দুইশ কেজি বেগুন ক্ষেত থেকে বাজারে নেওয়া পর্যন্ত পরিবহন খরচ ৯৬০ টাকা। পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি মাত্র এক হাজার টাকা। দুপুরে খাবার খরচ এক থেকে দেড়শ টাকা যোগ করলে কত টাকা ক্ষতি হচ্ছে তা ভেবে দেখুন। 
এভাবেই হতাশার সুরে নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর মৌকুড়ি গ্রামের কৃষক সেন্টু মণ্ডল। 
রাজবাড়ীতে সবজি আর পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। বরং রয়েছে প্রচণ্ড বিরক্তি, হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস। পরিবহন খরচ না ওঠায় অনেকের ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। কেউ গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছে বহু কষ্ট করে উৎপাদন করা সবজি। 
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর ওই পার থেকে ভ্যানে করে বেগুন এনে খেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেন্টু মণ্ডল। এ সময় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানালেন, এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। এই বেগুন চাষ করতে তিন মাসে তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। সার, কীটনাশক, কামলাসহ বিভিন্ন খাতে তিন দফায় তাঁর খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। বেগুনের ফলন ভালো হয়েছে। তিনশ কেজি বেগুন উৎপাদন হয়েছে। বাজারে দাম নেই বলে একশ কেজি বেগুন গরুকে খাইয়েছেন। দুইশ কেজি বেগুন রাজবাড়ী বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষেত থেকে নদীর পার পর্যন্ত আনতে খরচ হয়েছে চারশ টাকা, নদী পার করতে খরচ দুইশ টাকা, ওই পার থেকে বাজারে নিতে খরচ ৬০ টাকা, ট্রলি ভাড়া একশ টাকা, আড়তদারকে দিতে হবে দুইশ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হবে ৯৬০ টাকা। বাজারে এখন বেগুনের কেজি পাঁচ টাকা করে। বিক্রি করার চেয়ে না করা ভালো। গরুকে আর কত খাওয়াবেন। এজন্য বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন বাধ্য হয়ে। তিনি টমেটোর চাষ করেছিলেন। টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। পেঁয়াজ নিয়ে আছেন আরও বিপদে। ৪১ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। ৬৫ মণ পেঁয়াজ পেয়েছেন তিনি। প্রথম দফায় ৩০ মণ পেঁয়াজ ঢাকা নিয়ে বিক্রি করেছেন ৪৬ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দফায় ৩৫ মণ বিক্রি করেছেন ৩৭ হাজার টাকা। মোট বিক্রি ৮৩ হাজার টাকা। তাঁর পরিবহন খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকা। 
গত শুক্রবার রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্তজোড়া ফসলের ক্ষেত। একটি ক্ষেতে টমেটো তুলছিলেন রহিমা খাতুন, তাঁর মেয়ে রিনা বেগম ও ননদ শাহানা বেগম। কাছে যেতেই তাদের হতাশার কথা বললেন। তারা বলেন, এত কষ্ট করে সবজি উৎপাদন করে এখন বিক্রি হচ্ছে না। ফেলে দিতে হচ্ছে। ক্ষেতে এলে কাঁদতে হচ্ছে। ঋণ করে চাষাবাদ করে এখন দেনা হয়ে গেছে। সার, বীজের দাম কমিয়ে দিলেও তাদের ভালো হতো।
রাজবাড়ী বাজার ঘুরে দেখা গেছে– ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন এসব সবজির দাম ১০ টাকা কেজির মধ্যে। তবুও চাহিদা নেই। মরিচের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। 
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম গত এক মাস ধরেই কম। বৃষ্টির কারণে আগাম সবজি চাষ করতে না পেরে সবাই একসঙ্গে চাষ করেছেন। একসঙ্গে বাজারে ওঠার কারণে দামটা পড়ে গেছে। দ্বিতীয় কারণ উৎপাদন অনেক বেশি। মানুষ ফুলকপি, বাঁধাকপি এসব পছন্দ করছে না। একসঙ্গে না করে ভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতে তারা পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজ ধরে রাখতে পারলে কয়েকদিন পরেই দাম বাড়বে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ষ কর

এছাড়াও পড়ুন:

পোশাক রপ্তানি বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় বিজিবিএ ও বিজিএমইএর

দেশের পোশাক রপ্তানি বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। বিজিবিএর ইফতার ও দোয়া মাহফিলে দুই সংগঠনের নেতারা এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

রাজধানীর উত্তরা ক্লাবে শনিবার বিজিবিএ সদস্য ও বিভিন্ন ব্যবসায় সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ ইফতার অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য বিজিবিএর। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে বিজিএমইএ ও বিজিবিএর মধ্যে যে দূরত্ব সেটি কমিয়ে আনতে হবে। বিজিএমইএ, বিজিবিএ ও বিকেএমইএকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের জন্য ও ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর আসন্ন নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার আবুল কালাম, জেএফকে সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিন, টর্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন, এজিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল, বিজিবিএর সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল, বিজিবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম সাইফুর রহমান ফরহাদ।

বিজিবিএর সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল বলেন, টেকসই বাণিজ্যের জন্য বিজিবিএ ও বিজিএমইএর মধ্যে যে গ্যাপ সেটি দূর করতে হবে। আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি, সেটি নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে সেগুলো দূর করতে হবে।

বিজিবিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম সাইফুর রহমান ফরহাদ বলেন, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নতুন নতুন যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, সেগুলো মোকাবিলা করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বায়িং হাউস সেক্টরে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, লাখ লাখ পরিবার এই সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল, সবার কথা মাথায় রেখে উৎপাদনের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সেক্টরগুলোর সহায়তা জোরদার করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাজমুল–লিটনদের কোচ থাকছেন সিমন্সই
  • সেকালের হাট এবং ঈদের ব্যস্ততা নিয়ে কিছু কথা
  • দেশের ছোট্ট প্রাচীন মসজিদ নওগাঁর ‘চৌজা মসজিদ’
  • সাত কলেজ নিয়ে শিগগিরই যৌক্তিক সমাধান আসবে: ইউজিসি চেয়ারম্যান
  • নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে মডেলদের উদ্যোগ
  • পোশাক রপ্তানি বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় বিজিবিএ ও বিজিএমইএর
  • পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে হবে ঈদের বড় জামাত: আসিফ মাহমুদ
  • পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে হবে ঈদের বড় জামাত, থাকবে আনন্দ মিছিল ও মেলা: আসিফ মাহমুদ