ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে আজ শুরু হয়েছে ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব’-এর ২৩তম আসর। প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র [টিএসসি] মিলনায়তনে।
বিকেলে উৎসব উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক আ.
এ সিনেমা ছাড়াও দুপুর ১টায় আমজাদ হোসেনের ‘ভাত দে’, বিকেল সাড়ে ৩টায় আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রদর্শিত হয় নুরুল আলম আতিকের ‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমাটি।
ঢাবি চলচ্চিত্র সংসদ জানিয়েছে, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াই থেকে শুরু করে মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের অনুপ্রেরণা নিয়ে চলচ্চিত্র সংসদ গড়ে তুলেছে অনন্য আয়োজন। প্রতিবছরই উৎসবে বেশ সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি, এবার উৎসবটি সফল ও সার্থক হবে। উৎসবে ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর ‘বলী’, শঙ্খ দাশগুপ্তের ‘প্রিয় মালতী’, অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘রিকশা গার্ল’, আকরাম খানের ‘নকশিকাঁথার জমিন’, গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’, ধ্রুব হাসানের ‘ফাতিমা’, মিশুক মনির ‘দেয়ালের দেশ’ ও রায়হান রাফীর ‘তুফান’, ঋত্বিক ঘটকের ‘সুবর্ণরেখা’, দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’, কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’, আবু সাইয়ীদের ‘কিত্তনখোলা’, সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ ও আবদুল আহাদ তানভীরের ‘বাতাসের ফেনা’ দেখানো হবে।
উৎসবে নির্বাচিত ছবিগুলো নির্ধারিত মূল্যে টিকিট কেটে দেখা যাবে। টিকিট পাওয়া যাবে উৎসবের প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) প্রবেশমুখে। প্রতিদিন প্রদর্শিত হবে চারটি সিনেমা। এগুলো দেখা যাবে সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকেল সাড়ে ৩টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। পাঁচ দিনের এ উৎসব চলবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের দিনটা কেটে যায় কাজে, নিজের জন্য আর কিছুই থাকে না
জীবনের পড়ন্তবেলায় এসে ঈদের উৎসবকে যখন রোমন্থন করি, তখন স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যাই। ছোটবেলায় ঈদ ছিল এক অন্য রকম আনন্দের উৎসব। নতুন জামা বানাতে দরজির দোকানে মাপ দিতে যাওয়া, তারপর নতুন জামা হাতে পাওয়ার পর সেটি লুকিয়ে রাখা, যেন কেউ আগে দেখে না ফেলে! ঈদের দিন সইদের সঙ্গে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো, ভাই–বোনদের সঙ্গে স্টুডিওতে ছবি তুলতে যাওয়া—এসব আনন্দের মুহূর্ত আজও হৃদয়ে জাগরূক। মনে হয়, সময় যেন আটকে গেছে, আমি এখনো সেই শৈশব–কৈশোরের রঙিন দিনগুলোর মধ্যেই আছি। কিন্তু যখন বাস্তবতায় ফিরি, তখন সবকিছু বিমূর্ত হয়ে যায়, ধূসর ও বিবর্ণ মনে হয়। মনের অজান্তেই চোখের কোণে জল এসে জমে।
আমাদের ছোটবেলার ঈদ আজকের মতো জৌলুশময় ছিল না। মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, ছিল পরিমিত জীবনের শিক্ষা। দাদা–দাদার ভাইদের বিশাল পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না হতো বড় বড় পাতিলে। ঈদের এক সপ্তাহ আগেই শুরু হতো প্রস্তুতি। পুরোনো শাড়ির পাড় জোড়া লাগিয়ে দরজা–জানালার পর্দা বানানো হতো, সোডা দিয়ে কাপড় ধোয়ার আয়োজন চলত। মুড়ি, চিড়া ও খই সংগ্রহ করে রাখা হতো ঈদের সকালে মলিদা তৈরির জন্য। ময়দার সঙ্গে রং মিশিয়ে কাঁঠালপাতায় গোলা লেপে শুকিয়ে বানানো হতো পিঠা। এত কাজ, এত পরিশ্রমের মধ্যেও ক্লান্তি ছিল না; বরং ঈদের প্রস্তুতিই ছিল এক অন্য রকম আনন্দ।
ঈদের দিন ভোরে সাবান দিয়ে গোসল করে নতুন ছাপা থান কাপড়ের ফ্রক পরার আনন্দ আজও মনে পড়ে। তারপর পরিবারের মুরব্বিদের সালাম করে বয়সভেদে চার আনা থেকে এক টাকা পর্যন্ত ঈদের সালামি পাওয়া ছিল আমাদের কাছে বিরাট প্রাপ্তি! ঈদের সকালের শুরু হতো মলিদা দিয়ে, এরপর গুড়ের পায়েস কিংবা গুড়ের সেমাই। দুপুরের খাবারে থাকত মুরগির মাংস আর আলুর ঝোল, যার স্বাদ আজও স্মৃতির পাতায় অমলিন।
তারুণ্যে পা রাখার পর ঈদের উৎসব বদলে গেল। বরিশালে পড়াশোনার সময় ঈদ পায় নতুন রূপ—সেমাই, ফিরনি, জর্দা, পোলাও–কোরমার ভিড়ে ঈদ যেন ভোজন উৎসবে পরিণত হলো। এরপর কর্মজীবন, বিয়ে ও সংসারের দায়িত্ব এসে ঈদের রং পাল্টে দিল। নারীদের জন্য ঈদ মানে তখন শুধুই স্বামী–সন্তান ও সংসারের তাগিদ।
আজকের ঈদ আর আমাদের শৈশবের ঈদের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। একসময় ঈদ মানে ছিল সীমিত সম্পদের মধ্যেও অপরিসীম আনন্দ। এখন ঈদের বাহারি আয়োজন, নতুন কাপড়–গয়না, খাবারের জৌলুশ বেড়েছে; কিন্তু সেই আনন্দ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! আগে একটা সাধারণ ফ্রকেই যে আনন্দ লুকিয়ে ছিল, এখন অসংখ্য পোশাকের মধ্যেও তা খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, নারীদের ঈদ শুরু হয় গভীর রাতে—ফিরনি, সেমাই, হালিম, জর্দা, চটপটিসহ বাহারি রান্নার আয়োজন করে। সকালে রান্নার কাজ শেষ হতেই দুপুরের ও রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিতে হয়। ফলে ঈদের দিনটাই কেটে যায় কাজে, নিজের জন্য কিছুই আর থাকে না।
অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা