Samakal:
2025-04-15@10:58:39 GMT

এখনও গেল না বিচারবহির্ভূত সালিশ

Published: 15th, February 2025 GMT

এখনও গেল না বিচারবহির্ভূত সালিশ

মৌলভীবাজারের সেই গৃহবধূ নুরজাহানের কথা কি মনে আছে? যিনি সমাজপতিদের ষড়যন্ত্রমূলক সালিশের রায়ে পাথরের আঘাত ও অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন। সময় বদলেছে, ফতোয়াবাজি কমেছে। কিন্তু নতুন সময়ে নতুন কায়দায় নির্যাতিত হচ্ছে নারী। পরপর দু’বার সাফ চ্যাম্পিয়নের গৌরব এনে দেওয়া নারী ফুটবলাররা অপমানে কাঁদছেন। ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন একজন নারী ফুটবলার। সম্প্রতি জয়পুরহাট ও দিনাজপুর নারী ফুটবল দলের খেলা আয়োজন ভন্ডুল, নায়িকা অপু, পরীমণি ও মেহজাবিন চৌধুরীকে শোরুম উদ্বোধনে বাধা  প্রমাণ করে, নারীর চলার পথ এখনও অমসৃণ। 

যে দেশে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত, সেখানে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ঘটনা সংবিধানের ১৯ (সুযোগের সমতা), ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮ (ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য) অনুচ্ছেদগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে এটি দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও), সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

অবৈধ সালিশের পর অসহায় নারীর আত্মহত্যার ঘটনাও থামেনি। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আইন ও বিচারবহির্ভূত সালিশের ১১টি ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ঘটেছে ৪টি ঘটনা। এর মধ্যে রয়েছে– মাদারীপুরের শিবচরে কিশোরীকে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ধর্ষণ, গর্ভপাত; সালিশে প্রেমিকের প্রেম অস্বীকার এবং প্রেমিকের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের সিদ্ধান্ত। কয়েক দিন পর কিশোরী আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় থানায় আত্মহত্যা মামলা এবং কয়েকজন সালিশকারকেও আসামি করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ, অন্তঃসত্ত্বা ও সালিশ। এত নির্যাতন সইতে না পেরে মেয়েটির বিষপানে আত্মহত্যা। থানায় ধর্ষণ মামলা হলেও এখন পর্যন্ত আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা হয়নি।

ময়মনসিংহে ধর্ষণের শিকার কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হলে সালিশের মাধ্যমে তাঁকে গর্ভপাত ও বাড়িছাড়া করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। অভিযুক্তকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়; ৮০ হাজার টাকা ভুক্তভোগীকে দেওয়া হলেও বাকি টাকা এখনও অপরিশোধিত। ধর্ষণের ঘটনায় মামলাও হয়নি।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দিতে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় ভুক্তভোগী কিশোরীসহ তাঁর পরিবারকে। এ ক্ষেত্রেও সালিশের মাধ্যমে ‘সমাধান’-এর চেষ্টা চলে। সালিশের পর ধর্ষণ মামলা হয়েছে; কিন্তু হত্যাচেষ্টা মামলা এখনও হয়নি।
প্রতিটি ঘটনায়ই ভুক্তভোগী কিশোরী। আর দু’জন কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। এসব ঘটনায়  প্রথমে সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে, যখন সমাধান হয়নি তখন মামলা করা হয়েছে। যদি সমাধান হয়ে যেত, তাহলে ঘটনাটি হয়তো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হতো না। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনা এবং এ-সংক্রান্ত সালিশের সংখ্যা অনেক বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ সালিশের ঘটনায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী সালিশকারদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না।

ধর্ষণসংক্রান্ত ঘটনা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ পরিবার প্রান্তিক শ্রেণির। ঘটনা ঘটার পর আইনসংক্রান্ত সচেতনতা না থাকা এবং ‘সম্ভ্রমহানির ভয়ে’ অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না ধর্ষণ-পরবর্তী কী পদক্ষেপ নেবে। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে গ্রামের মাতবর শ্রেণি ও স্বার্থান্বেষী মহল বোঝাতে থাকে, আইনের দ্বারস্থ হলে অনেক ঝামেলা। তারা সালিশ করে বিচার পাইয়ে দেবে। বিচার করিয়ে দেওয়ার নামে সালিশকারীরা দুই পক্ষ থেকে কমিশনও নেন। এতকিছুর পরও সালিশের পুরো টাকা ভুক্তভোগীর পরিবার পায় না। জমি বা আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধে সব পক্ষের সম্মতিতে সালিশ হতে পারে। কিন্তু ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ নেই। মানবাধিকার কর্মীরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, আইন ও বিচারবহির্ভূত সালিশের বিরুদ্ধে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার ও  ধর্ষণসংক্রান্ত আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রের দিক থেকে দৃশ্যমান কার্যক্রম নজরে আসছে না।
শিশু ও নারীর প্রতি নির্যাতন রোধে আইনানুগ সালিশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পারিবারিক সমস্যা সমাধানে সালিশে আদালতেরও অনুমোদন আছে।  ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে সালিশের আয়োজন বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইনের প্রতি অবজ্ঞা ও আস্থাহীনতাই প্রকাশ করে।
কেবল অবৈধ সালিশ বন্ধ নয়; নারী ফুটবলার কিংবা চিত্রনায়িকাদের জনপরিসরে অংশগ্রহণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায়ও অন্তর্বর্তী সরকারের আশু দৃষ্টি প্রয়োজন। অন্যথায় অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে।

তানিয়া খাতুন: মানবাধিকার কর্মী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘটন য় আইন র র ঘটন ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৭, আহত ২৯

ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ রবিবার (১৩) রাতের হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২৯ জন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। 

সানার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রবিবার রাতে রাজধানীর কাছে একটি সিরামিক কারখানায় বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে ৭ জন নিহত এবং আরো অন্তত ২৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পাঁচজন শিশু এবং একজন নারী রয়েছেন। নিহতরা কারখানার শ্রমিক এবং এর পাশের বাড়ির বাসিন্দা।

আরো পড়ুন:

ইউক্রেনে সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৩৪, ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বললেন ট্রাম্প

মার্কিন দূতাবাসের কড়া বার্তা
যে কারণে কখনো যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারবেন না

এদিকে হুতিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, হাজ্জাহ গভর্নরেটের আকাশসীমায় একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। 
 
হুতিদের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, হাজ্জাহ গভর্নরেটের আকাশসীমায় এমকিউ-৯ মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী গত ১৫ মার্চ থেকে হুতিদের ওপর বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে।  লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে হুতিদের আক্রমণ বন্ধ করার লক্ষ্যে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে এই অভিযান বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এদিকে হুতি গোষ্ঠী বলেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা লোহিত সাগরের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে এবং তাদের বাহিনী হামলার জবাব দেবে।

এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে ইরান সমর্থিত হুতিরা। ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চলই এখন তাদের দখলে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে এর প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে তারা ১০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে।

এরপর হুতিদের থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে হামলা শুরু হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তাই নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে আবারো হুতিদের ওপর হামলা জোরদার করার নির্দেশ দেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনুশোচনা নেই, প্রতিটি অভিজ্ঞতা ছিল একটি শিক্ষা: বাঁধন
  • বাইরে জীবন সহজ কিন্তু ভেতরে নীরবে ভাঙাগড়া চলে: বাঁধন
  • ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৭, আহত ২৯
  • ওয়াক্ফ আইন ইস্যুতে থমথমে মুর্শিদাবাদ, আতঙ্ক 
  • ক্ষমতায়ন মানে অংশগ্রহণ নয় অংশীদারিত্ব কোথায়?
  • নববর্ষের সাতসকাল
  • আমার দেখা সাংগ্রাই
  • মায়ামির মায়া ছাড়তে পারছেন না মেসি
  • অবিরাম কাজ করেও যারা কোনো নাম-দাম পান না
  • চেন্নাই প্লে’অফ খেলবে, দাবি ব্যাটিং কোচের