বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে বিভোর ৪৫ বছর বয়সী তকু
Published: 15th, February 2025 GMT
নওগাঁর তৌহিদুর রহমান তকু ৪৫ বছর বয়সে এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে বিভোর। মানসিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘসময় পড়াশোনার বাইরে ছিলেন তপু। তবে অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে হার মানতে দেয়নি।
অসুস্থতা ও নানা প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কলা ও আইন অনুষদের (‘বি’ ইউনিটের) প্রথম পর্বের (সকাল ১০টা থেকে ১১টা) ভর্তি পরীক্ষা দেন তৌহিদুর রহমান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৪১৮ নম্বর কক্ষে তার আসন পড়েছিল।
তৌহিদুর রহমান তকুর বাড়ি নওগাঁ শহরের পার নওগাঁ এলাকায় ছোট যমুনা নদীর তীরে। বাবা মৃত বজলুর রশিদ পেশায় ছিলেন একজন স্টেশন মাস্টার।
রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রে দেখা যায়, তৌহিদুর রহমান নওগাঁর এনায়েতপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০২২ সালে দাখিল পরীক্ষায় ৪.
তবে তৌহিদুর রহমানের দাখিল ও আলিম পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডে দেখা যায় তার জন্ম তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০০৫। কিন্তু বাস্তবিকতায় তার বয়স কত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তৌহিদুর রহমান তপু ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, জীবন যে একটি ফুলশয্য নয়, তা হাঁড়ে হাঁড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন তপু। কিশোর বয়সে নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার আগেই মস্তিষ্কের জটিল রোগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তপু। ২৬-২৭ বছর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে গেছেন। স্ত্রী চলে যাওয়ার পরে মা ও বড় বোনই দেখাশোনা করেন তার।
সুস্থ হওয়ার পরে নওগাঁ সরকারি কে. ডি স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি ২০১৯ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসি, ২০২১ সালে দাখিল এবং ২০২৪ সালে আলিম পাশ করেন। সুস্থ হওয়ার পরে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, টিউশনি করে তকু সময় পার করেন। পরিবারের সদস্য হিসেবে একমাত্র মা আছেন। বিয়ে করেছিলেন পরে তালাক হয়ে যায়, সন্তানও নেই। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিউশনি করান, তাদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে তপু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ভালো ফল করতে চাই। আমি একজন শিক্ষক হতে চাই। আমি গরিব শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে চাই। তাদের স্বল্প খরচে পড়াতে চাই। দেশের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা যেন কম খরচে ভালো শিক্ষার মান পায়, সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ভর্তির সুযোগ না-ও পাই, আবার চেষ্টা করবো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবো।
যোগ্যতা অনুসারে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবেন তিনি। সুযোগ পেলে বাংলা অথবা ইংরেজিতে পড়তে চান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত হ দ র রহম ন পর ক ষ য় র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
পাবলিক অডিট বিলের খসড়া নিয়ে গোপনীয়তায় টিআইবির উদ্বেগ
‘পাবলিক অডিট বিল-২০২৪’ এর খসড়া নিয়ে গোপনীয়তার চর্চায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে অবিলম্বে খসড়া বিল উন্মুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানায় টিআইবি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান, একটি দাতা সংস্থা এবং বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের মধ্যে আবদ্ধ অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পাবলিক অডিট বিল-২০২৪ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
বিষয়টিকে অনভিপ্রেত উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘দীর্ঘ প্রত্যাশিত অডিট বিলের খসড়া মতামতের জন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের সম্পৃক্ততার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। প্রশ্ন হল, হিসাব নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষণ কি শুধু সরকারি ও একটি প্রভাবশালী ঋণদাতা সংস্থার বিষয়? এই বিল রাষ্ট্রের জনগণের অর্থসম্পদ ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হবে। ফলে এ বিলের বিষয়ে নাগরিক সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত নেওয়ার বিষয় পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।’’
এ অবস্থায় পাবলিক অডিট বিল-২০২৪ এর খসড়া জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত করতে আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
২০১৫ সালে ‘মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে (সিএজি) বাজেট, নিয়োগসহ সব বিষয়ে সাংবিধানিক স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করাসহ ২০ দফা সুপারিশ করেছিল টিআইবি।
এ প্রতিবেদনের উল্লেখ করে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিএজিকে শক্তিশালী করার দাবি আমরা দীর্ঘদিন ধরে উত্থাপন করে আসছি। গবেষণালব্ধ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আমরা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছিলাম। এর মধ্যে, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মাধ্যমে আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত নিরীক্ষা আইন, অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগের বিধিমালা অনুমোদন এবং সিএজিকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের বাইরে আনার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রত্যাশা ছিল, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিএজিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু খসড়া অডিট বিল পর্যালোচনা শুধুমাত্র সরকারি সংস্থাসমূহ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ফলে অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হওয়া অমূলক নয় যে, কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময়ের মতো এখনো সিএজিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আমলাতন্ত্রের হাতে করায়ত্ত করে রাখার পাঁয়তারা চলছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে যে, সিএজি সরকারের বা কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দেশি-বিদেশি আমলাতন্ত্রের অধীন কোনো সংস্থা নয়। এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যার চূড়ান্ত মালিকানা জনগণের। তাই খসড়া আইনটি অবিলম্বে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আগ্রহী অংশীজনের মতামতের সুযোগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময়ের জন্য উন্মুক্ত করার আহ্বান জানাই। পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় তা চূড়ান্ত করা হোক।’’
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ