আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যে নৌকা ডুবে গেছে, সে নৌকা বাংলাদেশে আর কখনোই ভাসবে না। ৫ আগস্টই ছাত্র-নাগরিক জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এখন অপ্রাসঙ্গিক।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে বেরিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আজ শনিবার বেলা তিনটার কিছু পরে দেশের ২৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চ্যাপটার এন্ড (অধ্যায় শেষ)। ৫ আগস্ট ছাত্র-নাগরিক সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটি জায়গায় ঐকমত্যে পৌঁছেছি যে পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ অপ্রাসঙ্গিক।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সরকার উদ্যোগ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে এবং পরবর্তী কোনো প্রক্রিয়ায় যাতে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ আর সক্রিয় হতে না পারে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রথম ধাপ হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর করতে হবে। ৫ আগস্ট জনগণ যে রায় দিয়েছে, সেটাই হবে প্রাতিষ্ঠানিক রায়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সব রাজনৈতিক দলকে একমতের জায়গায় পেয়েছি।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা ছাত্র-নাগরিক যে উদ্যোগটি নিয়েছিলাম, জুলাই ঘোষণাপত্রের, সেটি যেন রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে প্রাতিষ্ঠানিক করতে পারি। আজ মনে হয়েছে, সেটারই একটি এক্সটেন্ডেট ভার্সন (বর্ধিত সংস্করণ) হচ্ছে জুলাই চার্টার। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র দৃশ্যমান দেখতে চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ঐকমত য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় আটকে যায় সব সংস্কার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবগত। অনেক আলোচনা হয়েছে। এমনকি তা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একধরনের ঐকমত্যও আছে। কিন্তু শেষমেশ কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না।

দেশে নীতিপ্রণেতা, পরামর্শক ও বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে একধরনের দূরত্ব আছে। এমনকি বিদ্যায়তনের মানুষের কথা রাজনীতিবিদেরা মেনে নিলেও কিছু হয় না। তাতে শেষমেশ দেখা যায়, আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় গিয়ে সব সংস্কার আটকে যায়।

অর্থনীবিদ সেলিম জাহানের দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বই দুটির মধ্যে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ এবং মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ: কনটেমপোরারি ডেভেলপমেন্ট ইস্যুস’।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। সভাপতিত্ব করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম। সঞ্চালনা করেন বাঙলার পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ। আর বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন প্রমুখ।

রেহমান সোবহান বলেন,‘ দেশের সমস্যা কী এবং তার সমাধনই-ই বা কী, তা নিয়ে এক ধরনের ঐকমত্য আছে। আমরা জানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করা দরকার। কিন্তু শেষমেশ কোনোটি হয় না।’ কেন বারবার অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় না, এখন তার ভেতরের গল্প তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

পৃথিবীর অনেক দেশে সহিংসতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে এবং তারপর তারা অনেকেই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেলিম জাহান বৈশ্বিক পরিসরে কাজ করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে রওনক জাহান আহ্বান জানান, তিনি যেন সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে লেখেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে আবার কার্যকর করা যায়, তা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে লেখার আহ্বান জানান।

সংস্কার প্রসঙ্গে সব সরকারই বিশেষজ্ঞদের কথা অগ্রাহ্য করেছে বলে অভিযোগ করেন মাহ্‌ফুজ আনাম। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২৯টি টাস্কফোর্স গঠনে রেহমান সোবহান যুক্ত ছিলেন। টাস্কফোর্সগুলোর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতি ও প্রশাসনপ্রক্রিয়ার নানা সমস্যার সমাধান করা। টাস্কফোর্সগুলোয় ছিলেন সেই সময়কার দেশের ২৫৫ জন সেরা পেশাদার ব্যক্তি। কিন্তু সেই টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সম্ভবত পড়েও দেখেননি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান চলমান সংস্কারের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কারের চাপ দেওয়ার জন্য সমাজে নানা রকম গোষ্ঠী আছে, বিষয়টি সে রকম নয়। বরং নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী ছাড়া সমাজে আরও কেউ সংস্কার চায়, তেমনটা মনে হচ্ছে না।

সংস্কার প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য দরকার, তা না হলে কোনো উদ্যোগই আলোর মুখ দেখবে না। এর আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলেও সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিছু কাজ সেই সরকার করেছিল; কিন্তু শেষমেশ তার কিছুই টেকেনি।

বই দুটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেলিম জাহান বলেন, এগুলো গবেষণাধর্মী বই নয়। একদম সাধারণ মানুষ যেন পড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল বুঝতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে এই বই দুটি লেখা।

আলোচনায় প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, বাংলোদেশের অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বইটি সাংবাদিকদের পড়া উচিত। উন্নয়ন ও অগ্রগতির মধ্যে কী ফারাক, তা বোঝার জন্য এই বই পড়া জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা চলছে: প্রধান বিচারপতি
  • জিম্মির লাশ নিয়ে ফের যুদ্ধের শঙ্কা 
  • ছয় কমিশনের প্রতিবেদন এবং ঐকমত্যের প্রশ্ন
  • বাংলাদেশ হউক বহুপক্ষীয়
  • আগে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে গণ অধিকার পরিষদ
  • আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় আটকে যায় সব সংস্কার
  • দলগুলো সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব হবে: আলী রীয়াজ