলাকালে আশপাশের ৪০ গ্রামের জামাইরা শ্বশুরবাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ পাবেন, এটিও রীতি। মেলা থেকে বড় মাছ কিনে জামাইরা তবেই শ্বশুরালয়ে হাজির হবেন এবং ওই মাছ দিয়ে সবাই একসঙ্গে ভূরিভোজ করবেন। 

কটিয়াদীর ইউএনও মো. মাঈদুল ইসলাম বলেন, এবার মেলার ইজারা দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেলা শেষ হতে চলেছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পোশাক রপ্তানি বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় বিজিবিএ ও বিজিএমইএর

দেশের পোশাক রপ্তানি বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। বিজিবিএর ইফতার ও দোয়া মাহফিলে দুই সংগঠনের নেতারা এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

রাজধানীর উত্তরা ক্লাবে শনিবার বিজিবিএ সদস্য ও বিভিন্ন ব্যবসায় সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ ইফতার অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য বিজিবিএর। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে বিজিএমইএ ও বিজিবিএর মধ্যে যে দূরত্ব সেটি কমিয়ে আনতে হবে। বিজিএমইএ, বিজিবিএ ও বিকেএমইএকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের জন্য ও ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর আসন্ন নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার আবুল কালাম, জেএফকে সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিন, টর্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন, এজিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল, বিজিবিএর সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল, বিজিবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম সাইফুর রহমান ফরহাদ।

বিজিবিএর সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল বলেন, টেকসই বাণিজ্যের জন্য বিজিবিএ ও বিজিএমইএর মধ্যে যে গ্যাপ সেটি দূর করতে হবে। আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি, সেটি নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে সেগুলো দূর করতে হবে।

বিজিবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম সাইফুর রহমান ফরহাদ বলেন, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নতুন নতুন যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, সেগুলো মোকাবিলা করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বায়িং হাউস সেক্টরে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, লাখ লাখ পরিবার এই সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল, সবার কথা মাথায় রেখে উৎপাদনের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সেক্টরগুলোর সহায়তা জোরদার করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেকালের হাট এবং ঈদের ব্যস্ততা নিয়ে কিছু কথা
  • দেশের ছোট্ট প্রাচীন মসজিদ নওগাঁর ‘চৌজা মসজিদ’
  • সাত কলেজ নিয়ে শিগগিরই যৌক্তিক সমাধান আসবে: ইউজিসি চেয়ারম্যান
  • নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে মডেলদের উদ্যোগ
  • শুক্রবারের আমল
  • পোশাক রপ্তানি বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় বিজিবিএ ও বিজিএমইএর
  • পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে হবে ঈদের বড় জামাত: আসিফ মাহমুদ
  • পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে হবে ঈদের বড় জামাত, থাকবে আনন্দ মিছিল ও মেলা: আসিফ মাহমুদ
  • ঈদ আর বিজুর বিক্রি একসঙ্গে