চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ ছাত্রীকে বহিষ্কারের ঘটনায় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নিন্দা
Published: 15th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ ছাত্রীকে বহিষ্কার এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি, সাহিত্যিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামে থাকা ভবনগুলোর নাম পরিবর্তনের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। শনিবার এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির এক সভায় ১১ ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়। এর প্রতিবাদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এই বিবৃতি দিয়েছে।
ছাত্র মৈত্রীর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গভীর রাতে শেখ হাসিনা হলের নামফলক ও হলের অভ্যন্তরে থাকা ভাস্কর্য ভাঙার চেষ্টার সময় পুরুষ শিক্ষার্থীরা জোরপূর্বক নারীদের হলে প্রবেশের ঘটনায় নিরাপত্তার স্বার্থে আপত্তি জানানো নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জনকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুধু নিরাপত্তার প্রশ্নে নারী শিক্ষার্থীরা হলে পুরুষ শিক্ষার্থীদের প্রবেশে আপত্তি তুলেছিলেন। সেই আপত্তিকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর করতে আসা পুরুষ শিক্ষার্থীরা অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী নারী শিক্ষার্থীদের “আওয়ামী লীগের দোসর” বলে গালাগালি করে। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সামনেই বাক্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অথচ প্রশাসন নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে সব পক্ষের বক্তব্য শোনা বা ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পর্যালোচনা ছাড়াই ১০ নারী শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ আগস্টের পর ছয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পতিত ফ্যাসিস্ট জমানার মতোই ভিন্নমত দমনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা হলের নামফলক ও ভাস্কর্য ভাঙার আবেদন জানানো নারী শিক্ষার্থীদেরই বহিষ্কার করা হলো। কারণ, তারা সংঘবদ্ধ পুরুষ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেখে নিরাপত্তার স্বার্থে আপত্তি জানিয়েছিল।
অপর দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছে ছাত্র মৈত্রী। তারা বলেছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামে থাকা ভবনগুলোর নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে নিরুৎসাহিত করার অপচেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুনপ্রক্টরকে লাঞ্ছনা ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, ১১ ছাত্রীসহ ১২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১১ ছ ত র র ঘটন আপত ত
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েটে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও হল খোলা, তদন্ত শুরু
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার তিনদিন পরও আতঙ্ক কাটেনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে সব হল। তবে, কিছু শিক্ষার্থী নিরাপত্তাহীনতার কারণে হল ত্যাগ করলেও অধিকাংশই হলে অবস্থান করছেন। যদিও পাঁচ দফা দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাগিয়ে দেওয়া তালা ঝুলছে কুয়েটের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনগুলোতে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে ক্যাম্পাসে।
হামলার নেপথ্যের ঘটনা ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ করতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখ উল্লিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করে বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের তত্ত্বাবধায়নে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ভিসি ঢাকায় অবস্থান করায় প্রোভিসি দায়িত্ব পালন করছেন।”
আরো পড়ুন:
ফুল দেওয়া নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের হাতাহাতি, আহত ২
বাগেরহাটে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষে আহত নেতার মৃত্যু
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে- ‘ছবিতে প্রতিবাদ, দাবিতে ঐক্য’। কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রক্তাক্ত কুয়েট কর্নার। আজ বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
এদিকে, কুয়েটের ভিসি, প্রোভিসি এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা নতুন ভিসি নিয়োগের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত মঙ্গলবার কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৫ দফা দাবি দেওয়া হলেও কুয়েট প্রশাসন সেটা পূর্ণাঙ্গ রূপে মানেনি। এ ঘটনায় কুয়েটের ভিসি, প্রোভিসি এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে বর্জন করা হয়েছে।
তারা আরো জানান, কুয়েট প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। যার কারণে তারা নতুন প্রশাসন চায়। শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। সেখানে নতুন ভিসি নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে।
কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, “আমাদের যে দাবিগুলো ছিল, তা মেনে নেওয়া হয়নি। আমরা চাই, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের যে অধ্যাদেশ আছে সেটাকে পরিবর্তন করে অর্ডিন্যান্স করে হবে। আমাদের ছাত্রশিবির বলে যে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে তা মিথ্যা ও ফেভরিকেটেড। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব নতুন ভিসি নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।”
কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. এম এ হাশেম বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। কিছু তথ্য প্রমাণ পেয়েছি। তদন্তের জন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলব। তবে প্রশাসনিক ভবন এবং একাডেমিক ভবনগুলো তালাবদ্ধ থাকায় কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণ করা হয়েছে। আশা করি, তারা শিগগিরই ক্লাসে ফিরবেন। তাদের সব দাবি তো পূরণ করেছি, এ কারণে আমি পদত্যাগ করছি না। শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কিতে আমি আঘাতপ্রাপ্ত হই। এছাড়া একদিন অবরুদ্ধ ছিলাম। চিকিৎসার জন্য আমি ঢাকায় অবস্থান করছি।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ