স্কুলে যাওয়ার বয়সেই ৫ হাজার মানুষের মরদেহ দেখে ফেলেছে ফিলিস্তিনি শিশুটি
Published: 16th, February 2025 GMT
জাকারিয়ার বয়স মাত্র ১১ বছর এবং গাজায় থাকে সে। উপত্যকাটিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর এরই মধ্যে শিশুটি হাজারো মানুষের মরদেহ দেখে ফেলেছে। আর সেই কথাই স্মরণ করছিল সে।
কিন্তু জাকারিয়া এমন এক বয়সে এত মানুষের মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছে, যখন তার স্কুলে যাওয়ার কথা। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া গাজায় এখনো হাতে গোনা যে কয়টি হাসপাতাল চালু আছে, তারই একটি আল–আকসায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে সে।
ইসরায়েলি হামলায় আহত ব্যক্তিদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলো গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল–বালাহর ওই হাসপাতাল অভিমুখে ছুটে এলে জাকারিয়াও দৌড়ে যায়। আহত ব্যক্তিদের যাতে দ্রুত হাসপাতালে প্রবেশ করানো ও চিকিৎসা শুরু করা যায়, সে জন্য মানুষের ভিড় সরিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসার পথ করে দেয়।
অ্যাম্বুলেন্স থেকে আহত ব্যক্তিদের নামানোর পরপরই আবারও ছোটাছুটি শুরু হয় জাকারিয়ার। রোগীবাহী স্ট্রেচার নিয়ে হাসপাতালের বারান্দা দিয়ে জরুরি বিভাগের দিকে দৌড় দেয়।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জাকারিয়ার বেশ কয়েকজন স্কুলবন্ধু নিহত হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের আশপাশে ঘোরাঘুরি করায় মর্মান্তিক অনেক দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছে জাকারিয়া। সেই কথা বলছিল সে, একদিন ইসরায়েল হামলা চালানোর পর জাকারিয়া চোখের সামনে এক বালককে পুড়ে মরতে দেখেছে।
ফিলিস্তিনি শিশু জাকারিয়া বলেছে, ‘আমি অন্তত পাঁচ হাজার মরদেহ দেখেছি। আমি নিজের চোখে তাদের দেখেছি।’
আমি অন্তত পাঁচ হাজার মরদেহ দেখেছি। আমি নিজের চোখে তাদের দেখেছি। —জাকারিয়া, ফিলিস্তিনি শিশু‘গাজা: হাউ টু সার্ভাইভ এ ওয়ারজোন’ (গাজা: যুদ্ধক্ষেত্রে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়) শীর্ষক তথ্যচিত্র তৈরি করতে বিবিসি যেসব শিশু–কিশোরের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, জাকারিয়া তাদের একজন।
গাজায় ১৬ মাস আগে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর সেখানে প্রবেশ ও স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ করার ওপর ইসরায়েলের বিধিনিষেধ থাকায় বিবিসির দুজন প্রতিবেদক লন্ডন থেকে তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি দেখা যাবে তথ্যচিত্রটি।
তথ্যচিত্রের জন্য ছবি ও সাক্ষাৎকার জোগাড় করতে গাজায় বসবাসকারী দুজন আলোকচিত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বার্তা আদান–প্রদানের বিভিন্ন অ্যাপস, ইন্টারনেট ও মুঠোফোনে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়।
ভয়ানক লড়াই–সংঘাতের মধ্যে গাজার মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে এ তথ্যচিত্রে। কয়েক সপ্তাহ আগে, যে দিনটিতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়, সেদিনই এটির দৃশ্যায়নের কাজ শেষ হয়েছে।
‘গাজা: হাউ টু সার্ভাইভ এ ওয়ারজোন’ (গাজা: যুদ্ধক্ষেত্রে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়) শীর্ষক তথ্যচিত্র তৈরি করতে বিবিসি যেসব শিশু-কিশোরের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, জাকারিয়া তাদের একজন।তথ্যচিত্রে তিন শিশু ও এক তরুণ বয়সী মায়ের ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়। এ মায়ের এক নবজাতক সন্তান রয়েছে। তাদের বেছে নেওয়ার কারণ হলো, গাজাযুদ্ধে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার সংগ্রামে নিযুক্ত নিরীহ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী তারা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতায় সই হওয়া একটি চুক্তির অধীন গত ১৯ জানুয়ারি হামাস–ইসরায়েল ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালান ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা। ইসরায়েলের দাবি, হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান তাঁরা। অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, এ উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন এবং আহত মানুষের সংখ্যা লক্ষাধিক।
বিবিসি ভেরিফাইয়ের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তথ্যচিত্রটির নির্মাতারা মূলত দক্ষিণ ও মধ্য গাজার একটি এলাকা থেকে চিত্রগ্রহণ করেছেন; যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। নিরাপত্তার জন্য এ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের যেতে বলেছিল ইসরায়েল। অথচ ২০২৪ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এ নিরাপদ অঞ্চলেই শতবার হামলা চালিয়েছে দেশটি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, সেখানে সক্রিয় হামাস যোদ্ধাদের নিশানা করেছে তারা।
তথ্যচিত্রে জানার চেষ্টা করা হয়েছে, যুদ্ধের মধ্যে গাজার শিশুরা কীভাবে খাবার জোগাড় করে, কোথায় ঘুমাবে তা ঠিক করে ও বেঁচে থাকার সংগ্রামে নিজেদের কীভাবে ব্যস্ত রাখে সেসব বিষয়। আল–আকসা হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীরাই–বা কীভাবে আহত ব্যক্তিদের বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম করেছেন, তা–ও দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, এটিই মধ্য গাজার একমাত্র সচল হাসপাতাল।
এ হাসপাতালেই সন্ধান পাওয়া যায় শিশু জাকারিয়াকে। হাসপাতালটিতে কর্মরত সবাই তাকে চেনেন। এখনো জাকারিয়া শিশু, সে কোনো চিকিৎসাকর্মী নয়। কিন্তু হাসপাতালে সর্বক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। অপেক্ষায় থাকে, যদি কাউকে সহায়তা করার সুযোগ পাওয়া যায়, বিনিময়ে কিছু খাবার বা অর্থকড়ি জোটে।
ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি হারিয়ে ধ্বংসস্তূপের মাঝে শিশুসন্তানকে নিয়ে বসে আছেন এক ফিলিস্তিনি নারী। ফিলিস্তিনের গাজায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র মরদ হ দ খ ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
সোনারগাঁয়ের আল-হাবিব ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসার কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৪ মার্চ) বিকেলে উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের হাবিবপুর এলাকায় মাদ্রাসার অডিটোরিয়ামে এ আয়োজন করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হাফেজ মাওলানা মাহফুজ খাঁনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সমাজসেবক ফজল মিয়া ও নুরুল কামাল সাহেব। অনুষ্ঠানে সোনারগাঁ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন (সিকা) থেকে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও হাফেজদের সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, মজলিস মসজিদের সাবেক ইমাম ও খতিব জনাব আলহাজ্ব নুরুল কামাল, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুফতি ইয়াসিন বিন হাবিব,আবুল হোসেন মেম্বার, দেওয়ান ডাক্তার, রকিব হাসান, স্থানীয় গণমাধ্যমসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।