যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ নতুন করে আরও ৪৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত আট দিনে সারা দেশে এই অভিযানে মোট ৪ হাজার ৪০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী। গত ২৪ ঘণ্টায় (গত শুক্রবার বিকেল থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত) এই অভিযানের সময় ৪৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়াও বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০টি গুলি ও কয়েকটি দেশি অস্ত্র।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্টের বাইরে বিভিন্ন মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এক সভায় ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ সিদ্ধান্ত হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে আক্রমণের শিকার হন ১৫-১৬ জন শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা ওই রাতে ডাকাতির খবর পেয়ে তা প্রতিহত করতে সেখানে গিয়েছিলেন। তখন তাঁদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এ ঘটনায় আহত একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

গাজীপুরসহ তিন স্থানে গ্রেপ্তার ৩৮

গাজীপুরে বিশেষ অভিযানে আরও নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগর থেকে দুজন এবং জেলা থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করে পুলিশ।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো.

যাবের সাদেক বলেন, আটক ব্যক্তিরা ফ্যাসিস্ট সরকারের লোক ছিলেন। এ অভিযান অব্যাহত আছে।

কুড়িগ্রামে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ১৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চর রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আছমত আলী, রৌমারী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি সাইদুর রহমান, রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বসুনিয়াও আছেন।

সিলেটে বিশেষ অভিযানে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার বিভিন্ন সময়ে নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি বিমানবন্দর থানার সুবিদবাজার বনকলাপাড়া এলাকার মো. জসিম উদ্দিন তালুকদার (৪৬) রয়েছেন।

জনপ্রতিনিধি ও আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

কু‌ষ্টিয়ায় অপারেশন ডেভিল হান্টে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার ‌দিবাগত রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া নুরুল ইসলাম (৫০) মিরপুর উপ‌জেলার ফুলবা‌ড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক।

ফরিদপুরের সালথায় যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে মো. সেলিম মাতুব্বর (৪৮) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত রাতে মাঝারদিয়া বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার পুলিশ সামিনুর রহমান (৫৫) নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সামিনুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির সদস্য ছিলেন।

চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান মঞ্জুরুল ইসলামকে (৪৫) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ছ আওয় ম গতক ল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দুই ছাত্রনেতা সেনাপ্রধানের সঙ্গে কেন সাক্ষাৎ করেন, তা জাতির সামনে তুলে ধরা উচিত: নুরুল হক

দেশে ওয়ান-ইলেভেনের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল এবং সদ্য গঠিত সংগঠনের বক্তব্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে। এর ফলে দেশে আবারও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আশঙ্কা বাড়ছে।

আজ সোমবার দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণ অধিকার পরিষদের নগর ও জেলা কমিটির কর্মিসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নুরুল হক নুর। এ উপলক্ষে তিনি সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে এসব বলেন।  

দেশে নতুনভাবে ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা চলছে মন্তব্য করে নুরুল হক বলেন, বর্তমানে দেশে নির্বাচিত সরকার নেই। এ ধরনের শূন্যতার সুযোগে বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্র এবং জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে হাসনাত, সারজিস কিংবা ছাত্রদের তৈরি জাতীয় নাগরিক পার্টির মতো সংগঠনগুলো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে কথা বলছে, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার শঙ্কা আছে।  

গণ অধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা যখন সেনাবাহিনীর দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগকে নতুন করে পুনর্বাসনের কথা বলেন, তখন জনগণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। তবে আমরা জানতে পেরেছি ছাত্রনেতারাই সেনাপ্রধানের সঙ্গে মিটিং করতে সেনা সদরে গিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান তাঁদের ডাকেননি। আমি মনে করি, জাতীয় নাগরিক কমিটির উচিত ওই দুই ছাত্রনেতা কেন সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, সেখানে কী আলোচনা হয়েছিল—তা তদন্ত করে জাতির সামনে তুলে ধরা উচিত।’  

নুরুল হক বলেন, ‘৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ৯০-এ স্বৈরাচার এরশাদকে যেভাবে তৎকালীন সেনাপ্রধান নুরুদ্দিন খান জানিয়ে দিয়েছিলেন মি. প্রেসিডেন্ট, আপনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানও কিন্তু শেখ হাসিনার আত্মীয় হয়েও তাঁকে ৪ আগস্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। আজ সেনাবাহিনীকে টার্গেট করে এ ধরনের বক্তব্য আসাটা আমি সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যমূলক ও অভিসন্ধিমূলক মনে করি। এই গণ-অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর বড় একটা ভূমিকা ছিল, যা ভুলে গেলে চলবে না।’

বর্তমান সময়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জানিয়ে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিভাজন কমিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঈদের আগেই জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন।

কর্মিসভায় আরও বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের বরিশাল জেলার সভাপতি শামীম রেজা, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম হাসান, মহানগর সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন তালুকদার প্রমুখ। নুরুল হক আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাঁর দলকে বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ