‘আমি এত বয়সে গাছকে বলছি’
একবার একটা অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি চলছে। সেই অনুষ্ঠানে কবিতা সিংহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অরুণ মিত্র এসেছিলেন। সবার কবিতা কেউ না কেউ পড়ছেন, শুধু অরুণ মিত্রের কবিতা কে পড়বেন, তা ঠিক হচ্ছে না, গদ্যের মতো তো! একজন অনুরোধ করলেন। আমি পড়লাম, আমার মতো করে। তার মধ্যে আবৃত্তির যে তথাকথিত ধরন, তা একেবারেই ছিল না। সেটা শুনে অরুণ মিত্র আমাকে ডাকলেন। বললেন, ‘আপনি আমার ওয়েভলেংথ কী করে বুঝলেন বলুন তো?’ সেদিন আমাকে বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে বললেন।
এদিকে আমি তাঁর বইটই সেভাবে কিছু পড়িনি। অমন স্কলার একজন মানুষ, তাঁর কাছে বইপত্র না পড়ে যাব কী করে? তো, আমি আর যাইনি। পরে আবার বইমেলায় দেখা। বললেন, ‘তুমি তো আর এলেই না!’ বললাম, যাইনি বটে, তবে আপনার একটি কবিতাকে গানের রূপ দিয়েছি। তিনি আরও অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, ‘আমার কবিতা! গান! কোন কবিতা?’ বললাম, ‘নিসর্গের বুকে’। শুনে উনি তো প্রায় হতবাক। আমি গান ধরলাম, ‘আমি এত বয়সে গাছকে বলছি.
‘ডিঙ্গা ভাসাও’
আমাদের বাড়িতে বছর দশকের এক মেয়ে আসত। নাম নমিতা দলুই। আমি ওকে একটু পড়াশোনা শেখাতাম। ওর গলায় গান ছিল, আমার সঙ্গে গুনগুন করত। একদিন খেয়াল করলাম, ও নিজে একটা গান গাইছে। কথাগুলো ছিল এ রকম, ‘ডিঙ্গা বরণ করে মা সনেকা, তরি বরণ করে গো/ টাকা লিব, পয়সা লিব, লিব কুচিকান শাড়ি গো।’ এটা একটা যাত্রায় ও শুনেছে। বললাম, তুই আমাকে শেখাবি? ও বাকি গানটা আর জানত না। আমি তখন নতুন একটা গান তৈরি করলাম। লোকগানের আধারে অন্য একটা গান হয়ে উঠল। নিজের অজান্তেই আমি গানটিকে আন্তর্জাতিকতা দিয়ে ফেললাম। ‘পুবের আকাশ’ যেখান থেকে শুরু হচ্ছে, সেখানে একটা ওয়েস্টার্ন ছাপ এসে পড়ল। ফলে ভারতীয় সংগীত আর ওয়েস্টার্নের একটা মেলবন্ধন ঘটে গেল। এদিকে পুরোনো গানে টাকা-শাড়ি পাওয়ার বিষয় ছিল। এখানে বিষয় হলো, মিশন। গানের মাত্রাই বদলে গেল।
‘আমি বাংলায় গান গাই’
১৪০০ সালের পয়লা বৈশাখ। শতককে স্বাগত জানানো হচ্ছে। কফি হাউসের একটা অনুষ্ঠানে গাওয়ার কথা ছিল। আমি অফিসের কাজ নিয়েই বসেছিলাম, একটা রিপোর্ট লিখতে হচ্ছিল। সেটা করতে করতেই মাথার মধ্যে গানের বিষয়টিও চলছিল। একটা জায়গায় কথাগুলো লিখছিলাম। প্রথম লাইনটা এল। একটা জিনিস আমাকে এ গানটা লিখতে সাহায্য করেছিল। নেহরুর কোনো লেখায় পড়েছিলাম, হি ড্রেমট ইন ইংলিশ।
এই কথা আমাকে তাড়িত করেছিল। স্পোকের বদলে করা হচ্ছে ‘ড্রেমট’। ওই একটা সুতো পেলাম, যেটা থেকে জন্ম নিল, আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন। সবকিছুই বাংলায় করি, এভাবেই গানটা এবার এগিয়ে গেল। হয়তো ওই লাইন না পড়লে গানটা এভাবে হতো না।
সূত্র: রোববারডটইন
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাচেলর পয়েন্টের ‘পলি চেয়ারম্যান’ খ্যাত গুলশান আরা মারা গেছেন
নাটক ও সিনেমার পরিচিত মুখ অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে মৃত্যু হয়েছে তার।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছন পরিচালক এম রাহিম। তিনি জানান, শ্রদ্ধেয় শুলশান আরা আহমেদ আজ আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন। জংলি আপনার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। আপনি আজীবন আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে থাকবেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিচালক কাজল আরেফিন অমি। পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমাদের গুলশান আরা আহমেদ আপা আপা আজ সকাল ৬:৪০-এ ইন্তেকাল করেছেন।’
অমি আরও লিখেছেন, ‘ব্যাচেলর পয়েন্টে উনি কাবিলার আম্মা, নোয়াখালীর চেয়ারম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আপনাকে আমরা মিস করবো আপা। আল্লাহ পাক ওনাকে জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে, জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। আমিন।’
জানা গেছে, হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন অভিনেত্রী। দ্রুতই লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। গুলশান আরা আহমেদের ফেসবুক আইডি থেকে মাঝরাতে লেখা হয়, ‘আমার আম্মু গুলশান আরা আহমেদ আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন, হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিউরের জন্য। আপনার সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।’
পরে শোনা যায় মৃত্যুর খবর, অর্থাৎ লাইফ সাপোর্ট থেকে আর ফেরানো যায়নি তাকে। ভোরে তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিনেত্রীকে দাফন করা হবে। অভিনেত্রীর বোনের ছেলে অভিনেতা আর এ রাহুল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন অভিনেত্রী। তার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
গুলশান আরা ২০০২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে টিভি নাটকে যাত্রা শুরু করেন। তবে নিজেকে একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। সেই ইচ্ছা থেকেই গুলশান আরা প্রথম অভিনয় করেন প্রয়াত এনায়েত করিম পরিচালিত ‘কদম আলী মাস্তান’ চলচ্চিত্রে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘চরিত্র’, ‘ডনগিরি’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘পোড়ামন’ এর মতো জনপ্রিয় সব ছবি।