বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বলতে গেলে ওয়ারেন বাফেটের কথা স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। মার্কিন এই ব্যবসায়ীকে বলা হয় ‘বিনিয়োগ-গুরু’। তিনি তাঁর জীবনে প্রথম বিনিয়োগ করেছিলেন ১১ বছর বয়সে। এরপর তাঁর পরবর্তী জীবনের সাফল্যের কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি।
কিন্তু এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এত কম বয়সে বিনিয়োগ শুরু করার পরও তিনি এক সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলেন, তাঁর আরও আগে থেকেই বিনিয়োগে মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল।
ওয়ারেন বাফেটের উদাহরণ দিয়ে এ রকম বয়স থেকেই বিনিয়োগ শুরু করতে উৎসাহিত করছি না। বরং বলতে চাইছি, তরুণ বয়স থেকেই আমাদের বিনিয়োগের মানসিকতা গড়ে তোলা উচিত। আমরা যে যা-ই করি না কেন, সেখান থেকে সঞ্চয় করে বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অনেক তরুণ আছেন, যাঁরা ছাত্রজীবন থেকে বা চাকরিতে ঢুকে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ পান। কিন্তু সঠিক তথ্য ও পরিকল্পনার অভাবে সেই সঞ্চয় কাজে লাগাতে পারেন না। এমন সব তরুণের জন্যই আমার কিছু পরামর্শ।
বিনিয়োগের চিন্তা তরুণ বয়সেই কেনবিনিয়োগের সঙ্গে পায়ে-পায়ে আসে ঝুঁকিও। প্রবীণ বয়সের তুলনায় তরুণ বয়সে ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য বা উপযোগিতা বেশি থাকে। তাই এ বয়সেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া দরকার। তা ছাড়া তরুণ বয়স থেকেই কেউ কমবেশি বিনিয়োগে যুক্ত থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়, অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। যা পরবর্তী জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ও আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনে সাহায্য করে।
সঞ্চয়ের অভ্যাসতরুণ বয়সেই আমাদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা অনেক বেশি জরুরি। বলতে গেলে, এটিই বিনিয়োগের পূর্বশর্ত। শুধু চাকরিই নয়, কেউ যদি টিউশনি করেন, কিংবা পরিবার থেকে অর্থ নিয়ে পড়াশোনা করেন, এ রকম অবস্থাতেও আমরা অযাচিত খরচ বাঁচিয়ে সঞ্চয় করতে পারি এবং এই সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রূপান্তর করতে পারি। আয়ের কত শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত, এটি নিয়েও অনেককে ভাবতে দেখা যায়। এটির আসলে নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই। তবে আমরা আয়ের কমপক্ষে ১০ শতাংশ সঞ্চয় করার পরিকল্পনা করতে পারি।
আরও পড়ুন‘অনেক চাকরি নিয়ে বসে আছি, কিন্তু লোক পাচ্ছি না’১৯ জানুয়ারি ২০২৫আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাআমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় আর্থিক বিষয় নিয়ে সবার পড়া বা জানার সুযোগ খুবই কম। অথচ এটি সবার জন্যই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা তরুণ বয়স থেকে আর্থিক বিষয়ে জানার সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। আমরা দেখি যে যেসব তরুণের মধ্যে আর্থিক বিষয়ে কমবেশি জানাশোনা আছে, তারা সঞ্চয় ও বিনিয়োগে অন্যদের চেয়ে বেশি আগ্রহী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স হচ্ছে। এটি বেশ কাজে আসছে। আমি মনে করি, প্রত্যেক তরুণেরই একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা উচিত। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানই তাদের অ্যাপের মাধ্যমে বাসায় বসে ইকেওয়াইসির মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা দিচ্ছে। ফলে সহজেই এফডিআর, ডিপিএসের মতো বিনিয়োগ সুবিধাগুলো নেওয়া যায়। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও দেশে এখন এই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। তরুণেরা এসব বিষয়ে আগ্রহী হলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয় হবেই। হতে পারে সেটি অনেক কম পরিমাণে। তবে, এখান থেকে তারা যা শিখবে, সেটি ভবিষ্যতের বড় বিনিয়োগে অনেক বেশি সাহায্য করবে।
কোথায় বিনিয়োগ করবকেউ যদি ঝুঁকি নিতে না চায়, তাহলে তাঁকে এমন খাত নির্বাচন করতে হবে, যেখানে ঝুঁকি নেই। এ ক্ষেত্রে জিরো রিস্ক বা শূন্য ঝুঁকির বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে আছে ‘গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ’। যেমন ট্রেজারি বিল, বিভিন্ন প্রকার বন্ড, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি। অল্প পরিমাণ ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এফডিআর কিংবা বন্ড কেনা যেতে পারে। তবে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার আগে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থা, তারল্য, ঋণমান (আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক) ইত্যাদি বিষয় অবশ্যই দেখে নিতে হবে। এগুলো ভালো অবস্থানে থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগেও ঝুঁকি কম।
আবার যাঁদের ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা আছে, তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করছেন, তারা ভালো করলে আপনি আয় করবেন, আবার তারা খারাপ করলে আপনাকেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এমন পরিস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখেই আপনাকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে আমাদের দেশের শেয়ারবাজার অনেকটাই অস্থিতিশীল। তাই এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এগোনো ভালো।
আরও পড়ুনবয়স ৩০ হওয়ার আগেই ধনী হতে চাইলে যে ৭টি পরামর্শ মেনে চলবেন২৫ ডিসেম্বর ২০২৩বিনিয়োগের বৈচিত্র্য থাকাও জরুরি। সব টাকা একধরনের খাতে বিনিয়োগ না করে ভিন্ন ভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা ভালো। এতে ঝুঁকি প্রশমন করা যায়। বিনিয়োগ টেকসই হয়।
এ বিষয়গুলো নিয়ে তরুণেরা পড়াশোনা করলে বিনিয়োগ নিয়ে আরও অনেক খুঁটিনাটি জানতে পারবেন, যা তাঁদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বিনিয়োগেও দক্ষ করে তুলবে।
অবৈধ ক্ষেত্র এড়িয়ে চলাসঠিক আর্থিক শিক্ষার অভাবে আমাদের দেশের অনেক তরুণকে প্রায়ই জুয়া কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনসহ আইনে নিষিদ্ধ বিষয়গুলোতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। দেশের আইনে অবৈধ বলে বিবেচিত, এমন কিছুই করা যাবে না। এগুলোর ফলে ভবিষ্যৎ আরও হুমকির মুখে পড়ে। মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগ হতে হবে বৈধ উপায়ে, যা আমাদের ভবিষ্যৎকে বরং সুরক্ষিত করবে।
তরুণদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ট্রেজারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস বিভাগের প্রধান মো.শাহীন ইকবাল
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর বয়স থ ক আম দ র পর ম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
জিনদের আহার্য
মহানবী (সা.) একবার তার সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন কিছু পাথর নিয়ে আসতে। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরায়রা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো নবীজি (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। নবীজি (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী? তিনি উত্তরে বললেন, সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে (সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে আলজাযিরার একটি নগরী) জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৭৮)
আরও পড়ুনইবলিস কি জিন নাকি ফেরেশতা১৬ মার্চ ২০২৫তাই কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে গোশত ফিরে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৫৮)
আর দুষ্ট জিন ও শয়তানরা খায় এমন খাবার, যাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না।
গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা প্রাণী আছে এবং তারা তাতে আরোহণ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোবর বা হাড় নাপাকি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করো না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮)
আরও পড়ুনকোরআন শুনে একদল জিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন০৬ আগস্ট ২০২৩