সংস্কার নিয়ে ঐক্যের প্রয়াস শুরু
Published: 15th, February 2025 GMT
ছয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরির প্রয়াস শুরু করল অন্তর্বর্তী সরকার। এ উদ্যোগকে সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অন্যদিকে সরকারের এই প্রয়াসকে একটি সূচনা পর্ব হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের আশা, খুব দ্রুতই সংস্কারের ব্যাপারে ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গতকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে প্রথম বৈঠক করে। এতে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানেরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক কমিটি, ইসলামী আন্দোলন, এলডিপি, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ২৭টি দল ও জোটের প্রায় ১০০ রাজনীতিক অংশ নেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে প্রথম ইনিংস বা প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। প্রথম পর্ব ছিল প্রস্তুতি পর্ব। আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো।
রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বেলা তিনটার পর থেকে প্রায় চার ঘণ্টা এই বৈঠক চলে। বৈঠকের পর তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁদের মনে হয়েছে, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকার কিছুদিন নানাভাবে চর্চা করবে। শেষ পর্যন্ত সব বিষয়ে হয়তো ঐকমত্য হবে না। তখন সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।
বৈঠক শেষে বিভিন্ন দলের নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভায় প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার কথা বলেছেন। এরপর একটা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। সেটাই আজকের বৈঠকের মূল কথা।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করি, খুব দ্রুত এই সংস্কারের যে ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে এবং সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একেবারে পজিটিভ কনস্ট্রাকটিভ কোনো আলোচনা আজকে হয়নি, সুযোগও ছিল না।’
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
বৈঠকে মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী, অলি আহমেদের নেতৃত্বে এলডিপি, সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহর নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্য, এসএম আলতাফ হোসেন ও সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বে গণফোরাম, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে গণসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের নেতৃত্বে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আবদুল বাছিদ আজাদ ও আহমেদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে খেলাফতে মজলিস, আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বে বিজেপি, নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাসদ, মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে এবি পার্টি, নুরুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ, মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে জাগপা, ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে এনপিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন।
এ ছাড়া নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক কমিটির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। অন্যরা হলেন আখতার হোসেন, সারজিস আলম ও সামান্তা শারমিন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলো ইতিমধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পুরো সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করে সরকার। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহসভাপতি করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছয় কমিশনের প্রতিবেদনগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের সঙ্গেও কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন।
সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যাতে আমরা নির্বাচনের পথে অগ্রসর হতে পারি।আলী রীয়াজ, সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনবিভিন্ন দলের নেতারা যা বলেননাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা যেটা বললেন, উনারা ওয়েব সাইট করবেন, সেখানে প্রস্তাবগুলো দেবেন। রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে গিয়ে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ চিহ্ন দেবে। কোনো দল হয়তো ৯৮টিতে টিক চিহ্ন দিল, আর কোনো দল দুটিতে টিক চিহ্ন দিল। এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা হবে, সরকার কিছুই বলবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়তো নিজেদের যে এজেন্ডা, সেটিই সরকার করবে।’
বৈঠক থেকে বের হয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো.
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, মতপার্থক্য আছে বলেই ঐকমত্য তৈরি করতে হবে। ঐকমত্যের ব্যাপারে সবাই সর্বাত্মকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এটাই বৈঠকের বড় অর্জন। এখন সংস্কারের বিষয়ে ন্যূনতম যে ঐক্য তৈরি হবে, সেটাই জাতীয় সনদ আকারে সামনে আসবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও জনগণের ঐক্যের জায়গা দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে। নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি মিলতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমে যেতে হবে, যেখানে ধৈর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের ৫৩ বছরের অসমাপ্ত কাজগুলো রয়েছে, সেগুলো সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে সমাপ্ত করতে পারব।’
সরকারের ঐক্য প্রচেষ্টা নিয়ে বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আপনাদের কোনো আলোচনায়, ছবিতে কোথাও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো অবদান ঠাঁই পায় না। তাহলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্যের জন্য সব দলের সহযোগিতা চান?’ কমিশনের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলো সবারই প্রস্তাব, সেগুলোর আলাদা তালিকা করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যেসব ভিন্ন প্রস্তাব, সেগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। তাহলে সময় বাঁচবে এবং দ্রুত নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে।
বৈঠকে আমন্ত্রিত কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, এমন লোকদেরও বৈঠকে দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের যেন আমন্ত্রণ না জানানো হয়, সে ব্যাপারে তিনি সরকারপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আশা করি, খুব দ্রুত সংস্কারের যে ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে, সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত নির্বাচন হবে। মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপিপ্রক্রিয়াটি দীর্ঘ করতে চাই না: আলী রীয়াজবৈঠক শেষে কমিশনের লক্ষ্য ও বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই, আমরা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক দল হিসেবে, নাগরিক হিসেবে, সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তার লক্ষ্যেই আজকের এই সূচনা। আমরা আশা করছি, জাতীয় ঐকমত্যের কাজ এখন শুরু হবে।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আলাদাভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলব, জোটগতভাবে কথা বলব এবং সম্ভাব্য লক্ষ্য হচ্ছে একপর্যায়ে হয়তো আবারও সবাইকে একত্রিত করব। এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ করতে চাই না। আমরা আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে এটা করতে পারব।’
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা বৈঠক কবে শুরু হবে এবং সংলাপ কত দিন চলবে। জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ দেওয়া হয়েছে ছয় মাস। সে ক্ষেত্রে কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব ঐকমত্যে পৌঁছানো। ছয়টি কমিশনের সারাংশ ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পর্যালোচনা করার জন্য তাদের সময় দিতে হবে। আমরা চাই অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে, কেননা সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যাতে করে আমরা নির্বাচনের পথে অগ্রসর হতে পারি।’
আলী রীয়াজ জানান, এ বৈঠকের লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রক্রিয়াটি কী হবে, সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা। এক অর্থে এটিকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হিসেবে বিবেচনা করা যায়। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্যে যে বিষয়গুলো খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করবে, সাহায্য করবে, অংশগ্রহণ করবে।
বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এ সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঐকমত য ত র ঐকমত য র দল র ন ত ন য নতম সরক র র র রহম ন বল ছ ন র র জন ব এনপ প রথম আবদ ল আহম দ ইসল ম এলড প
এছাড়াও পড়ুন:
আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় আটকে যায় সব সংস্কার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবগত। অনেক আলোচনা হয়েছে। এমনকি তা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একধরনের ঐকমত্যও আছে। কিন্তু শেষমেশ কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না।
দেশে নীতিপ্রণেতা, পরামর্শক ও বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে একধরনের দূরত্ব আছে। এমনকি বিদ্যায়তনের মানুষের কথা রাজনীতিবিদেরা মেনে নিলেও কিছু হয় না। তাতে শেষমেশ দেখা যায়, আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় গিয়ে সব সংস্কার আটকে যায়।
অর্থনীবিদ সেলিম জাহানের দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বই দুটির মধ্যে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ এবং মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ: কনটেমপোরারি ডেভেলপমেন্ট ইস্যুস’।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। সভাপতিত্ব করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। সঞ্চালনা করেন বাঙলার পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ। আর বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন প্রমুখ।
রেহমান সোবহান বলেন,‘ দেশের সমস্যা কী এবং তার সমাধনই-ই বা কী, তা নিয়ে এক ধরনের ঐকমত্য আছে। আমরা জানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করা দরকার। কিন্তু শেষমেশ কোনোটি হয় না।’ কেন বারবার অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় না, এখন তার ভেতরের গল্প তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
পৃথিবীর অনেক দেশে সহিংসতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে এবং তারপর তারা অনেকেই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেলিম জাহান বৈশ্বিক পরিসরে কাজ করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে রওনক জাহান আহ্বান জানান, তিনি যেন সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে লেখেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে আবার কার্যকর করা যায়, তা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে লেখার আহ্বান জানান।
সংস্কার প্রসঙ্গে সব সরকারই বিশেষজ্ঞদের কথা অগ্রাহ্য করেছে বলে অভিযোগ করেন মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২৯টি টাস্কফোর্স গঠনে রেহমান সোবহান যুক্ত ছিলেন। টাস্কফোর্সগুলোর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতি ও প্রশাসনপ্রক্রিয়ার নানা সমস্যার সমাধান করা। টাস্কফোর্সগুলোয় ছিলেন সেই সময়কার দেশের ২৫৫ জন সেরা পেশাদার ব্যক্তি। কিন্তু সেই টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সম্ভবত পড়েও দেখেননি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান চলমান সংস্কারের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কারের চাপ দেওয়ার জন্য সমাজে নানা রকম গোষ্ঠী আছে, বিষয়টি সে রকম নয়। বরং নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী ছাড়া সমাজে আরও কেউ সংস্কার চায়, তেমনটা মনে হচ্ছে না।
সংস্কার প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য দরকার, তা না হলে কোনো উদ্যোগই আলোর মুখ দেখবে না। এর আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলেও সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিছু কাজ সেই সরকার করেছিল; কিন্তু শেষমেশ তার কিছুই টেকেনি।
বই দুটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেলিম জাহান বলেন, এগুলো গবেষণাধর্মী বই নয়। একদম সাধারণ মানুষ যেন পড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল বুঝতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে এই বই দুটি লেখা।
আলোচনায় প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, বাংলোদেশের অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বইটি সাংবাদিকদের পড়া উচিত। উন্নয়ন ও অগ্রগতির মধ্যে কী ফারাক, তা বোঝার জন্য এই বই পড়া জরুরি।