Samakal:
2025-02-22@18:02:17 GMT

মৌশিল্প

Published: 15th, February 2025 GMT

মৌশিল্প

যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন প্রাণী কৃষিক্ষেত্রে বিলিয়ন ডলারের অবদান রাখছে? উত্তরে নিশ্চয়ই ক্ষুদ্র প্রাণী মৌমাছির কথা খুব কম মানুষই বলবে। এটিই বাস্তবতা। এক দশক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর পোকামাকড় বিশেষ করে মৌমাছি পরাগায়নের ক্ষেত্রে যে সেবা দেয়, তার আর্থিক মূল্য ১৩১ বিলিয়ন পাউন্ড; যা বিশ্ব কৃষির প্রায় এক-দশমাংশ। আমেরিকান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এক গবেষণামতে, এই সেবার আর্থিক মূল্য বর্তমানে প্রায় ৪১০ বিলিয়ন পাউন্ড। মৌমাছি আমাদের অস্তিত্বের জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ যে জাতিসংঘ ২০ মে তারিখকে বিশ্ব মৌমাছি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, ‘পৃথিবী থেকে মৌমাছি যদি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তাহলে মানুষ বড়জোর চার বছর বাঁচবে।’  

অন্য অনেক ফসলের মতো মধু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম সারির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০০-১৫০ টন মধু আহরণ করা হতো। বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার টন মধু উৎপাদন হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ লক্ষ্যমাত্রা ১ থেকে দেড় লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। 
দেশে মধু বিপণন ও বাজারজাতকরণে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আস্থা প্রতিষ্ঠিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই দেশি মধুর ওপর আস্থা রাখতে পারেন না বলে বিদেশি ব্র্যান্ডকে গুরুত্ব দেন। অনেক ছোট চাষি এখন নিজস্ব ব্র্যান্ডে মধু বাজারজাত করে থাকেন। তার পরিমাণ খুবই কম। 

মধুর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে কমোডিটি মার্কেট ভূমিকা রাখতে পারে। এ ধরনের মার্কেট আমাদের দেশে নতুন বা স্বল্প পরিচিত হলেও উন্নত বিশ্বে এটি অত্যন্ত পরিচিত এবং ব্যাপকভাবে চর্চিত। কৃষিপণ্যের দাম সাধারণত প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় স্টক মার্কেটগুলোতে নির্ধারিত হয়। আমাদের দেশে মধুসহ বিভিন্ন পণ্যের যথাযথ ভ্যালু চেইন স্টাডি করা হয় না। ফলে মুনাফার সঠিক বণ্টন সম্ভব হয় না এবং এর সিংহভাগ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে। কমোডিটি মার্কেটের একটি ভালো দিক হলো, মধ্যস্বত্বভোগীরা এখানে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করতে পারে না। 
অনেকে খাঁটি ভেবে বিদেশি মধু বেশি পছন্দ করেন। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশিদের জন্য বাংলাদেশের মধুই উত্তম। কারণ, নিজ এলাকার মধু সে এলাকার মানুষের জন্য ওষুধ এবং তাতে সে এলাকার রোগ-
জীবাণুর প্রতিষেধক রয়েছে। যেমন– সরিষা ফুলের মধুতে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকে। এ কারণে এই মধু জমে যায়। 

সমন্বয়হীনতা, প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব এবং বাজারজাত করার অনিশ্চয়তার কারণে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদিত মধুর নিরাপদ ও যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সম্ভাবনাময় মধুর বাজার বিদেশি ব্র্যান্ডের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন ক্ষুদ্র মৌচাষিরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ক্রমান্বয়ে মৌ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। 
সম্ভাবনাময় মৌশিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে গবেষণা, নিরাপদ উৎপাদন, বিনিয়োগ, মান নিয়ন্ত্রণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়সাধনের জন্য ‘মৌ নীতি’ প্রয়োজন। মৌমাছির কোনো ব্রিডিং সেন্টার না থাকার কারণে মৌচাষিরা নিজেরাই ব্রিডিং করে রানী উৎপাদন এবং ব্যবহার করছেন। দেশে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মৌমাছির ব্যবস্থাপনা মোটামুটি ঠিক থাকলেও বাকি সময় যখন ফুল থাকে না, প্রাকৃতিক খাদ্য থাকে না, তখন ফিডিংয়ের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। ফলে কালক্রমে নানা সমস্যায় মৌমাছির জাত দুর্বল হচ্ছে। উন্নত জাত সংরক্ষণে বছরব্যাপী মৌমাছি এবং রানীর পরিচর্যা এবং মৌশিল্প রক্ষা করতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ‘ব্রিডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। 

সাকিউল মিল্লাত মোর্শেদ: প্রধান উপদেষ্টা, উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতি ও নির্বাহী পরিচালক, শিক্ষা স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রম-শিসউক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলনের সময় ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ তরুণীর

ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন এক তরুণী। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নুসরাত তাবাসসুমকে বারবার জানালেও তিনি কারও সহযোগিতা পাননি। তবে উমামা ও নুসরাত এই তরুণীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পুনাব) ও জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স নামের দুটি সংগঠন ‘আন্দোলনে নারীর শক্তি, নারীর কথা: শিক্ষা, নেতৃত্ব ও সম্ভাবনার দিগন্ত’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে অংশ নিয়ে ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা জানান। তাঁর এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

অভিযোগকারী তরুণী বলেন, ‘২০–২৫ জন নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের পাশের কলেজ রোডের গলিতে আজমেরী ওসমানের বাড়ির নিচে একটা অফিসে নিয়ে যায়। আমাকে টেনেহিঁচড়ে মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আশপাশে অনেক মানুষ থাকলেও কেউ সামনে আসেননি আটকানোর জন্য। আমাকে মারধর করে মুঠোফোন নিয়ে যায় তারা। সেই অফিসে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে অনেক বাজে বাজে কথা বলেছে, অনেক বাজে গালিগালাজ করেছে, আমার পরিবার নিয়েও অনেক কথাবার্তা বলেছে।  বাজে কথাও শুনতে হয়েছে। পরে ওখান থেকে সবাইকে বের করে দিয়ে দুজন ছিল। দুজন মিলে পরে আমাকে ধর্ষণ করে। এটা এখন পর্যন্ত কোনো গণমাধ্যমে আসেনি। আমি নিজেই আসতে দিইনি। এখন পর্যন্ত তারা (অপরাধী) ঘুরছে, এখনো শাস্তি হয়নি।’

সারজিস আলম, উমামা ফাতেমা ও নুসরাত তাবাসসুম তাঁর ঘটনাটি জানেন বলে উল্লেখ করেন ওই তরুণী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘১০ নভেম্বর আমি কনসিভ (গর্ভধারণ) করি। উমামা ফাতেমাকে যখন আমি জানাই, তখন তিনি বলেন, “তোমার সাথে না অনেক খারাপ হইছে। আচ্ছা, দেখবোনে বিষয়টা।” শেষ। এখানেই ক্লোজ করে দিয়েছে টপিক। নুসরাত তাবাসসুম আপুকে জানাই। উনি আমাকে বলেন, “তুই আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিস।” টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় আমি তাঁর পাশের টেবিলে বসে হোয়াটসঅ্যাপে নক করি। তিনি হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজগুলো দেখলেও কোনো রিপ্লাই করেননি।’

এই তরুণীর যে অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন, সেখানে অংশ নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। অনুষ্ঠানের পর জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটির নারী সেল ও আইন সেল রয়েছে। ওই তরুণী যোগাযোগ করলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’

অভিযোগ অস্বীকার

অভিযোগকারী তরুণীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উমামা ফাতেমা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তাঁর জায়গা থেকে ওই তরুণীকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন।

এ ছাড়া অভিযোগকারী তরুণীর বক্তব্যের পর আহনাফ তাহমিদ নামের এক ব্যক্তি বিষয়টির কড়া সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। ওই পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে নুসরাত তাবাসসুম ফেসবুকে অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। অভিযোগকারী তরুণীর নাম উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘একবার আমার সামনে এনে তাকে অভিযোগ করতে বলেন যে তাকে সাহায্য করতে চাওয়া হয়নি। তাকে সব রকম সাহায্য দিতে চাওয়া হয়েছিল, তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সুচিকিৎসা, নারায়ণগঞ্জের ঘটনাস্থলে তদন্ত, মামলা—সবকিছুর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে চেয়েছিল অন্য কিছু। কিন্তু তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে আমি সেটা প্রকাশ করতে পারছি না।’

এদিকে বক্তব্যের বিষয়ে জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে রাত নয়টার দিকে ওই তরুণীর মুঠোফোনে কল করা হলে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ