ফেসবুকে একাধিক নারী আইডি খুলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
Published: 15th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক নারীর নামে আইডি খুলে ও নারীকন্ঠ ধারণ করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ছাত্রলীগ নেতা জোবায়রুল হক জিয়ানকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাতকানিয়া থানার এসআই আনোয়ার হোসেন গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা জোবায়রুল হক উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল্লাহ এর ছেলে। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জিয়ানকে প্রতারণার অভিযোগে কয়েক বছর আগে আটক করে পুলিশ। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। তবে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি আবারও প্রতারণার পাশাপাশি মামলা বাণিজ্য শুরু করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করানো ও পরবর্তীতে মামলা থেকে অব্যাহতির নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত বছরের (৪ আগস্ট) সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিহাট এলাকায় অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, যাকে শত্রু হিসেবে সন্দেহ হয় তাকে মামলায় জড়িয়ে দেয় দিতেন ছাত্রলীগ নেতা জিয়ান। এছাড়া নারীকন্ঠ ধারণ ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা জোবাইরুল হক জিয়ান ২০২০ সালে (২৯ মে) সাতকানিয়া থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চট্টগ্রামের এক শিল্পগ্রুপের মালিকের মেয়ের ছবি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে নারীকন্ঠে প্রেমালাপ করে আসছিলেন তিনি। প্রেমালাপের একপর্যায়ে নানা অজুহাতে তাদের কাছ থেকে টাকা চাইতেন। যারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করতেন তাদের কলরেকর্ড ফাঁস করার ভয় দেখাতেন। এভাবে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর একপর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হর। গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। সে সময় প্রতারণার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রলীগ নেতা জিয়ান সাতকানিয়া সার্কেলের এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে চাঁদা আদায়, সাতকানিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা মো.
এ ছাড়াও জিয়ান উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. হাসান ও মো. আরিফ, ছদাহা ছমদিয়া পুকুরপাড়ের ডা. শাব্বির, ছৈয়দাবাদ মাদরাসার শিক্ষক জাকরিয়ার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পরে নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে এক লাখ টাকা করে আদায় করেন।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জাহেদুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা জোবায়রুল হক জিয়ানকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও মামলা বাণিজ্যসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর এক ধ ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সামাজিক উৎপাত: প্রতিবাদ করায় কোপ খেলেন উত্তরার দম্পতি
ঢাকার সড়ক, অলি-গলিতে হুটহাট ঝুঁকিপূর্ণ গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে উচ্চশব্দে হর্ন বাজানোর মতো সামাজিক উৎপাতের একটি ঘটনার প্রতিবাদকারী এক দম্পতির করুণ পরিণতির বিষয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। প্রকাশ্যে এমন নৃশংসতার কারণ কী, তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে মানুষের মনে।
সামাজিক উৎপাত করা এই শ্রেণি কতটা ভয়ংকর, তাদের সন্ত্রাসী চক্র কতটা বেপয়োরা, সেই নমুনাও দেখা যায় উত্তরায় প্রকাশ্যে এই দম্পতিকে রামদা দিয়ে কোপানোর ঘটনায়। একই সঙ্গে উঠে আসছে ‘গ্যাং কালচার’-এর ভয়াবহ চিত্র। সেই সঙ্গে ভিডিওতে দেখা যাওয়া সন্ত্রাসীদের পরিচয় বেরিয়ে আসছে।
ঢাকার উত্তরায় ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ওই দম্পতিকে প্রকাশ্যে কোপায় একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা।
সন্ত্রাসীদের আঘাতে গুরুতর জখম হন উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৯/এ রোডের একটি বাসায় বসবাস করা মো. মেহেবুল হাসান ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ইফতি।
রামদার কোপে জখম হওয়া চিকিৎসাধীন মেহেবুল হাসানের অবস্থা গুরুতর।
এই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা নথিভুক্ত করতে যান মেহবুল হাসানের অফিস কলিগ মো. রাশেদ। মামলার বাদী নাসরিক আক্তার ইফতি।
পুলিশ বলছে, উত্তরার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. মোবারক হোসেন, যার বয়স ২৫ বছর এবং ২২ বছর বয়সি রনি রায়কে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার তাদের ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।
মোবারক ও রনির রিমান্ড চেয়ে করা আবেদনে উত্তরা পশ্চিম থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দ্বীন ইসলাম লিখেছেন, ভিডিওতে রামদা হাতে যে দুজনকে দেখা যাচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে তাদের নাম জানা গেছে। রামদা নিয়ে মেহেবুল ও ইফতিকে কোপাচ্ছিলেন আরাফাত ও সাইফ নামে দুজন। তারা উত্তরায় বসবাস করেন বলে ধারণা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, মোবারক ও রনি তো কিশোর নন। তবে তাদের সঙ্গে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সখ্য রয়েছে। ঘটনার দিন এই দুজন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মোবাইল করে ডেকে আনেন। তারা কয়েক মিনিটের মধ্যে রামদা নিয়ে ছুটে এসে ওই দম্পতির ওপর হামলা চালায়।
অবশ্য কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি রাইজিংবিডি ডটকম। যদিও ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরো তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
আদালতে রিমান্ড আবেদনে এসআই দ্বীন ইসলাম লিখেছেন, গ্রেপ্তার মোবারক ও রনি সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য। এর মধ্যে রনির নামে টঙ্গি থানায় ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানা জানিয়েছে, ভিডিওতে যে দুজনের হাতে রামদা দেখা গেছে, তাদের ডেকে আনেন মোবারক ও রনি। হামলায় জড়িত অন্যদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের জন্য মোবারক ও রনিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মেহবুল হাসান ও ইফতি দম্পতি উত্তরার আমির কমপ্লেক্সে শপিং করে ফিরছিলেন। তারা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির সামনে পৌঁছালে ইফতিদের মোটরসাইকেলের দুই পাশ দিয়ে অন্য দুটি মোটরসাইকেল জোরে হর্ন বাজিয়ে এলোমেলোভাবে যাচ্ছিল। একটিতে দুজন, অন্যটিতে ছিলেন একজন আরোহী। তাদের একটি মোটরসাইকেল সামনের মোড়ে একটি রিকশায় ধাক্কা দেয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, চালকসহ ধাক্কা খাওয়া রিকশায় চার বছর বয়সি শিশু ও তার বাবা-মা ছিলেন। শিশুটির বাবা নেমে মোটরসাইকেলে থাকা তিন ব্যক্তির এ ধরনের বেপরোয়া কাজের প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে থাপ্পর মারেন ওই ব্যক্তি। তখন মেহেবুল হাসান এগিয়ে গিয়ে বলেন, “ভাই, সরি বললেই তো হয়ে যায়। এত ঝামেলার করার কী দরকার?”
ইফতির বর্ণনা অনুযায়ী, এরপর ঘটনাস্থল থেকে রিকশার আরোহীরা চলে যান। তবে তখনো মেহেবুল হাসানের সঙ্গে তর্ক চলছিল ওই দুই মোটরসাইকেলের তিনজনের। একপর্যায়ে তারা মেহেবুলকে ধমকাতে থাকেন। তিনজন মিলে মেহবুলকে মারপিট শুরু করেন। তখন ইফতি তাদের বাধা দেন।
তিন ব্যক্তির মধ্যে একজন বলে ওঠেন, “তুই আমাদের চিনিস, আমরা কে?”এরপর মোবাইল করে লোকজন ডেকে আনেন ওই ব্যক্তি। তখন সেখানে কয়েকজন লোক জড়ো হয়ে যায়। তারা মোটরসাইকেলের ওই তিনজনকে থামানোর চেষ্টা করেন। এই ফাঁকে ১০ মিনিটের মধ্যে চার-পাঁচজন ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে মেহেবুল ও তার স্ত্রীর ওপর হামলা চালায়। এই দম্পতিকে তারা সেখানে কোপাতে থাকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা ও জলপাই রঙের শার্ট পরা দুই যুবক একজন পুরুষ ও তার সঙ্গে থাকা এক নারীকে রামদা দিয়ে কোপাচ্ছেন। এ সময় জীবন বাঁচাতে ওই নারীকে হাত জোড় করে সন্ত্রাসীদের থামতে অনুরোধ করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন অস্ত্রধারীদের ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে এবং পিটুনি দেয়।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মঙ্গলবার বিকেলে কথা হয় ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার প্রধান উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের সঙ্গে।
রাইজিংবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, “যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তাতে যাদের দেখা যাচ্ছে, ছবি ধরে ধরে তাদেরও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
“এ জন্য পুলিশের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছি।”
১৩ সেকেন্ডে ভিডিওর শুরুতে নারী-পুরুষের চিৎকার, চেঁচামেচি শোনা যায়। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ভিডিওটি জুম করা হয়। তখন দেখা যায়, সড়কের মাথায় একটি বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতের পাশাপাশি থাকা এক নারীকে রামদা দিয়ে জোরে আঘাত করছে এক যুবক। নারীর পাশে থাকা পুরুষকে কোপাচ্ছে আরেক যুবক। এরপর নারী-পুরুষ দুদিকে সরে যান। একপর্যায়ে ওই পুরুষ একটি রিকশার পাশে গিয়ে আশ্রয় নেন।
ভিডিওর এই নারী-পুরুষের নাম-পরিচয় এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিওর নারী হলেন ইফতি ও পুরুষ হলেন মেহেবুল।
ভিডিওর শেষ দিকে দেখা যায়, ইফতি তার স্বামীকে বাঁচাতে রামদা হাতে এক যুবকের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যান। তখনই একজনকে বলতে শোনা যায়, “দাও দিয়ে কোপাইতেছে, এটা কোন কথা।” এরপর অস্ত্রধারীরা চলে যাওয়া শুরু করে। তখন লোকজন ধাওয়া দিয়ে দুজনকে ধরে ফেলে। তাদের গণপিটুনি দেয় জনতা।
উত্তরা পশ্চিম থানার তদন্ত কর্মকর্তা দ্বীন ইসলাম বলেছেন, গণপিটুনিতে আহত মোবারক ও রনিকে উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশি মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মোবারকের মাথায় সেলাই দেওয়া লেগেছে। তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঢাকা/রাসেল