পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের লাল-বাসন্তী রঙের রেশ গতকালও ছিল অমর একুশে বইমেলায়। ছুটির দিন হওয়ায় পাঠক ও দর্শনার্থীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এবারের মেলায় কিছু অসংগতি যেন পিছু ছাড়ছে না। এ নিয়ে সাধারণ পাঠক ও দর্শনার্থীর মধ্যে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা ও ক্ষোভের চিহ্ন।
১৫তম দিনে ভিড় হওয়ায় মেলাজুড়ে ছিল ধুলার আচ্ছাদন। কিছু স্টল নিজেদের উদ্যোগে পানি ছিটিয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির মেলা প্রাঙ্গণে ময়লা ফেলার পর্যাপ্ত ডাস্টবিন দেখা যায়নি। বিভিন্ন খাবারের খোসা যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এ নিয়ে দর্শনার্থী রাহিদ বলেন, ‘এত বড় একটা জায়গাজুড়ে মেলা। হাতেগোনা কয়েকটা ডাস্টবিন। একটা আইসক্রিমের খোসা ফেলতে কি ১০/১৫ মিনিট হাঁটব? আর ধুলার কথা আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। আগেও মেলার এই ধুলাবালুর যন্ত্রণায় বিশেষ দিনগুলোতে আসতে বিরক্ত লাগত। এবারও লাগছে।’
গতকাল বিকেলে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল। কিছুদূর হেঁটে মেলাগেটে প্রবেশ করতে হয়েছে। হাঁটতে কেউ বিরক্ত হননি। তবে বিরক্ত হয়েছেন হকারের উৎপাতে।
গতকাল সন্ধ্যায় টিএসসি চত্বরের প্রবেশমুখে থাকা ব্যারিকেড সরিয়ে বেশ কয়েকজন হকারকে খাবারের ভ্যান নিয়ে মেলায় যেতে দেখা যায়। কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা বিষয়টি সুরাহা করেন।
এ ছাড়া টিএসসির গেট দিয়ে ঢোকার পর বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসা হকারদের কারণে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে বিপাকে পড়তে হয় পাঠক ও দর্শনার্থীকে। ভিড়ের কারণে নারী ও শিশুরা অস্বস্তিতে পড়ে। উত্তরা থেকে মেলায় বই কিনতে আসা নাহার বলেন, মেলা খালি থাকলে দেখতে খারাপ লাগে আর লোকে লোকারণ্য থাকলে বিরক্ত লাগে। এই যে মেলাভর্তি হকার কিছুক্ষণ পরপর আসছে, খাবার নিয়ে বসে আছে। মানুষের জটলা তৈরি হচ্ছে এদের ঘিরে। এতে মেলার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
গেটের কাছাকাছি হকার বসতে দেননি নিরাপত্তাকর্মীরা। তবে গেট থেকে দূরে গিয়ে হকার বসায় যাতায়াতে সমস্যায় পড়ছে মানুষ।
এ ছাড়া গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, মেলার দোয়েল চত্বর ও টিএসসি হয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে হকার যাতায়াত করছে। পুলিশ সদস্যরা কিছু বলছেন না।
গতকাল লিটল ম্যাগ চত্বরে পাঁচটি স্টলে বই চুরি হয়েছে। এ জন্য স্টল মালিকরা হকারদের সন্দেহ করছেন। এ বিষয়ে ‘ক্ষ্যাপা’র নির্বাহী সম্পাদক অপু মেহেদী বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনের মতো স্টল খুলতে এসে দেখি, বইগুলো নেই। প্রতিদিন আমরা স্টলের টেবিলের নিচে বইগুলো রেখে যাই। কিন্তু আজ এসে বইগুলো পাইনি।’
মেলা পরিচালনা কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশের কোনো কোনো সদস্য দায়িত্বে অবহেলা করছেন।
এ বিষয়ে বইমেলা টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ড.
এ বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন বলেন, আমাদের এখনও কেউ জানায়নি। আমরা খোঁজ নেব এবং মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের আরও তৎপর হতে বলব।
নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৭৫টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– ফৌজিয়া খাতুন রানার ‘নিশিকথা’ (আফসার ব্রাদার্স), অরুণ কুমার বিশ্বাসের ‘ভৌতিক ও অলৌকিক’ (রাবেয়া বুকস্), কাশফী আহসানের ‘প্রিয়া বলে’ (ওয়ার্থি), সুমু খান মজলিশের ‘রেণু এখনো ভূত’ (শব্দকথা) ও জরিনা আখতারের ‘নির্বাচিত কবিতা’ (নবান্ন)।
মঞ্চের আয়োজন
গতকাল বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জীবন ও কর্ম : সৈয়দ আলী আহসান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুহম্মদ আবদুল বাতেন। আলোচনায় অংশ নেন তারেক রেজা ও মহিবুর রহিম।
প্রাবন্ধিক বলেন, আধুনিক বাংলা কবিতায় ভাষা ও ভাবের স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টিতে সৈয়দ আলী আহসান পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর কবিতার গঠন ও শব্দযোজনা এমন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যে সেগুলো অন্য কারও রচনা বলে ভুল করার অবকাশ নেই।
আলোচকদ্বয় বলেন, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সমালোচনা-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি।
এ ছাড়া সকাল ১০টায় অমর একুশে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন সুমন মজুমদার, প্রিয়াংকা গোপ ও রেজাউল করিম।
‘লেখক বলছি’ মঞ্চে আলোচনা করেন শহীদুল্লাহ ফরায়েজী ও মহিবুর রহিম।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন তারিফ রহমান ও জাহিদ হায়দার। সংগীত পরিবেশন করেন ফারজানা আক্তার পপি, দীপ্র নিশান্ত, পার্থ প্রতীম রায় প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল অন ষ ঠ ট এসস গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের
খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের প্রতিবাদ এবং উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এ সমাবেশ করেন তারা।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, ইয়াশিরুল কবীর, গোলাম রাব্বানী, তানভীর মন্ডলসহসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
কুয়েটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নের
ইবিতে এক কার্ডেই মিলবে সব সেবা
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর অন্যায়ভাবে কুয়েট প্রশাসন প্রহসন চালাচ্ছে। ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা কুয়েট শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। অনতিবিলম্বে কুয়েট প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ দেশের ছাত্রসমাজ আবারো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ছাত্র রাজনীতি মুক্ত একটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্র রাজনীতিকে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা এবং সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহিরাগত কর্তৃক শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের উপর যেভাবে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে তা চরম অদক্ষতার পরিচয় দেয়।”
তিনি বলেন, “ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই এ ধরণের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ প্রশাসনকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সবসময় কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পাশে আছি।”
সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, “অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কুয়েট উপাচার্যের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের। কিন্তু তিনি একটি দল বা গোষ্ঠীকে সবসময় সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। কুয়েট উপাচার্য সরাসরি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি তার চেয়ারে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “যিনি ছাত্রদের অধিকার সংরক্ষণ করতে পারেন না, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে থাকতে পারেন না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
সোমবার (১৪ এপ্রিল) ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে আগামী ২ মে আবাসিক হলগুলো খোলা ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী