Samakal:
2025-02-22@09:17:52 GMT

নারীর মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে

Published: 15th, February 2025 GMT

নারীর মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে

সমকাল : প্রাইম ব্যাংকের উইমেন ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই।

তামান্না কাদরী : দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাংকিং চাহিদা পূরণে ৩০ বছর আগে যাত্রা করে প্রাইম ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর নারীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে নারীকে সব ব্যাংকিং সেবা দিতে ২০২০ সালে প্রাইম ব্যাংক চালু করে ‘নীরা’ প্ল্যাটফর্ম। এ উদ্যোগের লক্ষ্য বয়স, পেশা, আয় বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সব নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, আর্থিক সক্ষমতা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। 
বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের ‘নীরা’র মোট গ্রাহক প্রায় ৩ লাখ। এর আওতায় নারীর সঞ্চয়, বিনিয়োগ, দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা হতে কিছু বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ২০২৪ সালে প্রাইম ব্যাংক দেশব্যাপী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচির আয়োজন করে। এ আয়োজনে প্রাইম ব্যাংকের দেশব্যাপী ১৪৬টি শাখার মাধ্যমে ৪৫০ জন নারী উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফলে নারীরা ব্যাংকিং ও আর্থিক বিষয়ে আরও সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করছেন।

সমকাল : নারীর জন্য বিশেষায়িত সেবা চালুর কারণে তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ছে?

তামান্না কাদরী : নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। প্রাইম ব্যাংক নারীর জন্য বিশেষায়িত সঞ্চয়, ঋণ ও ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা চালু করেছে, যা তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সহজ করেছে। নারীর জন্য আমাদের ব্যাংকের বিশেষ সুবিধার মধ্যে রয়েছে– প্রাইম উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট ও হাসানাহ উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট। যেখানে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদ হারে নারীরা সহজে সঞ্চয় করতে পারেন এবং বিনা সুদে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা উপভোগ করেন। লেনদেন দ্রুত ও সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা ‘প্রাইম পে’ চালু করেছে প্রাইম ব্যাংক। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা নিতে আছে ‘নীরা সার্ভিস কর্নার’। নারীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে চালু আছে ‘নীরা অনলাইন
লার্নিং’ প্ল্যাটফর্ম। 

সমকাল : বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলা হয়, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া খুব কঠিন? আসলেই কি তাই? যদি তাই হয়, তাহলে সমাধান কী?

তামান্না কাদরী :  নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। যেমন– জামানতের অভাব, অভিজ্ঞতার ঘাটতি, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও জটিল ব্যাংকিং প্রক্রিয়া। সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত রাখা এবং প্রশিক্ষণ থাকলে নারীর ঋণপ্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়ে। 
সরকার ও বিভিন্ন ব্যাংক এখন নারী উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ও স্বল্প সুদে বিশেষ ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকও নারী এমএসএমই উদ্যোক্তাদের সহজ ও নমনীয় শর্তে ঋণ দিচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রাইম ব্যাংক নিয়ে এসেছে প্রাইম আঁচল লোন। যেখান থেকে নারী উদ্যোক্তাদের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্ম লোন দেওয়া হয়, যার সুদহার মাত্র ৫ শতাংশ। সরকারি নীতিগত সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ অনুমোদন ও ব্যাংকের ইতিবাচক মনোভাব নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করতে পারে। 

সমকাল : নারীর মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা কেমন? আপনার কর্ম অভিজ্ঞতা কী বলে?

তামান্না কাদরী : আর্থিক স্বাধীনতা ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিতে নারীর মধ্যে এখন সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে। আগে নারীরা পরিবারের অর্থ ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন তারা ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সঞ্চয়ের বিষয়ে অনেক সচেতন। আমাদের প্রাইম উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং হাসানাহ উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট চালু করে অনেক নারী সঞ্চয় করছেন। এ ছাড়া উদ্যোক্তা নারীরা ব্যবসায়িক মূলধন বাড়াতে এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের ‘প্রাইম আঁচল ঋণ’ গ্রহণ করে অনেক নারী উদ্যোক্তা তাদের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ আরও সুসংগঠিত করছেন। এমনকি প্রাইম উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং হাসানাহ উইমেনস সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে নারীরা সঞ্চয়ও করছেন। 
অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, সঠিক আর্থিক শিক্ষা, সহজলভ্য ব্যাংকিং সেবা এবং বিশেষায়িত সঞ্চয় পণ্য থাকায় নারীর মধ্যেও সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে। ফলে নারীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আর্থিক সচেতন, স্বাবলম্বী ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় দক্ষ হয়ে উঠছেন।

সমকাল : নারীর ব্যাংকিং নিয়ে প্রাইম ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই।

তামান্না কাদরী : প্রাইম ব্যাংক নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়ন আরও সহজ করতে নতুন ও উদ্ভাবনী ব্যাংকিং সেবা চালুর পরিকল্পনা করছে। ভবিষ্যতে নারীর জন্য আরও নমনীয় ঋণ সুবিধা, উন্নত ডিজিটাল ব্যাংকিং, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সাক্ষরতা কার্যক্রম সম্প্রসারণে আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমাদের লক্ষ্য নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষায়িত বিনিয়োগ ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা, যাতে তারা আরও বেশি ব্যবসায়িক সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। ‘প্রাইম আঁচল ঋণ’-এর আওতা আরও বাড়িয়ে বিনিয়োগ সহজ ও স্বল্প সুদের নতুন ঋণপণ্য চালু করার পরিকল্পনা আছে।
এ ছাড়া ঘরে বসে সব ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে ডিজিটাল ব্যাংকিং ইকোসিস্টেমে নতুন নতুন সেবা যোগ করা, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহুমুখী প্রশিক্ষণ চালু এবং ২০২৫ সালে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। 
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাকির হোসেন

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র র জন য ব যবস য় ক আর থ ক স আম দ র করছ ন উইম ন সমক ল র আওত

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানিদের বাংলাদেশ ভ্রমণে ‘ভিসা ক্লিয়ারেন্স’ লাগবে না

পাকিস্তানের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন আর ভিসার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হবে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আগে বাংলাদেশের ভিসার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স নিতে হতো পাকিস্তানিদের। এই ক্লিয়ারেন্স ছাড়া তাদের ভিসা দেওয়া সম্ভব ছিল না।

সম্প্রতি এই নিয়ম প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং এখন পাকিস্তানিরা ক্লিয়ারেন্স ছাড়াই ভিসা পাচ্ছেন।

২০২৪ সালে পাকিস্তানিদের জন্য ২ হাজার ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই ভিসা ইস্যু করা হতো। এখন এই নিয়ম বাতিল হয়েছে।

এদিকে, পাকিস্তানও বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে। সম্প্রতি পাকিস্তান ১২৬টি দেশের জন্য ভিসা ফি মওকুফ করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে।

পাকিস্তানি অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকরা যাতে সহজেই বাংলাদেশে আসতে পারেন, সে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের বহিরাগমন শাখার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগে একজন পাকিস্তানি অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নাগরিককে বাংলাদেশি ভিসা পেতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। এমনও হয়েছে ভিসাপ্রার্থীর আবেদন অনুমোদন পেতে বছরও পার হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তিনি বলেন, “আগে এক জন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নাগরিক সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে ভিসার আবেদন করার পর তা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতো। সেখান থেকে সেটা আসত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এই মন্ত্রণালয় সেটা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠাত একটি গোয়েন্দা সংস্থায়। সেই গোয়েন্দা সংস্থা ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পর ওই ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রবেশ করার ভিসা বা অনুমতি পেতেন।”

বর্তমান সরকারের এ উদ্যোগের ফলে এখন আর সময়ক্ষেপণ হবে না। পাকিস্তানি বা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অন্য কোনো দেশের নাগরিক বাংলাদেশে আসার ভিসা পাবেন কি না, সেটা শুধু সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের বিবেচনার বিষয় হিসেবে থাকবে। ভিসা দেওয়া এবং প্রত্যাখ্যান করার এখতিয়ার এখন থেকে তাদের হাতেই থাকবে।

পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা ইস্যু সহজ করা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের ভিসাপ্রাপ্তি সহজ করতে এর আগে সুরক্ষা সেবা বিভাগের জারি করা (১১/০২/২০১৯ তারিখ) আদেশটি বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে পাকিস্তানি অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অন্য দেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদন বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশন সরাসরি নিষ্পত্তি করতে পারবে।

এর আগে ২০১৯ সালে পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত যেকোনো দেশের নাগরিককে ভিসা দেওয়া প্রসঙ্গে জারি করা আদেশে বলা হয়েছিল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত পৃথিবীর যেকোনো দেশের নাগরিককে সুরক্ষা সেবা বিভাগের ‘অনাপত্তি’ নিয়ে ভিসা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হলো।

ঢাকা/হাসান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ