কুকি চিনের তাণ্ডবে ঘরছাড়ার দীর্ঘ ২৩ মাস পর সেনা সহায়তায় নিজ বাড়িতে ফিরেছেন ১৫ পরিবারের ৮১ জন সদস্য। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার দীর্ঘ ২৩ মাস পর সেনা সহায়তায় বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার বাকলাই পাড়ার গ্রামছাড়া ২৮টি পরিবারের মধ্যে ১৫টি পরিবারের ৮১ জন সদস্য তাদের নিজ বাড়িতে ফিরেছে। যৌথ অভিযানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় গ্রামবাসীরা নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। 

এর আগে বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি এলাকায় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (বম পার্টি) নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সশস্ত্র তৎপরতায় ২০২২ সালের মাঝামাঝি হতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন অধিকাংশ আদিবাসী। কুকি চিন সন্ত্রাসীদের অযাচিত চাঁদাবাজি, অন্যায় দাবি ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জোরপূর্বক মানবঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতে শিশুসহ পরিবার পরিজন নিয়ে এতদিন এসব পরিবারের সদস্যরা দুর্গম পাহাড় ও জঙ্গলে ক্ষুধা ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটিয়েছে। 

এতে আরও বলা হয়, ফিরে আসা পরিবারগুলোর জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করাসহ প্রয়োজনীয় রেশন সহায়তা প্রদান করা হয়। পাড়ার বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী একটি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করে। এছাড়া, এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং টিউশন ফি সুবিধা চালু করেছে সেনাবাহিনী।

পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর অত্যাচারে গ্রামছাড়া সকল ভুক্তভোগী পরিবারকে নিজ ঘরে ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ছবি তুইল্যা লাভ কী, সেতু অইলো কই’

‘ছবি তুইল্যা লাভ নাই। কত সাংবাদিক আইয়া ছবি লইয়া গেল। কোনও ফায়দা অইলো না। সেতু সংস্কার অইলো কই?’ বস্তা মাথায় নিয়ে দেবে যাওয়া বেহাল সেতু পার হচ্ছিলেন ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের পলাশকান্দা গ্রামের দুলাল মিয়া। এ সময় হতাশা প্রকাশ করে কথাগুলো বলেন তিনি। নির্মাণের সাত দিনের মাথায় বন্যার স্রোতে দেবে যায় এটি। এরপর সংস্কার হয়নি ২০ বছরেও।

সেতুটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এটি উপজেলার চানপুর, হরিরামপুর, জিগারকান্দা, বালিচান্দা, পলাশকান্দা, দনারভিটা, মাইঝপাড়া, পুড়াপুটিয়া, উগলিরপাড়সহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের অন্যতম মাধ্যম। দেবে যাওয়ায় বর্ষায় ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় তাদের। সেতুটি দ্রুত সংস্কারের দাবি এলাকার বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় পলাশকান্দা গ্রামের পাশখলা খালের ওপর নির্মাণ করা হয় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি। উভয় পাশে সংযোগ সড়কের সঙ্গে মাটি ভরাট না করায় কয়েকদিন পরই বন্যার পানির স্রোতে দেবে যায়। ফলে বহুল প্রত্যাশিত সেতুটি এলাকার মানুষ আর ব্যবহার করতে পারেননি। মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য এটি নির্মিত হলেও বাস্তবে কোনো লাভ হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে চলাচলের উপযোগী করতে সেতুর দু’পাশে বাঁশ-কাঠের সংযোগ সেতু নির্মাণ করে হেঁটে পার হচ্ছেন। দেবে যাওয়ার পর বারবার জনপ্রতিনিধিদের পালাবদল হলেও পরিবর্তন হয়নি অবস্থার। কর্তৃপক্ষও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অথচ ধানসহ এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতসহ যানবাহন দিয়ে রোগী ও পণ্য পরিবহনের বিকল্প তেমন কোনো পথ নেই।

নির্মাণের পর উভয় পাশে মাটি ভরাটের আগেই সেতু হেলে পড়ে জানিয়ে পলাশকান্দা গ্রামের কৃষক জিয়াউর হুদা বলেন, জন্মের পর থেকেই তাদের খাল পাড়ি দিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুর বেহাল দশার কারণে সড়কের উন্নয়নেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে বর্ষাকালে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। হেলে পড়া সেতু দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করা গেলেও যানবাহন চলাচল সম্ভব নয়। এতে উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে নিতে ৭ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।

কুটরাকান্দা কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, এ সেতু দিয়ে গ্রামের মানুষ ছাড়াও পাঁচটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চলাচল করতে হয়। বন্যার সময় চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। দূর দিয়ে ঘুরে আসতে হয়। সেতুটি খুব দরকার। অনেককে বলেও কাজ হয়নি।

গত ২০ অক্টোবর থেকে সিংহেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তারেক আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘আমি এ সেতুর ব্যাপারে অবগত নই। কেউ যদি এসে আবেদন করেন, তাহলে দেখব।’

উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আহমেদের ভাষ্য, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। এ সেতুর ব্যাপারে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ