ব্যর্থ হলে জাতি ক্ষমা করবে না: আলী রীয়াজ
Published: 15th, February 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশের পথরেখা তৈরির জন্য জাতি আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “এ কাজে ব্যর্থ হলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।”
তিন বলেন, “দীর্ঘদিন সংগ্রাম ও অনেক প্রাণের বিনিময়ে আমরা এখানে এসেছি। ৬টি কমিশনের প্রস্তাবে সেই পথরেখার কথা উল্লেখ আছে। এখন আমাদের কাজ সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি, বাস্তবায়নের পথ-পদ্ধতি তৈরি করা।”
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
সরকারের পথচলায় বাধা সৃষ্টি করতে তারা ট্রাম্পের কাছেও গিয়েছিল: প্রধান উপদেষ্টা
দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা: ফখরুল
আলী রীয়াজ বলেন, “ঐকমত্য করতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দলগত ও জোটগত বৈঠক করব। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ থাকা। বিভিন্ন সময়ে আমরা আবারও মিলিত হব।”
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য যেহেতু এক, রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদ্ধতির সংস্কার করা এবং দ্রুততর সময়ে নির্বাচন করা, তাই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের পাশাপাশি বোঝাপড়া তৈরি ও একত্রে কাজ করা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সেই সহযোগিতা পাব বলে মনে করি।”
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবেও বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, “আমাদের কাজ হচ্ছে আপনাদের সহযোগিতা করা, সকলের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সনদ তৈরি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও যত দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া। এমন দলিল তৈরি করা যাত নতুন বাংলাদেশের প্রথম রেখা তৈরি করা যাবে।”
নির্বাচন আয়োজন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে দেশের ২৬টি দল এবং জোটের ১০০ জনের মতো প্রতিনিধি অংশ নেন।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঐকমত য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় আটকে যায় সব সংস্কার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবগত। অনেক আলোচনা হয়েছে। এমনকি তা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একধরনের ঐকমত্যও আছে। কিন্তু শেষমেশ কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না।
দেশে নীতিপ্রণেতা, পরামর্শক ও বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে একধরনের দূরত্ব আছে। এমনকি বিদ্যায়তনের মানুষের কথা রাজনীতিবিদেরা মেনে নিলেও কিছু হয় না। তাতে শেষমেশ দেখা যায়, আমলাতন্ত্রের দোরগোড়ায় গিয়ে সব সংস্কার আটকে যায়।
অর্থনীবিদ সেলিম জাহানের দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বই দুটির মধ্যে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ এবং মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ: কনটেমপোরারি ডেভেলপমেন্ট ইস্যুস’।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। সভাপতিত্ব করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। সঞ্চালনা করেন বাঙলার পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ। আর বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন প্রমুখ।
রেহমান সোবহান বলেন,‘ দেশের সমস্যা কী এবং তার সমাধনই-ই বা কী, তা নিয়ে এক ধরনের ঐকমত্য আছে। আমরা জানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করা দরকার। কিন্তু শেষমেশ কোনোটি হয় না।’ কেন বারবার অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায় না, এখন তার ভেতরের গল্প তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
পৃথিবীর অনেক দেশে সহিংসতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে এবং তারপর তারা অনেকেই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেলিম জাহান বৈশ্বিক পরিসরে কাজ করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে রওনক জাহান আহ্বান জানান, তিনি যেন সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে লেখেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে আবার কার্যকর করা যায়, তা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে লেখার আহ্বান জানান।
সংস্কার প্রসঙ্গে সব সরকারই বিশেষজ্ঞদের কথা অগ্রাহ্য করেছে বলে অভিযোগ করেন মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২৯টি টাস্কফোর্স গঠনে রেহমান সোবহান যুক্ত ছিলেন। টাস্কফোর্সগুলোর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতি ও প্রশাসনপ্রক্রিয়ার নানা সমস্যার সমাধান করা। টাস্কফোর্সগুলোয় ছিলেন সেই সময়কার দেশের ২৫৫ জন সেরা পেশাদার ব্যক্তি। কিন্তু সেই টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সম্ভবত পড়েও দেখেননি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান চলমান সংস্কারের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কারের চাপ দেওয়ার জন্য সমাজে নানা রকম গোষ্ঠী আছে, বিষয়টি সে রকম নয়। বরং নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী ছাড়া সমাজে আরও কেউ সংস্কার চায়, তেমনটা মনে হচ্ছে না।
সংস্কার প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য দরকার, তা না হলে কোনো উদ্যোগই আলোর মুখ দেখবে না। এর আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলেও সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিছু কাজ সেই সরকার করেছিল; কিন্তু শেষমেশ তার কিছুই টেকেনি।
বই দুটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেলিম জাহান বলেন, এগুলো গবেষণাধর্মী বই নয়। একদম সাধারণ মানুষ যেন পড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল বুঝতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে এই বই দুটি লেখা।
আলোচনায় প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, বাংলোদেশের অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বইটি সাংবাদিকদের পড়া উচিত। উন্নয়ন ও অগ্রগতির মধ্যে কী ফারাক, তা বোঝার জন্য এই বই পড়া জরুরি।