ঐকমত্যের বৈঠকে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ
Published: 16th, February 2025 GMT
আগে সংসদ না স্থানীয় সরকার নির্বাচন– প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রথম বৈঠকেই ভিন্নমত দেখা গেছে। বিএনপি এবং সমমনারা জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য যে কোনো নির্বাচনের ঘোর বিরোধী। তবে ছাত্র নেতৃত্ব ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী ও গণঅধিকার পরিষদ আগে স্থানীয় নির্বাচন চাইছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ছাত্রনেতাদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রথম বৈঠকে দাবি তোলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না। ক্ষমতাচ্যুত দলটিকে সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন, জুলাই গণহত্যার দায়ে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাচনে অযোগ্য করতে নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। এ দাবির বিরোধিতা করেনি অন্য কোনো দল। ছাত্রনেতারা সংবিধান বাতিলের দাবিও করেন। তবে এতে কেউ প্রকাশ্য সমর্থন করেনি।
ছাত্রনেতারা বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, কেউ কেউ ক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার এবং পুনর্বাসনের চিন্তা করছেন, তা হতে দেওয়া হবে না। বিএনপি নেতারা এসব বক্তব্যে বৈঠকে প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তবে বিএনপির সমমনারা স্থানীয় নির্বাচন প্রশ্নে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দ্রুত ঘোষণার দাবিও তোলেন ছাত্রনেতারা। এতে সমর্থন জানায় খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তাবিত সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপির সমমনা দলগুলো। বামপন্থি দল বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ আগে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানায়।
সভার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন মেনে নেব না’। জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া দলটির নায়েবে আমির ডা.
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানিয়েছিলেন, সংস্কারের
জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার তাঁর নেতৃত্বে কমিশন কাজ করবে। গত বুধবার ড. ইউনূসকে সভাপতি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজকে সহসভাপতি এবং অপর পাঁচ সংস্কার কমিশনের প্রধানকে সদস্য করে ছয় মাস মেয়াদি ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার।
ছয় কমিশন এরই মধ্যে সংস্কারের সুপারিশ জমা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে কীভাবে, কতদিনে এবং কতটুকু সংস্কার হবে– এ বিষয়ে সুপারিশ করবে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন কমিশন। গতকাল বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের প্রথম সভায় ২৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের ১০০ প্রতিনিধি অংশ নেন। দীর্ঘমেয়াদে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের আইনি কাঠামো তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি উদ্বোধনী ভাষণে রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে বলেন, ‘সংস্কার যদি সঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে বাঙালি জাতি হিসেবে যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন আপনাদের অবদান থেকে যাবে।’
বৈঠক শেষে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজ সংলাপ হয়নি। জাতীয় ঐকমত্যের প্রক্রিয়া কী হবে, এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনার লক্ষ্য ছিল। রাজনৈতিক দল ও জোটের পক্ষে ৩২ জন কথা বলেছেন।’
সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে জানানো হয় ছয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রতিবেদন সংকলন করে রাজনৈতিক দলকে দেওয়া হবে। এর পর দলগুলো মতামত দেবে কোন কোন সুপারিশের সঙ্গে তারা একমত এবং সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব। তার পর দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে বসবে কমিশন। সব শেষে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আবার সব দলকে নিয়ে বৈঠক হবে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ন্যূনতম সংস্কারের পর দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। তবে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক কমিটিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের চেয়ে সংস্কারে বেশি জোর দিচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, গতকালের বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, সংস্কার কার্যকর হয়েছে কিনা, সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন ও পুলিশ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম কিনা, তা যাচাইয়ে স্থানীয় নির্বাচনের ভোট প্রয়োজন।
বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান আগে জাতীয় নির্বাচনের দাবি করেন। তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গুর হওয়ায় সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে রক্তপাত হবে। জাতীয় নির্বাচনও বিলম্বিত হবে।
এবি পার্টির প্রতিনিধিরা বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন কোনটি আগে বা পরে হবে– এর ওপর রক্তপাত নির্ভর করছে না। সরকারের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব না থাকলে যে নির্বাচনই হোক, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না সরকার। সরকারকে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে ন্যূনতম সংস্কারে একমত পোষণ করা বিএনপি বৈঠকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলেনি।
মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, সংস্কারের বিষয়ে কমিশনগুলো যেসব সুপারিশ করেছে, এর ওপর আলাপ-আলোচনা হবে। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে কথা বলবে কমিশন। বিএনপি আশা করে, খুব দ্রুত ন্যূনতম ঐকমত্য হবে। এর ভিত্তিতে দ্রুত হবে জাতীয় নির্বাচন। প্রথম বৈঠকের আলোচনা ছিল পরিচিতিমূলক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন কথা বলেছে, তা তাদের নিজস্ব মত।
বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ।
ডা. তাহের সাংবাদিকদের বলেন, সব ইতিবাচক সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাবে জামায়াত। কমিশন সংস্কারের প্রস্তাবগুলো দেওয়ার পর পর্যালোচনা করা হবে। কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় মূল সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে বহুদলীয় গণতন্ত্র অসম্ভব। বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও ঐক্য দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে। গণপরিষদ ও জাতীয় নির্বাচন এবং সংস্কার একসঙ্গে চলতে পারে বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নই দেশের ভবিষ্যৎ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা সিদ্ধান্ত দিয়েছে, বাংলাদেশের পরবর্তী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ অপ্রাসঙ্গিক। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর দোসরদের বিচারে হস্তক্ষেপ হলে আবার প্রতিবাদ শুরু হবে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রধান দায়বদ্ধতা হচ্ছে, খুনিদের বিচার করা। তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দ্রুত তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আছে ঠিকই, কিন্তু কর্তৃত্ব সুস্পষ্ট হয়নি। এ রকম কর্তৃত্বহীন অবস্থায় নির্বাচন হবে বিপজ্জনক। ব্যারিস্টার পার্থ বলেছেন, আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে দাঙ্গা শুরু হতে পারে। পুলিশ এখনই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, তখনও পারবে না। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, নির্বাচনের সময় নির্ধারণের চেয়ে জরুরি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা।
নুরুল হক নুর বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে মোটামুটি সবাই একমত। জাতীয় নির্বাচন যদি ডিসেম্বরে হয়, তাহলে কি ১০ মাস স্থানীয় সরকারে প্রতিনিধিহীন থাকবে? তাই আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলেছি।
আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদা এবং জোটগতভাবে কথা হবে। এর পর আমার হয়তো সবাইকে একত্র করে ফিরে আসব। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা করতে চাই না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদা সংলাপে কতদিন লাগতে পারে– প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস। কমিশনের লক্ষ্য যত দ্রুত সম্ভব ঐকমত্যে পৌঁছা। যাতে নির্বাচনের পথে এগোতে পারি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ত ত ব দলগ ল র ব এনপ প রথম সরক র ইসল ম আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় আটকে যায় সব সংস্কার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবগত। অনেক আলোচনা হয়েছে। এমনকি তা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একধরনের ঐকমত্যও আছে। কিন্তু শেষমেশ কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না।
দেশে নীতিপ্রণেতা, পরামর্শক ও বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে একধরনের দূরত্ব আছে। এমনকি বিদ্যায়তনের মানুষের কথা রাজনীতিবিদেরা মেনে নিলেও কিছু হয় না। তাতে শেষমেশ দেখা যায়, আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় গিয়ে সব সংস্কার আটকে যায়।
অর্থনীবিদ সেলিম জাহানের দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বই দুটির মধ্যে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ এবং মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ: কনটেমপোরারি ডেভেলপমেন্ট ইস্যুস’।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। সভাপতিত্ব করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। সঞ্চালনা করেন বাঙলার পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ। আর বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন প্রমুখ।
রেহমান সোবহান বলেন,‘ দেশের সমস্যা কী এবং তার সমাধনই-ই বা কী, তা নিয়ে এক ধরনের ঐকমত্য আছে। আমরা জানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করা দরকার। কিন্তু শেষমেশ কোনোটি হয় না।’ কেন বারবার অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় না, এখন তার ভেতরের গল্প তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
পৃথিবীর অনেক দেশে সহিংসতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে এবং তারপর তারা অনেকেই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেলিম জাহান বৈশ্বিক পরিসরে কাজ করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে রওনক জাহান আহ্বান জানান, তিনি যেন সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে লেখেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে আবার কার্যকর করা যায়, তা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে লেখার আহ্বান জানান।
সংস্কার প্রসঙ্গে সব সরকারই বিশেষজ্ঞদের কথা অগ্রাহ্য করেছে বলে অভিযোগ করেন মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২৯টি টাস্কফোর্স গঠনে রেহমান সোবহান যুক্ত ছিলেন। টাস্কফোর্সগুলোর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতি ও প্রশাসনপ্রক্রিয়ার নানা সমস্যার সমাধান করা। টাস্কফোর্সগুলোয় ছিলেন সেই সময়কার দেশের ২৫৫ জন সেরা পেশাদার ব্যক্তি। কিন্তু সেই টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সম্ভবত পড়েও দেখেননি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান চলমান সংস্কারের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কারের চাপ দেওয়ার জন্য সমাজে নানা রকম গোষ্ঠী আছে, বিষয়টি সে রকম নয়। বরং নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী ছাড়া সমাজে আরও কেউ সংস্কার চায়, তেমনটা মনে হচ্ছে না।
সংস্কার প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য দরকার, তা না হলে কোনো উদ্যোগই আলোর মুখ দেখবে না। এর আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলেও সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিছু কাজ সেই সরকার করেছিল; কিন্তু শেষমেশ তার কিছুই টেকেনি।
বই দুটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেলিম জাহান বলেন, এগুলো গবেষণাধর্মী বই নয়। একদম সাধারণ মানুষ যেন পড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল বুঝতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে এই বই দুটি লেখা।
আলোচনায় প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, বাংলোদেশের অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বইটি সাংবাদিকদের পড়া উচিত। উন্নয়ন ও অগ্রগতির মধ্যে কী ফারাক, তা বোঝার জন্য এই বই পড়া জরুরি।