একটা রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিরাট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে গেল দেশে। এরপর বিগত সব বৈষম্য অবসানে রাষ্ট্র সংস্কারের জোর দাবি ওঠে। বিভিন্ন খাতের সংস্কার ছাড়া, বিশেষ করে কৃষি খাত বাদ দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রম কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা দেখছি কৃষি ও কৃষক নিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবনা আগের মতো থেকে গেছে। এবারের মৌসুমে আলুচাষিদের হতাশায় সেটিই প্রতীয়মান হয়।

আমরা দেখতে পেলাম চলতি মৌসুমে উচ্চফলনশীল (উফশী) বা হাইব্রিড জাতের আলুর বীজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়। আলুর বীজ নিয়ে সিন্ডিকেট বিষয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বেশি দামে আলুর বীজ কিনতে বাধ্য হয়েছেন কৃষক। অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির পর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে হিমাগারের মজুরি বৃদ্ধি। কৃষকেরা দাবি করছেন, অন্যায্য ও অযৌক্তিকভাবে হিমাগারের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে দিনাজপুরের কৃষকেরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। আলু ফে‌লে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। আলুচাষিরা বলেন, কয়েক বছর ধ‌রে হিমাগা‌রে আলু সংরক্ষণে নানা সমস্যার কারণে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

অনেকে পুঁজি হারিয়েছেন। গত দুই বছ‌রে আলু চাষ করা থে‌কে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের জন্য বীজ, আলু ও সার বে‌শি দামে কিন‌তে হ‌য়ে‌ছে। যে জ‌মি ১৫ থে‌কে ১৮ হাজার টাকা প্রতি বিঘা ইজারা নেওয়া গেছে, এবার সেটি পড়েছে ২৫ হাজা‌রের বে‌শি। গত বছর প্রতি কে‌জি আলুর হিমাগার ভাড়া ছিল তিন‌ থে‌কে পাঁচ টাকা। একলা‌ফে এবার সেটা আট টাকা করার ঘোষণা দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। আলুর উৎপাদন এবার বেশি হ‌ওয়ায় হিমাগারমালিকেরা আলু সংরক্ষণে ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা কর‌ছেন।

আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের উল্লেখযোগ্য দাবি হচ্ছে হিমাগা‌রে প্রতি বস্তা আলুর বিপরীতে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ ও অহেতুক হয়রানি বন্ধ করা, আলু শুকানোর জন্য শেড চার্জ ফ্রি বা নামমাত্র করা আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারমালিকেরা যে ঋণ করেন, তা ব্যাংকের সুদের হারের চেয়ে ২ শতাংশের বেশি নির্ধারণ না করা এবং সংরক্ষিত আলু পচে গেলে কিংবা হিমাগার কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে নষ্ট হলে বাজার অনুযায়ী সংরক্ষণকারীকে মূল্য পরিশোধ করা।

বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আমরা আশা করব স্থানীয় প্রশাসন আলুচাষিদের দাবি পূরণে সচেষ্ট হবেন। হিমাগারমালিক, আলুচাষি ও ব্যবসায়ী‌দের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। গোটা দেশে হিমাগার খাদ্য সংরক্ষণে কৃষকদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন থাকার বিষয়টি জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হোক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল র ব আল চ ষ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার লোকজন খাজনা ওঠাবে, বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি’

নীল পাঞ্জাবি পরা একজন সবার সামনে। তার পেছনে একদল লোক। তাদের মাথাসহ মুখ লাল গামছায় বাঁধা। কারও হাতে রামদা, কারও হাতে বাঁশের লাঠি। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে পাঞ্জাবি পরা লোকটির নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আতঙ্কে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে সাধারণ মানুষ।

আজ শনিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এমসি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের মহড়ায় নেতৃত্বে দেওয়া নীল পাঞ্জাবি পরিহিত লোকটি শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। শুধু মহড়া নয়, প্রকাশ্যে বাজারের দোকানিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা-পয়সা লুট করে তার লোকজন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এভাবে অস্ত্রের মহড়া ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনা জানাজানির পর গতকালই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তার নেতৃত্বে অর্ধশত সন্ত্রাসী এমসি বাজারে সশস্ত্র মহড়া দেয়। মাঝে মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শুনতে পাওয়া যায়। তখন আতঙ্কে সাধারণ মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যান। 

১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, মহাসড়কের ওপর চেয়ারে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইক নিয়ে কথা বলছেন জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। তাঁর লোকজনের ‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান থামলে তিনি বলেন, ‘প্রিয় দোকানদার ভাইয়েরা, আমি জেল থেকে এসে ঘোষণা দিয়েছিলাম, এমসি বাজারটাকে আমি আমার নিজস্ব লোক ও আপনাদের সহযোগিতার সুন্দরভাবে পরিচালনা করব। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য আমি পারি নাই। আজকে লোকজন নিয়ে এসেছি। আজকের পর থেকে আমি জাহাঙ্গীর যত দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তত দিন পর্যন্ত আমার নিয়ন্ত্রণে চলবে এমসি বাজার এবং আপনাদের দয়া করে বলছি, এখন এই মুহূর্তে আমার লোকজন খাজনা ওঠানো শুরু করবে। কেউ বাধা দেবেন না। বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের এক নেতা জানান, মহড়া দিয়ে পুরো এমসি বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে পিন্টু। অন্তত ১০০ দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের কাছে বিদেশি পিস্তলও ছিল। তবে গুলি ছোড়েনি। 

আব্দুল লতিফ নামে বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বিকেলে হঠাৎ লোকজন নিয়ে এসে বক্তব্য দেয় পিন্টু। এর কিছুক্ষণ পর রামদার ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীরা ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রের মহড়া দিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখলাম না।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু বলেন, ‘আমি টেহা পয়সা উঠাইনি। এগুলো আমাকে হেয় করার জন্য করা হয়েছে। যারা আমার বাড়ি ভাঙচুর করছিল, অফিস ভাঙচুর করছিল, তাদের খুঁজতে গেছিলাম। না পেয়ে চলে আসছি।’

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লাহ সমকালকে জানান, ঘটনার পরপরই যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, যুবদল নেতার বক্তব্য ও মহড়ার ভিডিও পেয়েছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ