নয়াদিল্লিকে এফ-৩৫ দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ক্ষুব্ধ ইসলামাবাদ
Published: 15th, February 2025 GMT
ভারতের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানসহ অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। পাকিস্তান এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ভারতকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম দিলে দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।
নয়াদিল্লিকে অত্যাধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম দিতে ওয়াশিংটনের ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শুক্রবার বিবৃতি দেয় ইসলামাবাদ। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপে এই অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্যহীনতা আরও তীব্র হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি ফেরানোর প্রচেষ্টায় তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি সামগ্রিক ও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান ঠিক করার আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের মুখপাত্র এ বিষয়ে বলেন, এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি সামগ্রিক ও বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। বাস্তব পরিস্থিতিতে অগ্রাহ্য করে একপক্ষীয় অবস্থান নিলে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
ট্রাম্প ভারতের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম বিক্রির যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা নিয়ে চুক্তি হলে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্রদেশ এবং ইসরায়েল ও জাপানের বাইরে ভারত এফ-৩৫ পাবে। এফ-৩৫ বিশ্বের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে একটি। এই যুদ্ধবিমান শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে (স্টিলথ) লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এটা পেলে ভারতের সামরিক সক্ষমতা জোরদার হবে।
‘সন্ত্রাসীদের’ বিচার নিয়ে প্রতিবাদট্রাম্প ও মোদির যৌথ সংবাদ সম্মেলন নিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে ২০০৮ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় অভিযুক্ত ‘সন্ত্রাসীদের’ বিচারের আওতায় আনতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি নিয়েও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তান নিয়ে এ ধরনের বিবৃতি একপক্ষীয়। বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এফআর টাওয়ারে আগুন : ৬ বছরেও শুরু হয়নি আনুষ্ঠানিক বিচার
বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কের ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে দায়ের করা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার ৬ বছরেও শুরু হয়নি। কবে শুরু হয়ে মামলা শেষ হবে বলছে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা আশা করছেন, বিচার শুরু হলে সাক্ষী হাজির করে মামলা শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ২৬ জন প্রাণ হারান। আহত হন ৭১। সেই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার প্রায় তিন বছর ৯ মাস পর ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর মামলাটি তদন্ত শেষে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন ডিবি পুলিশের গুলশান জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সমীর চন্দ্র সূত্রধর। তবে রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর মামলাটির ধার্য তারিখ ছিলো। ওই দিন চার্জশিটটি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তবে আদালত চার্জশিটটি গ্রহণ না করে মামলাটি পুলিশ বুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
এরপর পিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করে। গত বছরের ২২ জানুয়ারি মামলাটি তদন্ত করে আদালতে একই আসামিদের অভিযুক্ত করে ও লিয়াকত আলী খান মুকুলকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই এর ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) রফিকুল ইসলাম।
গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত পিবিআই'র দেয়া ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন।
চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন-এফআর টাওয়ার ভবনের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকা এস এম এইচ আই ফারুক, তাজভিরুল ইসলাম, সেলিম উল্লাহ, এ এ মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আমিনুর রহমান, মিসেস ওয়ারদা ইকবাল ও রফিকুল ইসলাম। এদের মধ্যে কাজী মাহমুদুল নবী এবং এস এম এইচ আই ফারুক মারা গেছেন।
আসামিদের মধ্যে ফারুক জমির মূল মালিক। বিএনপি নেতা তাজভীরুল ইসলাম ভবন পরিচালনা কমিটির সভাপতি। অপর ছয়জন ভবন পরিচালনা কমিটির সদস্য।
গত বছর মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। মামলাটি ঢাকার ৯ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাসরুর সালেকীনের আদালতে এস এম এইচ আই ফারুকের মৃত্যু প্রতিবেদন এবং চার্জশুনানির পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটি এস এম এইচ আই ফারুকের মৃত্যু প্রতিবেদন এবং চার্জশুনানির জন্য ছিলো। তবে পুলিশ এস এম এইচ আই ফারুকের মৃত্যু প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এজন্য আগামি ২৭ এপ্রিল মৃত্যু প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, “মামলাটি দুই দফা তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট এসেছে। মামলা বিচারের জন্যও প্রস্তুত হয়ে গেছে। চার্জগঠন করে বিচার শুরু হবে। এক আসামি মারা গেছেন। তার মৃত্যু প্রতিবেদন আসেনি। প্রতিবেদন আসলে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু হবে। এরপর আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সাক্ষীদের হাজির করে যতদ্রুত সম্ভব মামলার বিচারকাজ শেষ করার।”
আসামি তাজভীরের আইনজীবী মাজেদুর রহমান মামুন বলেন, “ভবনে ২২ তলার ৩টি ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন তাজভীর। আগুন লেগেছে ৮ম তলা থেকে। উনি তিনটি মাত্র ফ্ল্যাটে মালিক। উনি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ভবন নির্মাণসহ কোনো অনিয়মের সঙ্গে ওনার সংশ্লিষ্টতা নেই। আমরা আশা করি, চার্জগঠনের সময় উনি অব্যাহতি পাবেন। তারপরও যদি চার্জগঠন হয়ে যায় আইনি লড়াই করে তাকে খালাসের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এতে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।”
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কে ফারুক রূপায়ন (এফআর) টাওয়ারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ঘটনাস্থলে ২৫ জন ও হাসপাতালে একজন নিহত হন। আহত হন ৭১ জন। ওই ঘটনায় বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত ৩০ মার্চ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
ঢাকা/টিপু