ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে গেছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কর্তৃপক্ষ বলছে শিগগির ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল পাঁচ বছর আগে।  ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতায় আজও শুরু হয়নি কাজ। একের পর এক দরপত্র বাতিল হয়েছে, বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা। 
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি এখন কার্যত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী, চালক ও স্থানীয়রা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সড়ক নির্মাণে দেরির কারণ
জেলার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানায়, শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কটি দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে দ্রুত মালপত্র পরিবহনের জন্য এই পথের গুরুত্ব অনেক। তাই ২০১৯ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করে।
২০২১ সালে চারটি প্যাকেজে নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হলেও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রকল্পটি থমকে যায়। কয়েক দফা টেন্ডার বাতিলের পর সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহ্বান করে তা মূল্যায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
বেহাল সড়কে দুর্ঘটনা, ডাকাতি, দুর্ভোগ
দীর্ঘদিনের অযত্ন ও সংস্কারের অভাবে সড়কের ২৯ কিলোমিটার অংশ বেহাল। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে সড়কের ধীরগতির কারণে রাতের বেলা বেড়েছে ডাকাতির ঘটনাও।
প্রতিদিন খুলনা থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহন করা ট্রাকচালক রতন মণ্ডল জানান, এই সড়কে সময় নষ্ট হয় কয়েক ঘণ্টা। ঠিক সময়ে গন্তব্যে মালপত্র পৌঁছে দিতে পারেন না। কাঁচামাল পচে যায়। রাতে ডাকাতির ভয় তো থাকেই। দ্রুত এ সড়কের কাজ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাসচালক হোসেন সরদার বলেন, এমন খারাপ রাস্তা আর কোথাও দেখেননি। গাড়ি প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খায়, টায়ার ফেটে যায়, ইঞ্জিন নষ্ট হয়। চালকরা বড় ক্ষতির মুখে আছেন বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
যাত্রী লোকমান বেপারীর ভাষ্য– ‘এ রাস্তায় অসুস্থ রোগী নিয়ে চলাচল করা সম্ভব নয়। মনে হয় বর্ষায় এখানে নৌকা চলবে! মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে হলেও দ্রুত কাজ শেষ করা দরকার।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ
সড়কের ধুলাবালিতে নাকাল আশপাশের গ্রামবাসী। বাড়ির টিনের চাল ধুলায় লালচে রং ধারণ করেছে। রান্নাঘর পর্যন্ত ধুলায় ঢেকে যায়। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
‘বাড়ির ভেতরে ধুলায় বসবাস করা দায় হয়ে গেছে। রান্না করতে গেলে খাবারের ভেতরে বালু পড়ে। বাচ্চারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যায়। আমাদের দুর্ভোগ দূর করতে দ্রুত সড়ক নির্মাণ হোক।’ বলছিলেন স্থানীয় গৃহবধূ ফাতেমা বেগম।
জমি অধিগ্রহণের অর্থ পাননি অনেকে
জমি অধিগ্রহণের ধীরগতির কারণে অনেক জমির মালিক এখনও তাদের প্রাপ্য অর্থ পাননি। রুদ্রকর আমিন বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহালম লিটন বলেন, ২০২১ সালে সরকার তাদের জমি অধিগ্রহণ করেছে। দেশের মানুষের স্বার্থে তারা জমি দিয়েছেন। এখনও টাকা পাননি। রাস্তার কাজ হয়নি, তাদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি। তারা দ্রুত এর সমাধান চান।
কী বলছে কর্তৃপক্ষ
সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন জানান, চারটি প্যাকেজের মধ্যে একটিতে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। সেই অংশের কাজ চলমান। বাকি তিনটিতে ভূমি অধিগ্রহণের সমস্যা রয়ে গেছে। নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে আশা করেন তিনি।
ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ প্রসঙ্গে এ প্রকৌশলী বলেন, যে ৪৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, তা ১১টি কেসের জন্য ব্যয় হয়ে গেছে। আরও ৮টি কেসের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধন করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, প্রকল্পটি ২০১৯ সালে হাতে নেওয়া হলেও সড়কের এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের কারণে ২০২২ সালে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। ফলে কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে। ১৯টি এলএ কেসের মধ্যে ৭টির জমি ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা নেই। এটি জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়, কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলবেন। তিনি আশা করছেন, শিগগির ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র জন য সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

বোয়ালমারীর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৩

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ঘোষপুর ইউনিয়নের গড়াই নদীর লংকারচর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছে। বুধবার রাতে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।  

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১০টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায়। এ সময় মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নেওয়া রাসেল আহমেদের ছোট ভাই ছাত্রদলের সাবেক নেতা রবিন মোল্যার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করে আক্রমণকারীরা। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন রিয়াজ মৃধা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  

বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

বিএনপি নেতা মিরাজ মৃধা বলেন, রাসেলের সঙ্গে জুয়েল বিশ্বাসের দেনাপাওনা নিয়ে ফোনে কথা-কাটাকাটি হয়, পরে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মেসিতে আসেন জুয়েল। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারাল অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এ সময় তিনি পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর ২৫ থেকে ৩০ জনকে নিয়ে আমার ফার্মেসিতে এসে হামলা চালায়। 

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯টি সিডিউল বিক্রি হলেও সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সহায়তায় মাত্র একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহাল ইজারা পান বোয়ালমারী যুবলীগের সদস্য মেসার্স রবিউল ট্রেডার্সের মালিক রবিউল ইসলাম। এই বালুমহাল ইজারার ১৯ জন সিডিউল ক্রেতার সঙ্গে কৃষকদল সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুলের নেতৃত্বে ইজারা দরপত্র (নিকো) বোর্ড করে একটি সিডিউল জমার মাধ্যমে রবিউলকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৮ জন ঠিকাদারকে ৪৫ হাজার টাকা করে নিকোর টাকা নির্ধারণ করা হয়। দৈনিক সমকাল পত্রিকায় এ বিষয়ে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহালের ইজারা পেলেন যুবলীগ নেতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।

৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি বালুমহালের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক। এগুলো বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায়। লংকারচর মহালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৮ টাকা। ঘোষপুর ইউনিয়নে গড়াই নদীর এ মহালের আয়তন ৭৪ হাজার ১৪৭ একর। ৩৬ লাখ টাকা বেশি দিয়ে ইজারা নেন রবিউল। 

স্থানীয় এক সিডিউল ক্রেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ও ডিসির কাছে দেওয়া অভিযোগকারী) জানান, ১৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও ১৫ দরপত্র দাতাদের মাঝে এবং কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুলের সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে কেনাবেচা হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্র দাতাদের মাঝে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ভাগাভাগির টাকা বণ্টনের দায়িত্ব দেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদের ওপর। তবে জুয়েল বিশ্বাস নামে একজন দরপত্র ক্রেতা অভিযোগ করেন তার পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বুধবার রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে মা ফার্মেসি মার্কেট চত্বরে সালিশ বৈঠকে বসেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, বিএনপি নেতা মহসিন আলম চান, মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয়রা। 

বৈঠক শুনানির সময় দরপত্র দাতা আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতে কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে লোকজন। এ সময় অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে জুয়েল বিশ্বাসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় স্থানীয়দের। পরে জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল অস্ত্র নিয়ে মা ফার্মেসিতে আক্রমণ চালায়। এতে রবিন মোল্যা ও রিয়াজ মৃধা আহত হন। 

জুয়েল বিশ্বাস জানান, বালুমহালের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিল রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। সেই টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মেসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে এবং আমার উপর আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে আমার গ্রামের লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিন আঘাত পান। 

এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মী জুয়েল বিশ্বাস আমার কাছে চাঁদা দাবি করে। এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে তিনি পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসেন। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে আগে থেকে ওঁতপেতে থাকা তার পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বোয়ালমারীতে বালুমহাল ইজারার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৩
  • বোয়ালমারীর বালুমহাল ইজারার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৩
  • বোয়ালমারীতে বালুমহালের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৩
  • বোয়ালমারীতে বালুমহাল ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৩
  • বোয়ালমারীর বালুমহালের ইজারা বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৩
  • গ্রামীণ সড়কের সুরক্ষাপ্রাচীর খুলে নিজের পুকুরে স্থাপন করলেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা
  • ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ৩ কিলোমিটার সড়কে ভোগান্তি
  • বেহাল সড়কে বিয়ে ভেঙেছে তরুণীর
  • বেহাল সড়কের কারণে বিয়ে ভেঙেছে তরুণীর
  • বিপুল ব্যয়ের সড়ক, তবু থাকছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি