পারিবারিক উৎসবে হঠাৎ আগুনের বিভীষিকা
Published: 16th, February 2025 GMT
পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও শবেবরাতকে কেন্দ্র করে মা, ভাইবোনের পরিবারকে দাওয়াত দিয়েছিলেন সুমন মিয়া। বাসাজুড়ে গল্প-আড্ডা, বাচ্চাদের ছোটাছুটিসহ উৎসবের আমেজ। বিকেল থেকেই চলছিল বিভিন্ন রকমের রান্না। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে ঘরের সব জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি চুলার গ্যাস বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন কেউ। তখনও ঘরের বাসিন্দারা কেউ টেরই পাননি, কত বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। রাতে সুমনের স্ত্রী শারমিন রান্নাঘরে পিঠা বানাতে যান। দেশলাই দিয়ে চুলা জ্বালাতে গেলে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে পুরো বাসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিকাণ্ডে নারী-শিশুসহ একই পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হন। এদের মধ্যে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এক শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত শুক্রবার রাতে ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় একটি আবাসিক ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেশীরা জানান, সাভারের আশুলিয়ার গুমাইল এলাকার আমজাদ ব্যাপারীর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে এক যুগ ধরে ভাড়া থাকেন সুমন মিয়া। শবেবরাত উপলক্ষে গত শুক্রবার গ্রামের বাড়ি থেকে সুমনের মা ও ভাই সোহেল রানার পরিবার বেড়াতে এসেছিল ওই বাসায়। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে ঘরের সব জানালা-দরজা বন্ধ করে বিকেল থেকেই চলছিল রান্না। রাত ১০টার দিকে রুটি ও পিঠা বানানোর জন্য আবার চুলা জ্বালাতে গেল ওত পেতে থাকা বিভীষিকা নেমে আসে সুমনের পরিবারে।
স্থানীয়রা দগ্ধদের উদ্ধার করে প্রথমে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাদের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। বর্তমানে সবাইকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দগ্ধরা হলেন সুমন মিয়া (৩০), তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৫), তিন মাসের মেয়ে সুরাইয়া, ছেলে সোয়াদ (৪), মা সূর্য বানু (৫৫), ফুফু জহুরা বেগম (৭০), ভাই সোহেল রানা (৩৮), বোন শিউলি আক্তার (২৫), বোনের জামাই মনির হোসেন (৪৩), বোনের ছেলে ছামিন মাহমুদ (১৫) ও মাহাদী (৭)। তাদের মধ্যে সুমনের শরীরের ৯৯ শতাংশ, শিউলির ৯৫, শারমিনের ৪২, সোয়াদের ২৭, মনির হোসেনের ২০, ছামিন মাহমুদের ১৪, মাহাদীর ১০, সোহেলের ১০, সুরাইয়ার ৯, সূর্য বানুর ৭ ও জহুরা বেগমের ৫ শতাংশ দগ্ধ রয়েছে।
গতকাল শনিবার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গেলে দেখা যায়, শারমিন ৪২ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ছয়তলার ৬২২ নম্বর শয্যায় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। নিজের ক্ষত উপেক্ষা করে শিশুসন্তানের খোঁজ নিচ্ছেন। কেউ তাঁর পাশে গেলেই জানতে চাচ্ছেন, সুরাইয়া কেমন আছে? সন্তানকে কোলে নেওয়ার জন্য চিৎকার করছেন। একই হাসপাতালে থাকলেও শিশুটিকে কোলে নিতে পারছেন না। তাঁর চিকিৎসা চলছে পাঁচতলার ৫২০ নম্বর শয্যায়। ক্ষুধা পেলেই কাঁদছে শিশুটি। নিরুপায় স্বজন শিশুটির কান্না থামাতে সুমনের সহকর্মী রাশেদের স্ত্রী শারমিন সুলতানা বুকের দুধ দিচ্ছেন। শুধু সুরাইয়াকে দুধ খাওয়ার জন্য তার পাশের শয্যায় গতকাল থেকে আছেন তিনি।
দগ্ধ সুমনের ফুফাতো ভাই মোহাম্মদ শহীদ জানান, মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে ঘরের সব জানালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। শবেবরাত উপলক্ষে বিকেল থেকে ঘরে নানা রকমের রান্না করা হয়। রাত ১০টার দিকে আবার চুলা জ্বালাতে গেলে বিস্ফোরণে ঘরে আগুন ধরে যায়।
দগ্ধ সোহেল রানা বলেন, শবেবরাত উপলক্ষে আমার ভাই সুমনের বাসায় পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম। একটা চুলার গ্যাস বন্ধ করতে কেউ হয়তো ভুলে গিয়েছিল। রাতে পিঠা বানানোর জন্য চুলা জ্বালাতে গেলে হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘরে আগুন ধরে গেলে পরিবারের সবাই দগ্ধ হন।
চিকিৎসকরা জানান, রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দগ্ধদের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সবাই পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান গতকাল বিকেলে সমকালকে বলেন, আশুলিয়া থেকে নারী-শিশুসহ ১১ জনকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। দগ্ধের পরিমাণ বেশি থাকায় আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আশুলিয়া থানার ওসি নুরুল আলম সিদ্দিকী। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, বাসাটিতে তিতাস গ্যাসের কোনো সংযোগ নেই এবং গ্যাসের সিলিন্ডারটি অক্ষত রয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস লিকেজ থেকেই আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এর পরও তদন্ত করা হচ্ছে। পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স মন র পর ব র র জন য র র সব গতক ল অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
জবিতে ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন, উপস্থিতি ৮১ শতাংশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষের ‘ই’ ইউনিটের (চারুকলা অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এতে মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৬০টি আসনের বিপরীতে এ বছর আবেদন করেন ১ হাজার ২৫১ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেন ১ হাজার ৮ জন। ফলে উপস্থিতির হার দাঁড়ায় ৮০ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
আরো পড়ুন:
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
বেরোবিতে ঢাবির বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম। তিনি বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে পরীক্ষার পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সুবিধা–অসুবিধার খোঁজ নেন।
এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহা. আলপ্তগীন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শেখ মো. গিয়াস উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান।
এ ছাড়া শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররাফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ রফিকুল ইসলাম, গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরানুল হকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, হেল্প ডেস্কের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল ও সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন। ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে একটি তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। হেল্প ডেস্ক থেকে পরীক্ষার্থীদের ব্যাগ, মোবাইল ফোনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী টোকেন নম্বরের মাধ্যমে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি পরীক্ষার কেন্দ্র শনাক্তকরণ, চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহে সহায়তা, দেরিতে পৌঁছানো পরীক্ষার্থীদের বাইকযোগে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ এবং অভিভাবকদের বসার সুব্যবস্থা রাখা হয়।
শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তৌহিদ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সব সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। সেই ধারাবাহিকতায় চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে এই হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে।”
ঢাকা/লিমন/জান্নাত