চকরিয়া উপজেলার রসিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি নিজের স্ত্রীকে স্কুলে নিয়োগ, স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষকের বেতন আত্মসাৎ, সরকারি নির্দেশনা অমান্য ও প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাতের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 
এসব অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষকের চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন একই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো.

শহীদুল ইসলাম। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। তবে এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। 
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এমপিওভুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে। স্কুলে মোট শিক্ষার্থী আছে প্রায় ৭০০। 
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০০৮ সালে রসিদ আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আনোয়ার হোসেন। ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল তিনি স্ত্রী মোছাম্মৎ পারভীন আক্তার রিনাকে স্কুলের সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ দেন। তবে রিনাকে বিধিবহির্ভূতভাবে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত করা হয়। তথ্য গোপন করে বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদটি প্রায় ১৩ বছর ধরে শূন্য রাখা হয়। 
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জালিয়াতি ও বিদ্যালয়ের অডিট কার্যক্রমে বাধাসহ প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়মের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য সরকারিভাবে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে দু’বার ভাউচার দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা লোপাট করা হয়। সভায় বলা হয়, বিল-ভাউচার ও রশিদবিহীন ফি আদায় করা হয়েছে এসএসসি-জেএসসি পরীক্ষার সনদ ও প্রশংসাপত্র থেকে আয় হওয়া অর্থ লোপাট হয়েছে। এ ছাড়া বহিরাগত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিবন্ধন ও ফরম পূরণের অর্থ নেওয়া হলেও বিদ্যালয়ের তহবিলে গরমিল রয়েছে। ওই সভায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা খাতে ৭৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৬ টাকা আত্মসাৎ করার তথ্য পায় পরিচালনা কমিটি। 
অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, রসিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি কর্তৃক গঠিত ৫ সদস্যের অডিট কমিটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসের হিসাব নিরীক্ষণ করে। নিরীক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চকরিয়ার ইউএনওর স্ত্রীকে থ্রিপিস কেনা বাবদ ৩ হাজার টাকা ভাউচার করা হয়। তখন চকরিয়ার ইউএনও ছিলেন জেপি দেওয়ান। ‘বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসের বই’ কেনার নামে ৩ হাজার ৬৯০ টাকা ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের ১২ হাজার ৬৩০ টাকা ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট খাত উল্লেখ করা হয়নি। সর্বমোট ১১ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৬ টাকা অর্থ লোপাট করার তথ্য-প্রমাণ সভাপতির কাছে দাখিল করে অডিট কমিটি। 
অভিযোগে আরও বলা, বিদ্যালয়ের ল্যাব সহকারী এসএম তাদাব্বুর ইসলাম পদত্যাগ করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চীন চলে যান। প্রধান শিক্ষক পদত্যাগপত্র গোপন রেখে ছুটি দেখিয়ে জনতা ব্যাংক চকরিয়া শাখা থেকে ৫ মাসের সরকারি বেতন তুলে নেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ১২ মাস ধরে বকেয়া আছে। প্রায় ৬ বছর ধরে প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা পড়েনি। 
অভিযোগকারী বিদ্যালয়টির সিনিয়র শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে বিদ্যালয়ে লাগামহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। তথ্য-প্রমাণ উপজেলা প্রশাসনের কাছে দিয়েছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নোটিশ দেওয়ার পর তিনি দুই দফা সময়ের আবেদন করে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও সামগ্রিক অবস্থা চরম অবনতির মুখে।’ 
বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুরত আলম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কাছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৭ মাসের হিসাব-নিকাশ তুলে ধরেছিলাম। সেখানে ১১ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৬ টাকা গরমিল পাওয়া যায়। এসব অর্থ প্রধান শিক্ষক লোপাট করেছেন।’ 
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৭ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে আছি। সব হিসাব-রেজুলেশন আমার কাছে রয়েছে। শহীদুল যেসব অভিযোগ করেছে, তা প্রমাণ করতে পারবে না। চীন চলে যাওয়া তাদাব্বুর ছুটি নিয়ে গেছে, স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার পর কোনো বেতন তুলতে পারেনি। আমি দায়িত্ব পালনকালে কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হইনি।’ 
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রসিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরেক শিক্ষক নানা অভিযোগের বিষয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেছেন। উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার রতন কুমার বিশ্বাসকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ 
রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি ১৫ কর্মদিবস করে দুবার সময় চেয়েছিলেন। আবারও উভয়পক্ষকে নোটিশ করা হবে। এবার যদি অভিযুক্ত উপস্থিত না হন, তাহলে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে চকরিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিদ্যালয়টির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ আহমদ চ ধ র ২০২৩ স ল র কর ছ ন য গ কর র জন য চকর য় ইসল ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাথমিক স্তরে শেখার সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে

ড. মনজুর আহমদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত কনসালটেশন কমিটির প্রধান। গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্প) উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ প্রান্তিক শিশু বিকাশ নেটওয়ার্কের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দুই দশকেরও বেশি ইউনিসেফে কাজ করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক।

সমকাল: প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ‘কনসালটেশন কমিটি’ সরকারের বড় পদক্ষেপ, যেখানে আপনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। আপনাদের সুপারিশের প্রধান বার্তা কী?

মনজুর আহমদ: গত বছরের অক্টোবরে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের একটি ‘কনসালটেশন কমিটি’ গঠন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমি সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছি এবং আমরা সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে এর প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে শতাধিক সুপারিশ করা হয়েছে। আমাদের মূল কথা হলো, প্রাথমিক স্তরে ভাষা ও গণিতের ভিত্তিমূলক দক্ষতা, অর্থাৎ শেখার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে প্রতিটি শিশুকে। এর সঙ্গে শিশুর নিরাপত্তা, শারীরিক ও মানসিক ব্যবস্থা এবং দায়িত্বশীল সামাজিক আচরণেও দৃষ্টি দিতে হবে। এই কাজগুলো হচ্ছে না, অর্ধেকের বেশি শিশু পঞ্চম শ্রেণি সমাপ্ত করেও পড়তে, লিখতে বা অঙ্কের চার নিয়ম ব্যবহার করতে পারে না। গত দুই দশকে পরপর বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম চালানোর পরও এ ক্ষেত্রে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। এই স্থবিরতা মাথায় রেখে বিভিন্ন করণীয় প্রস্তাব করা হয়েছে।

সমকাল: আপনারা কি কোনো দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে মানদণ্ড হিসেবে ধরেছেন? তা অর্জন করতে কত বছর লাগবে বলে মনে করেন? 

মনজুর আহমদ: আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রাথমিক শিক্ষার মানদণ্ড হচ্ছে– সকল শিশুর জন্য মানসম্মত, সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা। ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যেও এই সুযোগ সর্বজনীন করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।

সমকাল: বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষার মূল প্রশাসনিক ক্ষেত্র যেমন পিটিআই (প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ইত্যাদি জায়গায় শিক্ষায় ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। আপনারা কি এ বিষয়ে কোনো সুপারিশ করেছেন?

মনজুর আহমদ: শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সংস্কারের ভূমিকা সবার আগে। কিন্তু শিক্ষকের পেশা গ্রহণে যোগ্য ও মেধাবী তরুণরা আগ্রহী নন। প্রাথমিক শিক্ষক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়োগ পেতে শিক্ষা বিজ্ঞানে ডিগ্রি থাকা এখন আবশ্যক। শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জন্য এ রকম বাধ্যবাধকতা নেই। অর্থাৎ এসব পদের জন্য বিশেষায়িত জ্ঞান বা দক্ষতার প্রয়োজন নেই। শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও শিক্ষকের পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ পেশাগত প্রস্তুতি আবশ্যকীয় করা প্রয়োজন। সংস্কার কমিটি এ সুপারিশ করেছে।

সমকাল: মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষক হিসেবে নিয়ে আসার জন্য কোনো কার্যকর পরিকল্পনা আছে কি? নবম গ্রেড থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে বেতন কাঠামো নির্ধারণের বিষয়ে আপনার মত কী? 

মনজুর আহমদ: কমিটির মতে, প্রাথমিক, মাধ্যমিকসহ বিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র পেশাগত মর্যাদা ঊর্ধ্বতন বেতন কাঠামো ও পেশাগত অগ্রগতির ব্যবস্থা করা দরকার। এই ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিক স্তরে বর্তমান ১৩তম গ্রেড থেকে ১২তম গ্রেডে শুরু এবং ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি সুপারিশ করা হয়েছে। পেশাগত অগ্রগতির উদ্দেশ্যে শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক– এই তিন ধাপ সৃষ্টির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সমকাল: আমাদের জনগোষ্ঠীর এখনও বড় একটা অংশ অক্ষরজ্ঞানহীন। তাদের সাক্ষরতার বিষয়টি কি আপনারা চিন্তা করেছেন?

মনজুর আহমদ: সাক্ষরতা শুধু অক্ষরজ্ঞান এবং নাম স্বাক্ষরে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। অতীতে এই ধরনের কর্মসূচিতে ভালো ফল পাওয়া যায়নি। জীবনব্যাপী শিক্ষার ধারণার আলোকে জীবিকা ও জীবনের প্রয়োজনে বিদ্যালয়বহির্ভূত কিশোর-তরুণদের শিক্ষা ও বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য কমিউনিটি শিক্ষাকেন্দ্রের নেটওয়ার্ক তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ এনজিওগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোকে এই কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

সমকাল:  শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়েছে কি? এটি মূল বাজেটের কত শতাংশ হলে ভালো হয়?

মনজুর আহমদ: শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং এটিকে ফলপ্রসূ করতে হলে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাঠের উপকরণ, বই ইত্যাদি ছাড়াও অবকাঠামো এবং শিক্ষকের সংখ্যা ও দক্ষতা বাড়াতে ব্যয় বাড়াতে হবে। প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। দরিদ্র পরিবারের জন্য শিক্ষার ব্যয় লাঘবের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতীয় আয় বা বাজেটের নির্দিষ্ট অনুপাতের কথা বলা হয়নি। তবে ক্রমাগত বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো এবং এর যথার্থ ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থাপনাগত ও জবাবদিহির পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।

সমকাল: শিশুদের মূল্যায়নের বিষয়টিকে আপনারা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক দল এবং উপজেলা কর্মকর্তাদের সমন্বিত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন…।

মনজুর আহমদ: শিশুর শেখা বা দক্ষতা অর্জন সমগ্র শিক্ষা আয়োজনের সাফল্যের মাপকাঠি। এ জন্য প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অগ্রগতির মূল্যায়ন এবং প্রতিটি বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় ব্যবস্থার কার্যকারিতার মূল্যায়ন প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষে ও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক এবং বর্ষ বা স্তর শেষে মূল্যায়ন থাকবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীর দক্ষতা জরিপের মাধ্যমে বিদ্যালয়েও মূল্যায়ন হবে।  মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রতি বিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীর অগ্রগতির নিরিখে ‘লাল’, ‘হলুদ’ ও ‘সবুজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক দল ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সম্মিলিত দায়িত্ব হবে প্রতি বিদ্যালয়কে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ‘সবুজে’ রূপান্তরিত করা।

সমকাল: আপনারা এনজিও সংযুক্তির সুপারিশ করেছেন। এনজিও সাধারণত নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ও নির্দিষ্ট এলাকায় কাজ করে। প্রাথমিক শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা যেমন– সরকারি, বেসরকারি, ইবতেদায়ি, মাদ্রাসা ও কমিউনিটি স্কুল রয়েছে। এটি কীভাবে সমন্বয় করা হবে? 

মনজুর আহমদ:  এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হবে প্রধান। বিভিন্ন অরাষ্ট্রীয় শিক্ষাসেবা আছে ও থাকবে। সব সেবাদানকারীকে নিয়ে সমন্বিত সামগ্রিক এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে। সে জন্য নীতি কাঠামো ও সহযোগিতার পদ্ধতি ও মডেল তৈরি করতে হবে। শিক্ষা শাসন ও ব্যবস্থাপনার প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ২০ উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের সুপারিশ করা হয়েছে।

সমকাল:  শিক্ষকতা পেশাকে পেশাদারিত্বের আওতায় আনতে টিচিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে আপনার মত কী? উন্নত বিশ্বে এটি দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 
মনজুর আহমদ: আগেই বলা হয়েছে, শিক্ষক ও শিক্ষক কর্মীদের শিক্ষাবিজ্ঞানে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন ক্রমে বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। এ জন্য যথার্থ কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

সমকাল: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিগম্যতা ও শিশুদের মধ্যকার বৈষম্য নিরসন বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

মনজুর আহমদ: অর্থনৈতিক, সামাজিক, ভৌগোলিক, ভাষাগত কারণে এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে শিক্ষায় অভিগম্যতা ও অংশগ্রহণে ব্যাপক বৈষম্য বিদ্যমান। বৈষম্যের প্রকৃতি ও পরিমাণ সব জায়গায় এক নয়। এ জন্য বিশেষ লক্ষ্য, কৌশল ও পরিকল্পনা এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ বিষয়ে কমিটি কিছু আশু এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করেছে।

সমকাল: আপনাদের শিক্ষা পরামর্শক পরিষদ (এডুকেশন কনসালটেটিভ কাউন্সিল) গঠনের সুপারিশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের বিষয়টি কি কম গুরুত্ব পেয়েছে?

মনজুর আহমদ: শিক্ষার মতো জটিল ও বহুমাত্রিক বিষয়ে একটি কমিটি সুপারিশ প্রদানেই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করা সংগত নয়। যেসব সুপারিশ করা হলো, সেগুলো সম্পর্কে যথার্থ বিবেচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পথে কীভাবে এগোনো হচ্ছে, তা শিক্ষাসমাজ ও সচেতন নাগরিকের নজরদারিতে থাকতে হবে। এ জন্য স্থায়ী উচ্চক্ষমতার শিক্ষা কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এটির আইনি কাঠামো, সাংগঠনিক স্বরূপ, কার্যধারা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত সময়সাপেক্ষ এবং এ জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যও প্রয়োজন। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষা খাতের জন্য একটি শিক্ষা পরামর্শ পরিষদের সুপারিশ করা হয়েছে। এই পরিষদ বিভিন্ন জটিল ও সংবেদনশীল বিষয় বিবেচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের জন্য সহায়ক হতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে বিচ্ছিন্নভাবে ও চাপের মুখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পরিহারের জন্য এ পদক্ষেপ প্রয়োজন। 

সমকাল: আপনাদের সুপারিশমালার বাস্তবায়ন সম্পর্কে আপনি কতখানি আশাবাদী?

মনজুর আহমদ: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে তাঁর প্রথম ভাষণে (২৫ আগস্ট) বলেছিলেন, শিক্ষায় যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করা হবে তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। কমিটির সুবিবেচিত প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য বলে আমি মনে করি। এ সম্পর্কে অনেক আশু ও মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বর্তমানে প্রস্তুতাধীন পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রমের (পিইডিপি ৫) আওতায় এবং সরকারের শিক্ষা বাজেট প্রস্তাবে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এর নিদর্শন দেখব বলে আমি আশা করি।
সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মনজুর আহমদ: আপনাকেও ধন্যবাদ। 

সমকালের জন্য শুভকামনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রাথমিক স্তরে শেখার সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে
  • আরও ছয় জিম্মিকে ফেরত দেবে গাজা, প্রস্তুত ইসরায়েল
  • ডিসি-ইউএনওদের জন্য কেনা হবে ৫০ জিপ
  • কাগজের মিনার বানিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা
  • চট্টগ্রামে মাঝপথেই বন্ধ একুশের অনুষ্ঠান
  • অস্বচ্ছল ৩৯ মুক্তিযোদ্ধার বীর নিবাস বিত্তবানদের দখলে
  • বগুড়ায় এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
  • হামাসের হস্তান্তর করা চার মরদেহের একটি কোনো জিম্মির নয়, দাবি ইসরায়েলের
  • বিশ্বকাপ ফাইনালের চুমু–কাণ্ডে রুবিয়ালেসের জরিমানা
  • আপেল, কমলা, আঙুরসহ তাজা ফলের শুল্ক–কর কমানোর সুপারিশ