তিস্তাপারের ১১ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
Published: 15th, February 2025 GMT
পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী সোমবার তিস্তার লালমনিরহাট প্রান্তে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’– স্লোগানে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার রংপুর নগরীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবীব দুলু। তিনি জানান, ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের’ ব্যানারে বৃহত্তর রংপুরে পাঁচ জেলায় নদীপারে ১১টি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি হবে। মঙ্গলবার রাতে সমাপনী সমাবেশে লন্ডন থেকে সবগুলো পয়েন্টে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তৃতা করবেন বলে জানান আয়োজক সংগঠনের এই প্রধান সমন্বয়ক।
জানা যায়, তিস্তা তীরবর্তী রংপুরের কাউনিয়া সেতু, গঙ্গাচড়ার মহিপুর সেতু, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টসহ লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ১১ পয়েন্টে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করবেন নেতাকর্মীরা। এ সময় নদীপারের মানুষের সংগ্রামী জীবন, আনন্দ-বেদনা নাটক ও সংগীতের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ে স্থানীয়রা সংগঠিত হতে পারবে। তিস্তা ইস্যু আন্তর্জাতিক পরিসরেও ছড়িয়ে পড়বে।
তিস্তাপারে কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি চলছে। রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় মাইকিং, গণসংযোগ ও পদযাত্রা হচ্ছে। গ্রামেও সাজ সাজ রব। তিস্তাপারে রাত কাটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নদী গবেষকদের নিয়ে সভা-সেমিনার ছাড়াও বড় পর্দায় সিনেমা দেখানো হবে। ভাওয়াল ও পালাগানে মুখর থাকবে ১১ পয়েন্ট। প্রতিটি পয়েন্টে দিনে ঘুড়ি উড়ানো ও রাতে মশাল প্রজ্বালন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার সমালোচনা করে আসাদুল হাবীব বলেন, ‘সম্প্রতি দুই উপদেষ্টা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে তিস্তার ভাঙনরোধে দ্রুত কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগে এ নিয়ে ব্যাপক কাজ হলেও তা কোনো কাজে লাগেনি। আবারও ভাঙনরোধের নামে জনগণের করের টাকার অপচয় আমরা চাই না। বিলম্ব হলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং পানির ন্যায্য হিস্যা সম্মিলিতভাবে আদায় করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের কাছে তিস্তার পানি নয়, ক্ষমতা চেয়েছেন পতিত শেখ হাসিনা। তাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে তিস্তা নিয়ে রংপুর অঞ্চলের মানুষের আকাঙ্ক্ষার দাবি কখনও গুরুত্ব পায়নি। ভারতের আপত্তির কারণে আওয়ামী লীগ সরকার চীনের অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা বাকস্বাধীনতা পেয়েছি। রংপুরের মানুষ তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে জেগে উঠেছে। অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে তিস্তার পানি নিয়ে আমাদের সঙ্গে ভারতের বৈষম্যের বিষয় গোটা বিশ্ব জানবে।’
সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, বিএনপি নেতা এমদাদুল হক ভরসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র হলো রাজশাহীতে
রাজশাহীতে মঙ্গলবার সকালে ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র। উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বনসংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী। এ সময় নতুন এই প্রজনন কেন্দ্রে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন ঘড়িয়াল জুটিকে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রধান বনসংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বনসংরক্ষক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বনসংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ বি এম সরোয়ার আলম, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ্।
বন বিভাগের পবা নার্সারির রেসকিউ সেন্টারে ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্রটি করা হয়েছে। শহীদ জিয়া শিশু পার্ক রোডে এর অবস্থান। ঘড়িয়ালের নিরাপত্তায় নতুন প্রজনন কেন্দ্রটির সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঘড়িয়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য লেখা রয়েছে।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বনসংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘নদীদূষণ, নাব্য হ্রাস, অতিরিক্ত মাছ আহরণ, অবৈধ শিকার, পাচার, ডিম নষ্ট হওয়া ও খাদ্য সংকটের কারণে ঘড়িয়ালের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটে। এসব কারণে আজ তারা বিলুপ্তির পথে। এ কারণে প্রজনন কেন্দ্রে প্রজননের মাধ্যমে ঘড়িয়ালের বংশ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ঘড়িয়াল সংরক্ষণে এ উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একটি পুকুরে ঘড়িয়াল প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় চিড়িয়াখানায় দুটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ছিল, যেগুলো আগে জেলেদের জালে ধরা পড়ে উদ্ধার করা হয়। এর একটিকে পাঠানো হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়, নাম রাখা হয় ‘যমুনা’। ঢাকায় ছিল চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল। অন্যদিকে ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল এনে রাজশাহীর পুকুরে ছাড়া হয়, নাম দেওয়া হয় ‘গড়াই’। রাজশাহীতে আগে থেকে থাকা স্ত্রী ঘড়িয়ালটির নাম হয় ‘পদ্মা’।
এই আন্তঃচিড়িয়াখানা বিনিময়ের মাধ্যমে ‘যমুনা’ ঢাকা চিড়িয়াখানায় তিনটি পুরুষ সঙ্গী পায়, আর রাজশাহীর ‘পদ্মা’ পায় ‘গড়াই’-কে। তবে আট বছরেও তাদের কোনো বাচ্চা হয়নি। কারণ ছিল প্রজননের অনুপযোগী পরিবেশ। এবার আইইউসিএন এবং সামাজিক বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাজশাহীতে গড়ে তোলা হলো ঘড়িয়ালের উপযোগী প্রজনন কেন্দ্র। নতুন ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন প্রাণিবিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীরা।