সময় এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবন যাপনে নানা পরিবর্তন আর নতুন নতুন অনুসঙ্গ যুক্ত হয়। পুরোন আর নতুন নিয়মের মিশেলে চলে সামাজিক জীবন। যেমন— প্রেম নিবেদনের জন্য এখনও প্রেমিক প্রেমিকার দিকে ফুল এগিয়ে দেন, কোনো কফি শপের নিয়ন আলোতে আলোচনা জমিয়ে তোলেন। আবার এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। দূর-দূরান্তের অচেনা, অজানা মানুষটিই হয়ে উঠছে একান্ত আপন। দূরকে কাছে এনে দিচ্ছে প্রযুক্তি। এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর ডেটিং অ্যাপেও জমে উঠছে প্রেম। কিন্তু এই অ্যাপ ভিত্তিক প্রেমগুলোতে প্রতারণার ঘটনাও অনেক ঘটছে।

ডেটিং অ্যাপে ‘সঙ্গী’ সেজে, ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অনেকে। কখনও নারী আবার কখনও পুরুষ পরছেন এই ফাঁদে। কিন্তু ডেটিং অ্যাপ কারা বেশি ব্যবহার করে, জানেন? ছেলে-মেয়ে উভয়ই ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করেন।কিন্তু মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই বেশি ডেটিং অ্যাপের ইউজার। ইন্টারন্যাশানাল জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড হেলথ সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য, মধ্য বয়সের পুরুষেরাই সবচেয়ে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। নারীদের তুলনায় মাঝ বয়সি পুরুষেরাই ডেটিং অ্যাপের অ্যাক্টিভ ইউজার।

২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের ২৯৮ জন মানুষের মধ্যে এই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। তারা ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। সেখানেই জানা যায়, নারীদের তুলনায় পুরুষেরা ডেটিং অ্যাপ বেশি ব্যবহার করেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে করেন। দেখা গেছে ফ্রেন্ডস উইথ বেনেফিটস, নো স্ট্রিং অ্যাটাচড থেকে শুরু করে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড— এগুলো খুঁজে থাকেন ইউজাররা। এখানেও পুরুষদের সংখ্যাই বেশি। কেউ দ্রুত কমিটমেন্টে যেতে চান না এবং কোনো সম্পর্কে জড়াতে চান না। 

আরো পড়ুন:

আজ ‘লাভ রিসেট ডে’

যেভাবে বুঝবেন জীবনযুদ্ধে অন্যদের থেকে এগিয়ে আছেন

ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তির আলাদা-আলাদা উদ্দেশ্য থাকে। কেউ সিরিয়াস রিলেশনশিপের খোঁজে করেন, আবার কারও কাছে ডেটিং অ্যাপ নিছক সময় কাটানোর মাধ্যম। এতকিছুর পরেও অনেকে নতুন বন্ধু পাতান ডেটিং অ্যাপে। 

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অ য প ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

ধোঁয়ার ঝুঁকিতে শিশুস্বাস্থ্য

বাইরে ও ঘরের ভেতর উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের বায়ুর মান আশঙ্কাজনক। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৪’-এ জানা যায়, ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ এবং নগর হিসেবে ঢাকা ছিল বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দূষিত। গত বছর বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। যদিও এটা ২০২৩ সালের তুলনায় অল্প কমেছে, তাও এ পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে কমপক্ষে ১৫ গুণ। 

যেখানে বিশুদ্ধ বাতাস শিশুর বেড়ে ওঠা ও বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ ও হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের (এইচইআই) যৌথভাবে প্রকাশিত ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে বিভিন্ন রোগে ২০২১ সালে ৫ বছরের কম বয়সী ১৯ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়।

বায়ুদূষণের কারণে বাতাসের মান হ্রাস পায়, যার ক্ষতিকর প্রভাব বেশি পড়ে শিশুদের ওপর। তারা হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়। শিশুরা গর্ভাবস্থা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বায়ুদূষণ তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ঝুঁকি তৈরি করে।

জন্মের পর বেড়ে ওঠার প্রতিটি পর্যায়ে বায়ুদূষণে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয় শিশুস্বাস্থ্যে। তাদের শরীর ও মস্তিষ্ক ধারাবাহিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যায়। তারা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে দ্রুত শ্বাস নেয় এবং তা কখনও কখনও শরীরের তুলনায় বেশি। অনেক শিশু মুখ দিয়েও শ্বাস নেয়, বায়ুদূষিত হলে যা আরও বেশি ক্ষতির কারণ। দূষিত বায়ুতে ভারী ধাতুর উপস্থিতির কারণে এর ঘনত্ব (যেমন ধুলা ও ধোঁয়া) বেশি থাকে। এ ছাড়া নবজাতকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে তারা পরিবেশদূষণের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। দূষিত অতি ক্ষুদ্রকণা তাদের শ্বাসযন্ত্র দিয়ে প্রবেশ করে সহজেই রক্তের সঙ্গে মিশে যায়।
বাইরের দূষিত বাতাস ছাড়াও ঘরের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের দূষিত বাতাসে থাকতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম কয়েলের ধোঁয়া। ঘর মশামুক্ত রাখতে অনেকে সারারাত বদ্ধ কক্ষে কয়েল জ্বালিয়ে রাখেন, যা শিশুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি শিশুদের আশপাশে ধূমপান করলে সে ধোঁয়াও নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়া শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানিসহ তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পাশাপাশি তাদের ফুসফুসের সক্ষমতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। বায়ুদূষণ ও ধোঁয়ার সঙ্গে নিউমোনিয়ার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া।  

মশার কয়েলে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা এবং ত্বকের জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশার কয়েলের ধোঁয়া দীর্ঘ সময় বা উচ্চমাত্রায় গ্রহণ করলে এ সমস্যাগুলো আরও গুরুতর হতে পারে। দেশের দীর্ঘস্থায়ী বায়ুদূষণ সমস্যা এবং যানবাহনের ধোঁয়া নবজাতকদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এর পাশাপাশি মশার কয়েলের ধোঁয়া আরেকটি বিপদ হিসেবে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। 
বাংলাদেশে নবজাতকদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। যে কোনো শিশু চিকিৎসকের চেম্বারে গেলে দেখা যায়, ১-১২ মাস বয়সী শিশুরা প্রায়ই বিভিন্ন নাসাপ্রদাহের সমস্যায় ভুগছে। এর প্রধান কারণ হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা দূষিত বাতাস গ্রহণ করছে, যা মশার কয়েলের ধোঁয়া এবং অন্যান্য উৎস থেকে নির্গত ক্ষতিকারক কণায় ভরপুর। বায়ুদূষণের ফলে শিশুদের মধ্যে কম জন্ম-ওজন, হাঁপানি, ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ও অ্যালার্জির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই এসব ব্যাপারে মা-বাবা ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি শিশুর সুরক্ষায় প্রশাসনকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

মোহাম্মদ জাকারিয়া: কমিউনিকেশন প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আইজ কিতা ফয়লা বৈশাখ নি, ভালা দিনে পুয়া জন্ম নিছে’
  • সালমানকে হুমকি, একজনকে খুঁজে পাওয়ার পর যে তথ্য দিল পুলিশ
  • বেলীর অভাবের ঘরে আলো হয়ে এলো ফুটফুটে ছেলে
  • ধোঁয়ার ঝুঁকিতে শিশুস্বাস্থ্য