রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট গুলিতে নিহত হন দোকান শ্রমিক মো. হাসান। পরদিন ৬ আগস্ট ফেসবুকে ভিডিও দেখে তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হলেও লাশ পেতে লেগে গেল সাড়ে ৬ মাস।

ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ১৩ ফেব্রুয়ারি হাসানের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ বুঝে পাওয়ার পর শনিবার আনা হয় ভোলায় বাড়িতে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ। পরে জানাজা শেষে বাড়ির পাশের মসজিদের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।

আজ সকালে হাসানের লাশবাহী গাড়ি এনে রাখা হয় সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের সাহামাদর গ্রামের বাড়ির সামনে। এ সময় এক নজর দেখতে ভিড় জমান এলাকাবাসী। এর মধ্যেই  কফিনে রাখা ছেলের লাশ ঘরে তুলতে বারবার ছুটে আসছিলেন মা গোলেনুর বেগম। কোনো বাধায় তাঁকে আটকানো যাচ্ছিল না। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ছেলের লাশ সাড়ে ৬ মাস পর পেয়ে পাগলপ্রায় মা। শুরু হয় মায়ের গগণবিদারী বিলাপ। হাসানের বাবা মনির হোসেনের ছোট্ট বাড়িতে সমবেদনা জানাতে ছুটে আসা পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজন সবাই শোকে কাতর।

মনির হোসেন জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট দোকান শ্রমিক হাসানও যাত্রাবাড়ীর সুতিখালপাড় এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে বের হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। এর পর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না হাসানের। ৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ী রাস্তার ওপর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পায়ে তার প্যাঁচানো হাসানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ছবি দেখে হাসানকে চিনতে পারলেও সন্ধান মিলছিল না। মানববন্ধন, মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক প্রচার করেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে থাকা হাসানের লাশ শনাক্ত করা হয়।

গত ১৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানার মাধ্যমে হাসানের বাবা-মায়ের ডিএনএর নমুনা দেওয়া হয় সিআইডিকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ডিএনএ মিলে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে লাশের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর পর শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রথম জানাজা শেষে তাঁর লাশ নিয়ে গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল করা হয়।

শনিবার সকালে ঢাকা থেকে হাসানের লাশ নেওয়া হয় ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের সাহামাদার গ্রামের বাড়িতে। সকাল ১০টার দিকে সাহামাদার হাইস্কুল মাঠে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা হয়। এর পর দাফন করা হয় বাড়ির পাশের উত্তর সাহামাদার মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে।

লাশ দাফনের পর হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন ভোলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী। একই সঙ্গে নিহত হাসানের পরিবারের জন্য সহায়তা চেয়েছেন মিছিলকারীরা।
চার ভাইবোনের মধ্যে মো.

হাসান বড়। প্রায় ৮ বছর আগে ঢাকার কাপ্তান বাজারে একটি ইলেকটনিক্সের দোকানে চাকরি নেন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মরদ হ আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যদায় এ দিবসটি পালিত হবে। রাজধাানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে ভাষা শহীদদের নিয়ে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশ’র মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।

রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশ’র কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এছাড়াও কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে।

আরো পড়ুন:

চির নিদ্রায় শায়িত ভাষা সৈনিক বড়দা

হিলির শূন্যরেখায় দুই বাংলার ভাষাপ্রেমিদের মিলনমেলা

মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী প্রদান করেছেন।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশী বাঙালিদের জন্য এই দিবসটি হচ্ছে শোক ও বেদনার। অন্যদিকে, মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত।

১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ব বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরানখানির আয়োজনসহ দেশের সকল মসজিদে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা জনক স্থানগুলোতে বাংলা ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেরিভিশন এবং অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং ভাষা শহীদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহীদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খলভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, ইত্যাদি জনসচেতনতা মূলক বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোতে প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া, বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্র বিশষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
 

ঢাকা/হাসান/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ
  • আগস্টে শহীদ সুজয়ের লাশ তুলতে পরিবারের বাধা