দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় এক–তৃতীয়াংশ বা সাড়ে ২৯ শতাংশ কোম্পানিই এখন দুর্বল মানের। দুর্বল মানের এসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ারে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হন। তালিকাভুক্ত ৩৫০ কোম্পানির মধ্যে ১০৩টিই এখন দুর্বল মানের কোম্পানি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা শতক ছাড়িয়েছে। শেয়ারবাজারে জেড শ্রেণিভুক্ত দুর্বল মানের কোম্পানিগুলো জাঙ্ক শেয়ার হিসেবে বেশি পরিচিত।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে ঢাকার বাজারে জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩টিতে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারই নতুন করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। ২০২২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই ব্যাংক তিন বছর না ঘুরতেই দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর আগে বুধবারও পাঁচটি কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হয়। কোম্পানিগুলো হলো সমতা লেদার, গোল্ডেন সন, এসএস স্টিল, আমরা টেকনোলজিস ও আমরা নেটওয়ার্কস। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ না করায় এসব কোম্পানিকে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে গোল্ডেন সন বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ করে দিয়েছে। এ কারণে কোম্পানিটিকে আগামী রোববার থেকে আবারও বি শ্রেণিতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মে মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি আদেশ জারি করে। সেখানে কোন ধরনের কোম্পানিকে দুর্বল মানের বা জেড শ্রেণিভুক্ত করা যাবে, তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির সেই নির্দেশনা মেনে কোম্পানির শ্রেণীকরণ করতে গিয়ে শেয়ারবাজারে দ্রুতই বাড়ছে দুর্বল মানের কোম্পানির সংখ্যা। তাতে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা কমছে।

বিএসইসির ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশের ৮০ শতাংশ বিতরণ না করলে ওই কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করার বিধান করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে কোনো কোম্পানি বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করতে না পারলে সেই কোম্পানিকেও জেড শ্রেণিভুক্ত করার বিধান করা হয়। এই দুই বিধানের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানির শ্রেণি অবনমন হয়েছে।

বাজারে যখন এক–তৃতীয়াংশ কোম্পানি জাঙ্ক শেয়ার হয়ে পড়ে, তখন তা দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে খারাপ বার্তা দেয়। এ ধরনের খবরে বিনিয়োগে আগ্রহ হারান ভালো বিনিয়োগকারীরাফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসি

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে বর্তমানে যে হারে জাঙ্ক বা জেড শ্রেণিভুক্ত শেয়ারের সংখ্যা বাড়ছে, তা বাজারের জন্য উদ্বেগজনক। এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় তা দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এ অবস্থায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি শ্রেণীকরণের পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। তা না হলে বাজারে বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা কমে যাবে। তাতে বাজারে একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, তালিকাভুক্ত শতাধিক কোম্পানি জাঙ্ক শেয়ারে পরিণত হওয়া বাজারের জন্য খুবই খারাপ খবর। একটি বাজারে যখন এক–তৃতীয়াংশ কোম্পানি জাঙ্ক শেয়ার হয়ে পড়ে, তখন তা দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে খারাপ বার্তা দেয়। এ ধরনের খবরে বিনিয়োগে আগ্রহ হারান ভালো বিনিয়োগকারীরা। তাই বর্তমান পরিস্থিতি কোম্পানির শ্রেণীকরণ বা শ্রেণিবিভাজন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, তারা বাজার–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সুপারিশ করতে পারে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৬০টির বেশি কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬টিতে। সেই হিসাবে গত এক বছরেই সবচেয়ে বেশি কোম্পানি জাঙ্ক শেয়ার হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। বিএসইসির নতুন নিয়মের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন বাজার–সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানে এ, বি, এন ও জেড নামে চারটি শ্রেণি রয়েছে। এর মধ্যে যেসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেয় ও নিয়মিত বার্ষিক সভা করে, সেসব কোম্পানি এ শ্রেণিভুক্ত। যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়, সেগুলো বি শ্রেণিভুক্ত। এ ছাড়া নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে এন শ্রেণিভুক্ত করা হয়। আর যেসব কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সভা করে না, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় না, লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানিগুলো জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়। শেয়ারবাজারে বর্তমানে বি ও এন শ্রেণির চেয়ে জেড শ্রেণির কোম্পানির সংখ্যা বেশি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল সিদ্ধান্তে শতাধিক কোম্পানি এখন জেড শ্রেণিভুক্ত। এ অবস্থায় আইপিও নীতিমালার আমূল পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি কোম্পানির শ্রেণিবিভাজন নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবেমিনহাজ মান্নান ইমন, পরিচালক, ডিএসই

সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ার জন্য জেড শ্রেণিভুক্ত শেয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকেও একটি কারণ হিসেবে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, যখনই কোনো কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হয়, তখনই এটির লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার এ ধরনের কোম্পানিতে ঋণসুবিধাও বন্ধ হয়ে যায়। লেনদেন নিষ্পত্তি হতেও বেশি সময় লাগে। এসব কারণে বাজারে লেনদেনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ডিএসইর বর্তমান বিধান অনুযায়ী, জেড শ্রেণিভুক্ত কোনো শেয়ারে ঋণসুবিধা পান না বিনিয়োগকারীরা। আর জেড শ্রেণির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হতে তিন দিন সময় লাগে।

এ ছাড়া দুর্বল মানের এসব কোম্পানি নিয়ে হামেশা শেয়ারবাজারে কারসাজির ঘটনাও ঘটছে। নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে এসব শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। এতে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহেও ঢাকার বাজারে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে ৫টিই ছিল জেড শ্রেণিভুক্ত। কোম্পানিগুলো হলো নিউলাইন ক্লথিংস, অ্যাপোলো ইস্পাত, নুরানী ডায়িং, রিংশাইন টেক্সটাইলস ও রেনউইক যোগেশ্বর।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ বছর ধরে খারাপ কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জসহ বাজার অংশীজনেরা বিরোধিতা করে আসছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব বিরোধিতাকে আমলে নেয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল সিদ্ধান্তে শতাধিক কোম্পানি এখন জেড শ্রেণিভুক্ত। এ অবস্থায় আইপিও নীতিমালার আমূল পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি কোম্পানির শ্রেণিবিভাজন নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও তালিকাচ্যুতির ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে ন্যস্ত করা সময়ের দাবি। পুঁজিবাজার উন্নয়নে যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, তারা আইপিও নীতিমালা সংশোধন ও কোম্পানির শ্রেণিবিভাজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র বল ম ন র ক ম প ন জ ড শ র ণ ভ ক ত কর শ র ণ ভ ক ত হয় শ র ণ ব ভ জন সব ক ম প ন ব এসইস র এক ত ত য় এ ধরন র ত হয় ছ এসব ক

এছাড়াও পড়ুন:

কোম্পানি-বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সংশোধন হচ্ছে লভ্যাংশ আইন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হয়। বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ওই টাকা ব্যাংকে অলস পড়ে থাকে।

এতে কোম্পানির ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকোচিত হয়। যার নেতিবাচক প্রভাব মুনাফা, ইপিএস ও এনএভির ওপর পড়ে। তাই কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে অলস টাকার ব্যবহার বাড়াতে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে বিএসসি

অর্থ আত্মসাৎ, মশিউর সিকিউরিটিজের শাস্তি দাবি বিনিয়োগকারীদের

জানা যায়, এখন থেকে পরিচালনা পর্ষদ সভায় ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের অর্থ বিতরণের আগে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকে ফেলে রাখতে হবে না। এজিএমের একদিন আগে ব্যাংকে জমা দিলেই চলবে। তবে টাকা জমা দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় নথিসহ বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করতে হবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানির (বিএপিএলসি) একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লভ্যাংশ সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন আনতে চলেছে বিএসইসি। সম্প্রতি সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিগগিরই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে।

তবে বিএপিএলসি এজিএমের ১০ দিন পরে লভ্যাংশের টাকা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখার সুযোগ চেয়েছিল। তবে সেটি এজিএমের একদিন আগে সেটি জমা করার বিধান রাখতে যাচ্ছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “বিএপিএলসির দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করেই কমিশন নতুন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকে নগদ লভ্যাংশের টাকা ফেলে রাখতে হবে না।”

তিনি আরো বলেন, “এজিএমের পর যদি টাকা না দেয়, তাহলে কীভাবে ধরব? কিন্তু, এজিএমের আগে কোম্পানি টাকা জমা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাবে। এখানে ইস্যুয়ার কোম্পানিকেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এজিএমের একদিন আগে টাকা জমা দিতে বলা হচ্ছে।”

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবরে বিএপিএলসির তৎকালীন সভাপতি এম আনিস উদ দৌলা সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলামের কাছে চিঠি দেন। নগদ লভ্যাংশ পৃথক ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণ প্রসঙ্গে সেই চিঠিতে বিএপিএলসি জানায়, পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করার ১০ দিনের মধ্যে ওই পরিমাণ অর্থ একটি পৃথক ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণ করতে হয়। ঘোষিত লভ্যাংশ এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত ধরা যায় না। এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে পর্ষদ ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ পরিবর্তন হতে পারে।

এছাড়া তালিকাভুক্তি বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, পর্ষদ সভায় লভ্যাংশ ঘোষণার পর এজিএম অনুষ্ঠিত হতে সাধারণত ৩ মাস সময়ের ব্যবধান থাকে। দেশের পুঁজিবাজারে অনেক বড় বড় কোম্পানি রয়েছে, যাদের ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের অংক অনেক বড়। ওই লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ যদি ৩ মাসের জন্য একটি পৃথক ব্যাংক হিসাবে অব্যবহৃত অবস্থায় রাখতে হয়, তবে তা কোম্পানির কার্যকর মূলধন (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) সংকুচিত হয়। যার ফলে কোম্পানির মুনাফা, ইপিএস ও এনএভির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ওই চিঠিতে এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা লভ্যাংশ অনুমোদনের পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণের অনুমতি চায় বিএপিএলসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএপিএলসির মহাসচিব আমজাদ হোসেন বলেন, “পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর ১০ দিনের মধ্যে পৃথক ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা দিতে হতো। আমরা এজিএমের ১০ দিন পরে জমা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। পর্ষদ সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে জমা রাখলে ৩ মাস অলসভাবে পড়ে থাকে। ব্যাংকে অর্থ ফেলে রেখে লাভ নেই। অনেক কোম্পানির নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ শত শত কোটি টাকা। তিন মাস তা ব্যাংকে পড়ে থাকলে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকোচিত হয়ে যায়।”

তথ্য বলছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা থেকে বিনিয়োগকারীদের মাঝে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের ঘোষণা আসে পর্ষদ সভায়। পর্ষদ সভার ১৪ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করতে হয়। রেকর্ড ডেটের ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে এজিএম করতে হয়।

ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ এর ২৮ ধারা অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা চূড়ান্ত হয় এজিএমে। এজিএমে লভ্যাংশ চূড়ান্ত হলে ৩০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর হিসাবে পাঠাতে হয়।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পর্ষদ ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ১০ দিনের মধ্যে আলাদা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতে হতো। ফলে ওই অর্থ প্রায় তিন মাসের মতো সময় ব্যাংকে পড়ে থাকতো। এই নিয়মে পরিবর্তন আনার ফলে ওই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে কোম্পানি।

নগদ লভ্যাংশ প্রদান সংক্রান্ত বিএসইসির সিদ্ধান্ত
বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বার্ষিক লভ্যাংশের (অ্যানুয়াল ডিভিডেন্ড) ক্ষেত্রে এজিএমের কমপক্ষে এক দিন পূর্বে লভ্যাংশের টাকা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। তবে ঘোষিত লভ্যাংশের চেয়ে কম লভ্যাংশ এজিএমে অনুমোদিত হলে উদ্বৃত্ত অর্থ উত্তোলনের সুযোগ থাকবে।

ইস্যুয়ার কর্তৃক আলাদা ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশের অর্থ স্থনান্তর করা হয়েছে মর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের একটি সনদ ইস্যুয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) ও কোম্পানি সচিবকে (সিএস) এজিএমে অবহিত করতে হবে এবং স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করতে হবে।

এছাড়া অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের (ইন্টেরিম ডিভিডেন্ড) ক্ষেত্রে রেকর্ড ডেটের পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ডিভিডেন্ডের টাকা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোম্পানি-বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সংশোধন হচ্ছে লভ্যাংশ আইন
  • সংস্কারের ছােঁয়া লাগেনি শেয়ারবাজারে
  • বাজেটে ব্রোকারেজ হাউসের উৎসে কর কমানোর দাবি ডিবিএর