বাড়ির এক কোণে পুকুর। উঠান থেকে পুকুরের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত জালের ঘেরা। দু’ভাগে বিভক্ত ঘেরার একপাশে ফাওমি জাতের মুরগি, অন্য পাশে রয়েছে পিকিং জাতের হাঁস। গ্রাম্য সড়ক ধরে হেঁটে গেলে ওই বাড়ি থেকে হাঁস-মুরগির ডাক কানে আসে। গৃহবধূ শিরিনা আক্তার ও তার স্বামী সারোয়ার মিয়া মিলে বাড়তেই খামারটি গড়ে তুলেছেন। সীতাকুণ্ডে প্রথম পিকিং জাতের হাঁস পালন করেছেন তারাই। তাতে ঘুরে গেছে ভাগ্যের চাকা।
শিরিনা আক্তারের বাড়ি মুরাদপুর ইউনিয়নের রহমতনগর গ্রামে। স্বামী সারোয়ার মিয়া ট্রান্সপোর্টের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। শিরিনা আক্তার এনজিও সংস্থা ইপসার সদস্য তিনি। তাদের দু’জনের পাশাপাশি খামারটি দেখাশোনা করেন নাজিম খান নামে তাদের এক ভাগনে।
সরেজমিন দেখা যায়, গ্রাম্য সড়কের পাশেই শিরিনা আক্তারের বাড়ি। সড়কের পাশে টিনের বেড়া। মূল সড়ক থেকে বাড়িতে ঢুকতেই উঠোন। ঘরে যাওয়ার পথ বাদে উঠোনের বাকি অংশের চারপাশ ও ওপরের অংশ জাল দিয়ে ঘেরা। বসতঘরের সামনেই তৈরি করা হয়েছে মুরগি রাখার শেড। জালের ভেতর অবিরত ডেকে চলেছে ফাওমি জাতের অন্তত তিন শতাধিক মুরগি। পুকুরে সাঁতার কাটছিল ৯২টি সাদা রঙের পিকিং জাতের হাঁস। পাড় থেকে পুকুরের দিকে তৈরি করা হয়েছে হাঁসের বাসা।
সারোয়ার মিয়া জানান, চার মাস আগে ইপসার এক কর্মকর্তা বাড়ির ভেতরের জায়গা দেখে তাকে হাঁস-মুরগির খামার করার পরামর্শ দেন। ওই কর্মকর্তার কথা তার ভালো লাগে। পরে তিনি ইপসার সহযোগিতা চান।
সারোয়ার বলেন, ‘শুরুতে আমাদের ৫০টি পিকিং জাতের হাঁস দিয়ে সহযোগিতা করে ইপসা। পাশাপাশি ৮০ টাকা করে আরও ৫০টি এক দিনের পিকিং জাতের হাঁসের বাচ্চা কিনে নিই। প্রথমে ১০০টি পিকিং জাতের হাঁস ও ৩০০টি ফাওমি জাতের মুরগির বাচ্চা দিয়ে তাদের খামার শুরু করি। এখন পর্যন্ত ছয় লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। ইতোমধ্যে হাঁস থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০টি ডিম পাই। খামার বাড়ানোর জন্য আপাতত আমরা ডিম বিক্রি করছি না। নতুন ইনকিউবেটর কিনেছি। সেখান থেকে বাচ্চা ফুটানো হবে। ফাওমি মুরগির বয়সও ১০০ দিন হয়েছে। আরও বড় হলে মোরগ বিক্রি শুরু করব।’
সারোয়ার মিয়া ও শিরিনা আক্তার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জেলা হাঁস-মুরগি খামারের পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন ইমনের কাছে। সাখাওয়াত বলেন, ‘কয়েক মাস আগে সারোয়ার মিয়া দম্পতি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এরপর তারা খামার গড়ে তুলেছেন। ওই খামারটি আমি পরিদর্শন করেছি। প্রশিক্ষণের নির্দেশনা মোতাবেক তারা খামার করে সফল হয়েছেন।’
ইপসার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘পিকিং হাঁস দ্রুত বাড়ে। ফলে দ্রুত মাংস ও ডিম পাওয়া যায়। একটি পিকিং হাঁস ওজন ৩-৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিটি হাঁস বছরে প্রায় ১৭০ থেকে ১৮০টি ডিম দিয়ে থাকে। মাংস খেতে বেশ সুসাদু, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও নরম। সব বয়সের মানুষ পিকিং হাঁসের মাংস খেতে পারে।’
সাবেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তাহামিনা আরজু বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে হাঁস চাষের জন্য সীতাকুণ্ড উপযুক্ত নয়। কারণ হাঁস প্রচুর খাবার খায়। সেটা প্রাকৃতিকভাবে না পাওয়া গেলে বাণিজ্যিক খাবার দিয়ে খামারিরা লাভবান হতে পারবেন না। তবে এ হাঁসের রোগবালাই তেমন নেই। ফাওমি জাতের মুরগিরও রোগবালাই কম।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমারে ৫ হাজার কারাবন্দিকে মুক্তি
নববর্ষ উপলক্ষে প্রায় ৪ হাজার ৮৯৩ বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নতুন বছর উপলক্ষে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লেইং ৪ হাজার ৮৯৩ বন্দিকে ক্ষমা করেছেন।
মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মধ্যে কতজন রাজনৈতিক বন্দি, তা এখনও পরিষ্কার নয়। মিয়ানমারের স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা পলিটিক্যাল প্রিজনার্স নেটওয়ার্ক বলেছে, জান্তাপ্রধানের ঘোষণায় কমপক্ষে ২২ রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
দেশটির বিভিন্ন কারাগারে গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার ১৯৭ রাজনৈতিক বন্দিকে আটক রাখা হয়। এই বন্দিদের মাঝে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিও রয়েছেন। মুক্তি পাওয়া বন্দিরা আইন অমান্য করলে বাকি সাজা ভোগ করতে হবে। ইরাবতী।