বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের পর কবি সোহেল হাসান গালিবকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ রিমান্ড ও জামিন আবেদন নাকচ করে এ আদেশ দেন। এর আগে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে তাঁর মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ১০৫ শিল্পী-সাহিত্যিকসহ বিশিষ্টজন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। 

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, কবি গালিবকে শুক্রবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড চান ডিবির কোতোয়ালি জোনাল টিমের এসআই হুমায়ুন কবীর। তাঁর আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো এবং আগামী সাত দিনের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

২০২৪ সালে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উজান থেকে প্রকাশিত বইয়ে গালিবের লেখা একটি কবিতা ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

)-কে ‘কটাক্ষ’ করার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় আতঙ্কে অমর একুশে বইমেলায় উজানের স্টল বন্ধ রয়েছে।

গালিব একটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। শুভাকাঙ্ক্ষীরা জানান, স্বতন্ত্র ভাষাশৈলী ও বিদ্রুপাত্মক লেখার জন্য তাঁর পরিচিতি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি সক্রিয়। সেখানে একটি কবিতা পোস্ট করার পরই মূলত তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ ওঠে। যদিও ওই কবিতায় ধর্ম অবমাননার উপাদান ছিল না বলে দাবি তাদের। বরং কবিতাটি ছিল বিদ্রুপাত্মক, যা সংক্ষুব্ধরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।

উজানের প্রকাশক ষড়ৈশ্বর্য মুহাম্মদ বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা এবং কর্তৃপক্ষের দিক থেকে সুনিশ্চিত কোনো আশ্বাস না থাকায় গত বুধবার থেকে স্টল বন্ধ রেখেছি। যে বইটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে, সেটি মেলার প্রথম দিনই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। 

গ্রেপ্তারে ১০৫ শিল্পী-সাহিত্যিকের প্রতিবাদ

কবি সোহেল হাসান গালিবকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন ১০৫ শিল্পী-সাহিত্যিক। শনিবার এক বিবৃতিতে তারা জানান, আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষের এই ধরনের পদক্ষেপ লেখকের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের পরিপন্থি এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গেও অসংগতিপূর্ণ। তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম, প্রাবন্ধিক রাজু আলাউদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, কবি চঞ্চল আশরাফ,  কথাসাহিত্যিক মাসকাওয়াথ আহসান, কথাসাহিত্যিক রাশিদা সুলতানা, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক খালেদ হোসাইন, লেখক রওশন জামিল চৌধুরী, জিএইচ হাবীব, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম, অধ্যাপক সাবিহা হক, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ প্রমুখ। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বমানবতার স্বাধীনতার মাস রমজান

ইসলাম সব মানুষকে ব্যক্তিস্বাধীনতা, পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক শৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা লাভের অধিকার দিয়েছে। মানবতার মুক্তির সনদ আল–কোরআন আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি নাজিল হয়েছে পবিত্র রমজান মাসে। রমজান মাসেই রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মার স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন, মানুষের গোলামি বা দাসত্ব থেকে মুক্তি ঘোষণা করলেন, জালিম শাহি ও জুলুমের জিঞ্জির থেকে মুক্তির ঘোষণা দিলেন। তাগুতি শাসন ও শোষণ থেকে এবং সব শয়তানি শক্তির বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করার স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন।

‘রহমাতুল লিল আলামিন’ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘হজের বা আরাফাতের দিবস যেমন সম্মানিত, মক্কা নগর যেমন পবিত্র, কাবা ঘর যেমন মর্যাদাপূর্ণ; সব মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান তেমনি সম্মানিত ও সুরক্ষিত।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া) 

ইসলাম ব্যক্তিস্বাধীনতার পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। ব্যক্তিস্বাধীনতার সীমানা অন্যের অধিকারের প্রাচীর দ্বারা সীমাবদ্ধ।

রমজান মাস ইসলামি দর্শনে যেমনি স্বাধীনতার মাস, তেমনি বিজয়েরও মাস। ইসলামের প্রথম জয় বদর বিজয় হয়েছিল দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসের ১৭ তারিখেই। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ জয় মক্কা বিজয় হয়েছিল অষ্টম হিজরিতে ১৯ রমজানে।

শুধু জাগতিক স্বাধীনতা ও বিজয় নয়; বরং আত্মিক মুক্তি ও বিজয় সম্ভব এই রমজান মাসেই। যার জন্য প্রয়োজন যথাযথ উপায়ে সিয়াম সাধনা। তাকওয়া, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতাও বিজয়ের পূর্বশর্ত। আত্মা বা নফস মোহমুক্ত ও স্বাধীন হলেই প্রকৃত অর্থে দুনিয়ার বিজয় বা সফলতা এবং পরকালে মুক্তি বা জীবনের সার্থকতা লাভ হয়। 

মনোজগতে মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, সংযম এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসাই মানুষকে সব ক্ষেত্রে সফলতা এনে দেয়। 

কোরআন মজিদে এ বিষয় বোঝাতে স্বৈরাচারী জালুতের বিপুল সৈন্যর সঙ্গে হজরত তালুতের স্বল্পসংখ্যক মুজাহিদ বাহিনীর সফলতা ও বিজয়ের কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে। ‘অতঃপর তালুত যখন সৈন্যবাহিনীসহ অভিযানে বের হলো, সে তখন বলল, “আল্লাহ একটি নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। যে তা থেকে পানি পান করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। আর যে এর স্বাদ গ্রহণ করবে না, সে আমার দলভুক্ত। এ ছাড়া যে এক আঁজলা পরিমাণ পানি গ্রহণ করবে, সে–ও আমার দলভুক্ত থাকবে।” অতঃপর অল্পসংখ্যক ব্যতীত তারা তা (নদী) থেকে পান করল। সে (তালুত) এবং তার সঙ্গী ইমানদারেরা যখন তা (নদী) অতিক্রম করল, তখন তারা বলল, জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো শক্তি আজ আমাদের নেই। কিন্তু যাদের দৃঢ়প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে, তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। 

‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। তারা যখন যুদ্ধার্থে জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর সম্মুখীন হলো, তখন তারা বলল, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ধৈর্য দান করুন, আমাদের দৃঢ়পদ ও অবিচল রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।” সুতরাং তারা আল্লাহর হুকুমে তাদের পরাভূত করল, দাউদ (আ.) জালুতকে হত্যা করলেন, আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও হিকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন, তা তাকে শিক্ষা দিলেন। 

‘আল্লাহ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ জগৎসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল। এসব আল্লাহর আয়াত, আমি তোমার কাছে তা যথাযথভাবে উপস্থাপন করছি; আর নিশ্চয়ই তুমি রাসুলদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৪৯-২৫৩)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বমানবতার স্বাধীনতার মাস রমজান
  • শুক্রবারের আমল