Samakal:
2025-02-23@08:43:32 GMT

এখনও গেল না বিচারবহির্ভূত সালিশ

Published: 15th, February 2025 GMT

এখনও গেল না বিচারবহির্ভূত সালিশ

মৌলভীবাজারের সেই গৃহবধূ নুরজাহানের কথা কি মনে আছে? যিনি সমাজপতিদের ষড়যন্ত্রমূলক সালিশের রায়ে পাথরের আঘাত ও অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন। সময় বদলেছে, ফতোয়াবাজি কমেছে। কিন্তু নতুন সময়ে নতুন কায়দায় নির্যাতিত হচ্ছে নারী। পরপর দু’বার সাফ চ্যাম্পিয়নের গৌরব এনে দেওয়া নারী ফুটবলাররা অপমানে কাঁদছেন। ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন একজন নারী ফুটবলার। সম্প্রতি জয়পুরহাট ও দিনাজপুর নারী ফুটবল দলের খেলা আয়োজন ভন্ডুল, নায়িকা অপু, পরীমণি ও মেহজাবিন চৌধুরীকে শোরুম উদ্বোধনে বাধা  প্রমাণ করে, নারীর চলার পথ এখনও অমসৃণ। 

যে দেশে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত, সেখানে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ঘটনা সংবিধানের ১৯ (সুযোগের সমতা), ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮ (ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য) অনুচ্ছেদগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে এটি দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও), সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

অবৈধ সালিশের পর অসহায় নারীর আত্মহত্যার ঘটনাও থামেনি। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আইন ও বিচারবহির্ভূত সালিশের ১১টি ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ঘটেছে ৪টি ঘটনা। এর মধ্যে রয়েছে– মাদারীপুরের শিবচরে কিশোরীকে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ধর্ষণ, গর্ভপাত; সালিশে প্রেমিকের প্রেম অস্বীকার এবং প্রেমিকের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের সিদ্ধান্ত। কয়েক দিন পর কিশোরী আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় থানায় আত্মহত্যা মামলা এবং কয়েকজন সালিশকারকেও আসামি করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ, অন্তঃসত্ত্বা ও সালিশ। এত নির্যাতন সইতে না পেরে মেয়েটির বিষপানে আত্মহত্যা। থানায় ধর্ষণ মামলা হলেও এখন পর্যন্ত আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা হয়নি।

ময়মনসিংহে ধর্ষণের শিকার কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হলে সালিশের মাধ্যমে তাঁকে গর্ভপাত ও বাড়িছাড়া করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। অভিযুক্তকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়; ৮০ হাজার টাকা ভুক্তভোগীকে দেওয়া হলেও বাকি টাকা এখনও অপরিশোধিত। ধর্ষণের ঘটনায় মামলাও হয়নি।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দিতে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় ভুক্তভোগী কিশোরীসহ তাঁর পরিবারকে। এ ক্ষেত্রেও সালিশের মাধ্যমে ‘সমাধান’-এর চেষ্টা চলে। সালিশের পর ধর্ষণ মামলা হয়েছে; কিন্তু হত্যাচেষ্টা মামলা এখনও হয়নি।
প্রতিটি ঘটনায়ই ভুক্তভোগী কিশোরী। আর দু’জন কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। এসব ঘটনায়  প্রথমে সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে, যখন সমাধান হয়নি তখন মামলা করা হয়েছে। যদি সমাধান হয়ে যেত, তাহলে ঘটনাটি হয়তো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হতো না। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনা এবং এ-সংক্রান্ত সালিশের সংখ্যা অনেক বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ সালিশের ঘটনায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী সালিশকারদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না।

ধর্ষণসংক্রান্ত ঘটনা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ পরিবার প্রান্তিক শ্রেণির। ঘটনা ঘটার পর আইনসংক্রান্ত সচেতনতা না থাকা এবং ‘সম্ভ্রমহানির ভয়ে’ অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না ধর্ষণ-পরবর্তী কী পদক্ষেপ নেবে। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে গ্রামের মাতবর শ্রেণি ও স্বার্থান্বেষী মহল বোঝাতে থাকে, আইনের দ্বারস্থ হলে অনেক ঝামেলা। তারা সালিশ করে বিচার পাইয়ে দেবে। বিচার করিয়ে দেওয়ার নামে সালিশকারীরা দুই পক্ষ থেকে কমিশনও নেন। এতকিছুর পরও সালিশের পুরো টাকা ভুক্তভোগীর পরিবার পায় না। জমি বা আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধে সব পক্ষের সম্মতিতে সালিশ হতে পারে। কিন্তু ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ নেই। মানবাধিকার কর্মীরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, আইন ও বিচারবহির্ভূত সালিশের বিরুদ্ধে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার ও  ধর্ষণসংক্রান্ত আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রের দিক থেকে দৃশ্যমান কার্যক্রম নজরে আসছে না।
শিশু ও নারীর প্রতি নির্যাতন রোধে আইনানুগ সালিশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পারিবারিক সমস্যা সমাধানে সালিশে আদালতেরও অনুমোদন আছে।  ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে সালিশের আয়োজন বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইনের প্রতি অবজ্ঞা ও আস্থাহীনতাই প্রকাশ করে।
কেবল অবৈধ সালিশ বন্ধ নয়; নারী ফুটবলার কিংবা চিত্রনায়িকাদের জনপরিসরে অংশগ্রহণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায়ও অন্তর্বর্তী সরকারের আশু দৃষ্টি প্রয়োজন। অন্যথায় অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে।

তানিয়া খাতুন: মানবাধিকার কর্মী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘটন য় আইন র র ঘটন ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

এ বছরই নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে: শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, এ বছরই নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। বিএনপির খেলা এখনও দেখে নাই। শুধু কয়টা জনসভা শুরু হয়েছে।

শনিবার বিকেলে পঞ্চগড় জেলা শহরের সড়ক জনপদের মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন তিনি। নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণাসহ নানা দাবিতে এ সভার আয়োজন করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ভাই আপনি ভালো লোক, জ্ঞানীগুণী মানুষ, দেশে-বিদেশে আপনার সুনাম আছে, এদের পাল্লায় পড়িয়েন না, বিএনপিকে রাস্তায় নামায়েন না, যদি একবার রাস্তায় নামে....। ফুলের মালা দিয়ে আপনাকে বরণ করেছি, ফুলের মালা দিয়েই বিদায় করতে চাই।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৭ বছরে ৬০ লাখ মামলার আসামি হয়েছে। বাড়িতে ঘুমাতে পারে নাই। পঞ্চগড়ের ছেলেটাই বাঁচার জন্য ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালিয়েছে। সে ছাত্রদলের, যুবদলের, শ্রমিক দলের, কৃষক দলের বা বিএনপির। আমার বোনটা, একা তার সন্তানকে রেখে গিয়েছিল, স্বামীর দেখা পায়নি, কখনো বকে নাই। কয়টা ছেলে নামলো, কয়টা, এতই যদি শক্তি, এতই যদি ক্ষমতা, তাহলে ইলেকশন করেন না কেন, বিরোধিতা করেন কেন? পার্টি বানাবেন, ঘোষণা করবেন, সরকার সমর্থন দেবে, তারপর বুঝে দেখবেন ইলেকশন করবেন কিনা, বিএনপিকে চিনেন নাই এখনও।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন দলটির পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, পঞ্চগড় সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রিনা পারভিন ও রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস শেখ, মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজল, আদম সূফি, এম এ মজিদসহ আরও অনেকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাহিদ উপদেষ্টার পদ ছাড়বেন মঙ্গলবার, দল ঘোষণা পরদিন
  • পোপ ফ্রান্সিসের অবস্থা ‘সঙ্কটাপন্ন’
  • এ বছরই নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে: শামসুজ্জামান দুদু
  • জুলাই আন্দোলন চলাকালে ধর্ষণের অভিযোগ
  • আরও ৬ জিম্মিকে ফেরত দিল হামাস
  • গবেষণা ও অনুবাদে অনেকটাই পিছিয়ে
  • সুরক্ষিত বন্দরের পথে এখনও চার বাধা
  • ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ হামলাকারিরা চিহ্নিত!
  • আমরা কারও দাবার ঘুঁটি হব না: জামায়াত আমির
  • গ্রামে ঋণ পেতে ব্যাংকের চেয়ে এনজিওতে ভরসা