কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়া চার বাংলাদেশি মাঝিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পার হলেও তাঁদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এতে পরিবারগুলো মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

এই জেলেরা হলেন টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়া বাসিন্দা নৌকার মাঝি মোহাম্মদ হাছান (৩০), আব্দু রকিম (২০), মো.

জাবের (২৬) ও মোহাম্মদ হাছান (১৬)।

শাহপরীর দ্বীপের নৌকার মাঝি মো. হাসানের স্ত্রী নুর নাহার বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী আটকের এক দিন পরে ফোন করেছিল। এ সময় তিনি বলেছিলেন, আমরা ভালো আছি। আরাকান আর্মি আমাদের রান্না করে খাওয়াদাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। তারা আজকাল ছেড়ে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেহেতু বিষয়টি জেনেছে, সে জন্য ছেড়ে দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে এবং বিজিবিকে বিষয়টি জানানোর জন্য বলেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি বিজিবিকে জানানো হয়েছে। এখন আর কোনো খোঁজখবর পাচ্ছি না। আরাকান আর্মির হাতে বন্দী থাকা অবস্থায় যে নম্বর থেকে ফোন করেছিল, সেই নম্বরে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আমরা খুব চিন্তায় আছি।’

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ নৌ ঘাটের সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, পাঁচ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত জেলেদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমারের আরাকান আর্মি। এই নিয়ে জেলে পরিবারগুলো খুব আতঙ্কের মধ্যে আছে। এখন ভয়ে কেউ নাফ নদীতে মাছ শিকারের যেতে পারছে না। তাঁরা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছেন।

স্থানীয় কয়েকজন জেলে বলেন, কয়েক দিন পরপর এভাবে অস্ত্রের মুখে জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। তাঁরা মাছ শিকার করে পরিবার চালান। এখন ভয়ে নদীতে মাছ শিকারে যেতে পারছেন না। এভাবে হলে স্ত্রী-সন্তানদের কীভাবে খাওয়াবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আরাকান আর্মির হাতে আটক জেলেদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। আটক জেলেরা দ্রুত বাড়ি ফেরত আসতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

আরও পড়ুননাফ নদী থেকে অস্ত্রের মুখে চার বাংলাদেশি জেলেকে জিম্মি করে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি: সেলিমা রহমান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমরা সবাই মিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, দেশে সুন্দর একটি পরিবেশ আসবে, তাঁরা সুন্দর একটি নির্বাচন দেবেন। কিন্তু পতিত সরকারের দোসররা আজ দেশের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। সরকার তাদের কিছু করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। দেশের মানুষ আজ না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথাগুলো বলেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়। নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান। সমাবেশ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

সমাবেশে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা চাই এই সরকার ব্যর্থ না হোক। তাহলে আমরা ব্যর্থ হয়ে যাব। এ জন্য তারেক রহমান আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখুন।’

ফ্যাসিস্ট সরকার আর ফিরতে পারবে না—উল্লেখ করে সেলিমা রহমান বলেন, ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো দেশের বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। তাঁরা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, ক্ষতির ষড়যন্ত্র করছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন কলেজে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে। ফ্যাসিস্টদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আগস্ট অভ্যুত্থানের শক্তি পড়ে গেছে। এটা তাঁদের বুঝতে হবে।

হাসিনা ভারতের সঙ্গে অসম বিভিন্ন চুক্তি করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দেশ ধ্বংস করেছে হাসিনা, দেশের টাকা লুট করে দেশের অর্থনীতি শেষ করে দিয়েছে হাসিনা। এখনো তারা ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হলে দরকার বিএনপি ও দেশপ্রেমিক জনতাকে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন, জবাবদিহিমূলক সরকার না হলে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, স্থিতিশীলতা আসে না।’ তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপি ১৬ বছর সংগ্রাম করেছে। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশ ফুঁসে উঠেছিল। এর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছিল।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, ‘হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে। আজও আমরা অপেক্ষায় থাকি আমাদের গুম হওয়া ভাইদের জন্য। বিএনপি যখন ১৬ বছর সংগ্রাম করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে শামিল হয়েছিল।’

মজিবর রহমান বলেন, ‘জনগণের কাছে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা চাই তারেক রহমানের অবিলম্বে দেশে প্রত্যাবর্তন। আমরা চাই, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাসিনার সরকারের হাজার হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার। আমরা চাই, দেশের সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করবে, রাজনীতি করবে।’

সমাবেশ শুরুর আগে বরিশাল জেলার সব উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগদান করেন নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহাবুবুল হক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শরফুদ্দিন আহমেদ, এবায়দুল হক, মোহাম্মদ দুলাল হোসেন, আবু নাসের রহমাতুল্লাহ, শহীদ হাসান প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মধ্যনগরে অনির্দিষ্টকালের ১৪৪ ধারা জারি
  • ‘বইয়ের অনুবাদ স্বত্ব কেনা মোটেও সহজ নয়’
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে দেশে আজ চরম অরাজক পরিস্থিতি: সেলিমা রহমান
  • ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ সারাদেশে গ্রেপ্তার ৬৮৪৯
  • এক সপ্তাহে অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে দুই দফা হামলা, থানায় জিডি
  • মহান শহীদ দিবসে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার র‍্যাবের
  • উত্তরায় কুপিয়ে জখমের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ২
  • আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতিতে নৈরাজ্য বাড়ছে: সাইফুল হক
  • কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের মামলা, আসামি অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০
  • শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় কুয়েট প্রশাসনের মামলা