বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ভারতীয় কোম্পানি আদানির বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। বাংলাদেশ বিদ্যুতের দর হিসাব করার ক্ষেত্রে কয়লার দাম কমিয়ে ধরতে মৌখিকভাবে আদানিকে বলেছে। আদানি লিখিত প্রস্তাব জমা দিতে বলেছে। এরপর দুই পক্ষ আলোচনা করে দাম চূড়ান্ত করবে।

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে বিদ্যুৎ কেনা শুরু করে বাংলাদেশ। তবে সরবরাহ শুরুর আগেই আদানির ধরা কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়।

আরও পড়ুনবাংলাদেশকে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে আদানি পাওয়ার১৯ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে আদানি খরচের একটি হিসাব করে। সে অনুযায়ী বিল তৈরি করে। কিন্তু সেই বিল তৈরির ক্ষেত্রে কয়লার দাম বাড়িয়ে ধরা হয়। পিডিবি কয়লার চড়া দর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। বাংলাদেশের পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে দামে বিশ্ববাজার থেকে কয়লা কেনা হয়, তার চেয়ে কম দাম ধরার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। বছরখানেক সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কয়লার দাম ধরেছে তারা। তবে গত বছরের জুলাই থেকে আবার কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল জমা দিচ্ছে আদানি। এতে বাংলাদেশের পায়রা ও রামপালের চেয়ে আদানির কয়লার দর ২০ শতাংশের মতো বেশি পড়ছে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা কেনে বিশেষ ছাড়ে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কম হয়। সূত্র জানিয়েছে, আদানি বিশেষ ছাড়ে কয়লা কিনলেও বিদ্যুতের দাম ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ছাড় দিতে রাজি নয়।

পিডিবি সূত্র বলছে, পায়রা ও রামপালের চেয়ে প্রতি টন কয়লার দাম ১৫ থেকে ২০ ডলার বাড়তি চায় আদানি। পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিতে উল্লেখ করা সূত্রের সুযোগ নিয়ে এভাবে বাড়তি দাম চাইছে তারা। অবশ্য বিল পরিশোধের সময় কয়লার বাড়তি দাম আমলে নিচ্ছে না পিডিবি।

সূত্র বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের চুক্তিতে কয়লার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া (নিউক্যাসল ইনডেক্স) ও ইন্দোনেশিয়ার ইনডেক্স (সূচক) বিবেচনায় নেওয়ার কথা। এই দুই সূচকের গড় ধরে কয়লার দাম নির্ধারণ করা হবে। আদানি জুলাই থেকে সে অনুযায়ী বিল জমা দিচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া বিশ্বে কয়লার বড় রপ্তানিকারক। তাদের কয়লার দাম নিয়মিত অনলাইন সূচকে প্রকাশ করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঘোষিত দামের আড়ালে বিশেষ ছাড় থাকে। কয়লা কেনার সময় সমঝোতার ওপর ছাড়ের বিষয়টি নির্ভর করে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা কেনে বিশেষ ছাড়ে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কম হয়। সূত্র জানিয়েছে, আদানি বিশেষ ছাড়ে কয়লা কিনলেও বিদ্যুতের দাম ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ছাড় দিতে রাজি নয়।

আদানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আদানির সঙ্গে করা পিডিবির চুক্তিটি ‘অসম’। চুক্তিতে আদানিকে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চুক্তিতে উল্লেখ করা কয়লার দামের সূত্র দেখে মনে হয়েছে, বিদ্যুৎ নয়; মূলত কয়লা বিক্রি করেই ব্যবসা করতে চেয়েছে আদানি।

পিডিবি ও আদানির প্রতিনিধিদলের মধ্যে গত সপ্তাহে একটি অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে কয়লার দাম নিয়ে আলোচনা তোলে পিডিবি। বৈঠক সূত্র বলছে, কয়লার দামে আমদানি পর্যায়ে ছাড়ের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদানিকে আগের মতো কয়লার ন্যায্যমূল্য ধরার জন্য বলা হয়। তারা এ নিয়ে কোনো মতামত দেয়নি। লিখিত প্রস্তাবের পর আলোচনার কথা জানিয়েছে।

আরও পড়ুনআদানি নিয়ে প্রশ্ন করতেই ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ বলে এড়িয়ে গেলেন মোদি১৬ ঘণ্টা আগে

পিডিবির চেয়ারম্যান মো.

রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইন বৈঠকে পিডিবির প্রস্তাব আদানি নাকচ করেনি। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে বলেছে তারা। এরপর এ নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে যেটি চূড়ান্ত হবে, সেই হিসেবে বিল পরিশোধ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কয়লার দাম আগের মতো ধরেই বিল পরিশোধ করছে পিডিবি।

বিদ্যুতের দাম কত পড়ে

চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশে সরবরাহের ক্ষেত্রে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির খরচ হয়েছে প্রায় ১১ টাকা ৮৩ পয়সা। আর আদানির কাছ থেকে কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা। এ হিসাব কয়লার দামে ছাড় দেওয়ার পর। চলতি অর্থবছর থেকে আদানিকে যদি কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল পরিশোধ করা হয়, তাহলে ইউনিটপ্রতি দাম আরও বেশি পড়বে।

আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এই কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে পিডিবি।

আলোচনার মাধ্যমে যেটি চূড়ান্ত হবে, সেই হিসেবে বিল পরিশোধ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কয়লার দাম আগের মতো ধরেই বিল পরিশোধ করছে পিডিবি।পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দিনে সর্বোচ্চ দেড় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। শীতে চাহিদা কম থাকায় তিন মাস ধরে একটি ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন ৭৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সরবরাহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আদানিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে বলেছে পিডিবি। আদানিও বাড়াবে বলে জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বন্ধ থাকা ইউনিট চালু করে আদানি। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন মেরামতকাজ চলছে। শিগগিরই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়তে পারে।

পিডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দাম নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আদানিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে বলা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ কয়ল র দ ম ন য় কয়ল র ব র কয়ল উৎপ দ ত কয়ল ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিঙ্গা শিবিরে পানির সংকট তীব্র: এমএসএফ

কক্সবাজারে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১০ লিটার করে পানি পাচ্ছেন। এই পরিমাণ পানি জীবনধারণের প্রয়োজনের অর্ধেক। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বলেছে, পানি সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।

আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) টেকনাফে চলমান এই সংকটের কথা বলেছে। পাশাপাশি এমএসএফ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এসএমএফ বলেছে, উদ্বেগজনক হারে সংরক্ষণব্যবস্থা কমে আসায় পানির সংকট আরও কঠিন হয়েছে। টেকনাফ মূলত মজুদকৃত পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই বছর আশঙ্কাজনক হারে মজুদকৃত পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশে এমএসএফ-এর মিশন প্রধান আন্তোনিও কারাডোনা বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। টেকনাফে প্রতিদিন জনপ্রতি ১০ লিটার পানি পাওয়া যায়, যা একজন মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নানা রোগের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব থেকেই এই সংকটের তীব্রতা স্পষ্ট।’

নূর আলম নামের একজন রোহিঙ্গা তাঁর কষ্টের কথা এমএসএফকে শুনিয়েছেন। নূর আলম বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে পানিসংকট তীব্র হতে দেখছি, এখানে সাহায্য–সহযোগিতাও অনেক সীমিত। অনেককেই বাধ্য হয়ে অনেক দূরে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হয়, যা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষও।’

এমএসএফ বলেছে, জরুরি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকা, প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহব্যবস্থা আরও উন্নত ও দ্রুত করার সুযোগ আছে। কলেরার মতো পানিবাহিত রোগসহ নানাধরনের চর্ম রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এমএসএফ একটি বোরহোল, একটি পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহ সেবা শুরু করেছে এবং ক্যাম্পে ট্রাকের মাধ্যমে পানি সরবরাহ সেবা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এই জরুরি পদক্ষেপগুলো যদিও এ সংকটের সাময়িক সমাধান দেয়, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী ও পর্যাপ্ত নয়।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও দাতাসংস্থাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই পানি সরবরাহে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এমএসএফ। পাশাপাশি দায়িত্বশীল অংশীদারদের কাছে জবাবদিহি ও সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা বলেছে তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুনে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চলমান থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • চট্টগ্রাম ওয়াসায় চাকরি, বেতন ছাড়াও আছে সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা
  • ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহের নির্দেশ
  • ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
  • রোহিঙ্গা শিবিরে পানির সংকট তীব্র: এমএসএফ
  • ‘নিউজ মিডিয়া মনিটরিং সেবা’ চালু করবে বিএসইসি
  • সরবরাহ চুক্তিতে না আসায় শাস্তির মুখে চালকল মালিক
  • দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল জীবন, অবশেষে অভিশাপমুক্ত হলেন রিয়া
  • জি এম কাদের ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর স্থগিত