কারাগারে কবি গালিব, মুক্তির দাবি বিশিষ্টজনের
Published: 15th, February 2025 GMT
বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারের পর কবি সোহেল হাসান গালিবকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ রিমান্ড ও জামিন আবেদন নাকচ করে এ আদেশ দেন। এর আগে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে তাঁর মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ১০৫ শিল্পী-সাহিত্যিকসহ বিশিষ্টজন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, কবি গালিবকে শুক্রবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড চান ডিবির কোতোয়ালি জোনাল টিমের এসআই হুমায়ুন কবীর। তাঁর আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো এবং আগামী সাত দিনের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
২০২৪ সালে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উজান থেকে প্রকাশিত বইয়ে গালিবের লেখা একটি কবিতা ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.
গালিব একটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। শুভাকাঙ্ক্ষীরা জানান, স্বতন্ত্র ভাষাশৈলী ও বিদ্রুপাত্মক লেখার জন্য তাঁর পরিচিতি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি সক্রিয়। সেখানে একটি কবিতা পোস্ট করার পরই মূলত তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ ওঠে। যদিও ওই কবিতায় ধর্ম অবমাননার উপাদান ছিল না বলে দাবি তাদের। বরং কবিতাটি ছিল বিদ্রুপাত্মক, যা সংক্ষুব্ধরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।
উজানের প্রকাশক ষড়ৈশ্বর্য মুহাম্মদ বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা এবং কর্তৃপক্ষের দিক থেকে সুনিশ্চিত কোনো আশ্বাস না থাকায় গত বুধবার থেকে স্টল বন্ধ রেখেছি। যে বইটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে, সেটি মেলার প্রথম দিনই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তারে ১০৫ শিল্পী-সাহিত্যিকের প্রতিবাদ
কবি সোহেল হাসান গালিবকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন ১০৫ শিল্পী-সাহিত্যিক। শনিবার এক বিবৃতিতে তারা জানান, আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষের এই ধরনের পদক্ষেপ লেখকের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের পরিপন্থি এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গেও অসংগতিপূর্ণ। তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম, প্রাবন্ধিক রাজু আলাউদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, কবি চঞ্চল আশরাফ, কথাসাহিত্যিক মাসকাওয়াথ আহসান, কথাসাহিত্যিক রাশিদা সুলতানা, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক খালেদ হোসাইন, লেখক রওশন জামিল চৌধুরী, জিএইচ হাবীব, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম, অধ্যাপক সাবিহা হক, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ থেকে মুক্তির জন্য যে আমল করবেন
আর্থিক দুরবস্থায় পড়লে মানুষ ঋণ নিতে বাধ্য হয়। ঋণের টাকায় প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করে। তবে সাধ্যের বাইরে ঋণ দেওয়া-নেওয়া দুটিই ইসলাম নিষেধ করেছে। কারণ, তাতে সময়মতো ঋণ পরিশোধের সম্ভাবনা কমে যায়। এর ফলে ঋণদাতাকে যেমন হতাশাগ্রস্ত হয়, ঋণগ্রহীতার আত্মমর্যাদাও ক্ষতির শিকার হয়।
মহানবী (সা.) আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন যাতে তিনি ঋণে জড়িয়ে না পড়েন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) নামাজের পরে দোয়া করতেন—হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে গুনাহ ও ঋণ থেকে পানাহ চাচ্ছি। এক প্রশ্নকারী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি ঋণ থেকে বেশি পানাহ চান কেন? রাসুল (সা.) জবাব দিলেন, মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা ভঙ্গ করে। (বুখারি, হাদিস: ২,৩৯৭)
হাদিসে ঋণ থেকে মুক্তির আরও কয়েকটি দোয়া রয়েছে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল-আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দ্বালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমনপীড়ন থেকে। (বুখারি, হাদিস: ২,৮৯৩)
আরও পড়ুনবদলে দিতে পারে জীবনে চলার ধরন সুরা লোকমানের উপদেশগুলো০৯ জানুয়ারি ২০২৪রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল মাছামি, ওয়াল মাগরামি।’ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বুখারি, হাদিস: ৬,০০৭)
হজরত আনাস (রা.)–এর বরাতে একটি হাদিস জানা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া দ্বালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ, নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমনপীড়ন থেকে। (বুখারি, হাদিস: ২৮৯৩)
একজন বিশ্বাসী লোকের কাছে ঋণের বোঝার চেয়ে ভারি কিছু নেই। কারণ, ঋণ বান্দার হক। ক্ষমা না পেলে ঋণ থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই। তাই কেউ ঋণ মাফ করে দিলে ওই ব্যক্তির জন্য আখিরাতে অনেক বড় পুরস্কারের ঘোষণা এসেছে হাদিসে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু রবিআ আল-মাখযুমি (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.) হুনাইন যুদ্ধের সময় তাঁর কাছ থেকে ৩০ বা ৪০ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। নবী (সা.) যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তাঁর পাওনা পরিশোধ করেন। এরপর নবী করিম (সা.) তাঁকে দোয়া করে বললেন, ‘আল্লাহ–তাআলা তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। নিশ্চয়ই ঋণের প্রতিদান হলো, তা পরিশোধ করা ও প্রশংসা করা।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)
আরও পড়ুনআবু জাহেলের মা ছিলেন সাহাবি০১ নভেম্বর ২০২৩একবার এক লোক ঋণ পরিশোধের জন্য ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)–এর কাছে কিছু সাহায্য চাইলেন। আলী (রা.) তাঁকে বললেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে কয়েকটি শব্দ শিখিয়ে দিয়েছিলেন, আমি কি তোমাকে সেটা শিখিয়ে দেব? সেটা পড়লে আল্লাহ তোমার ঋণমুক্তির দায়িত্ব নেবেন। তোমার ঋণ যদি পর্বতপ্রমাণ হয়, তাহলেও।’ এরপর আলী (রা.) ওই ব্যক্তিকে কথাগুলো শিখিয়ে দিলেন, ‘আল্লাহুম্মাক ফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ, হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারও মুখাপেক্ষী কোরো না এবং তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে সচ্ছলতা দান করো। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৬৩; মুসনাদে আহমদ: ১,৩২১)
আরও পড়ুনআত্মীয়তা ভাঙতে রাসুল (সা.)–এর সতর্কতা১৯ জুন ২০২৩