বাংলাদেশের চারদিকে বলিষ্ঠ জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটছে। এর আঁচ কিছুটা বাংলাদেশেও লাগছে। আবার বাংলাদেশের আশপাশে নতুন একটা স্নায়ুযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বৃহৎ শক্তিগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ের রাজনীতিতে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়া উচিত হবে না। নতুন এই বাস্তবতা মোকাবিলার জন্য জাতীয় সংহতি তৈরি করতে হবে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও কৌশলগত অপরিহার্যতা–বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ (বিআইপিএস)।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবীর। এ সময় তিনি বাংলাদেশের সামনে চারটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। মিয়ানমারের উগ্র জাতীয়তাবাদের নেতিবাচক ফল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন, এ কথা উল্লেখ করে হুমায়ুন কবীর বলেন, মিয়ানমারে এমন জাতীয়তাবাদ কমছে না। ভারতেও একই বিষয় ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যেও এমন ইঙ্গিত মিলছে। চারদিকেই একধরনের বলিষ্ঠ জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটছে। তার কিছুটা আঁচ বাংলাদেশেও লাগছে। এ বিষয়ে সাবধান থাকা দরকার।

বাংলাদেশের আশপাশে একটা নতুন স্নায়ুযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করেন হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, স্নায়ুযুদ্ধ আগে ইউরোপে থাকলেও এবার তা বাংলাদেশের ঘাড়ে এসেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র–চীনের মধ্যে টানাটানি, আবার ভারতের সঙ্গে চীনের। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দেশ। ফলে এখানে চিন্তার কারণ আছে এবং সাবধান হওয়া দরকার।

এ অঞ্চলের ভূ–অর্থনীতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে হুমায়ুন কবীর বলেন, এখানে প্রথম শক্তি চীন, যাদের অর্থনীতি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম। মিয়ানমারসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশ নিয়ে গঠিত আসিয়ান দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে উঠে আসছে। তৃতীয় শক্তি হিসেবে আসছে ভারত। ২৫ বছর পর এ অঞ্চলে ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হতে পারে, যা মার্কিন অর্থনীতির চার গুণ বড়। হয় এর সঙ্গে বাংলাদেশকে চলতে হবে। নয়তো এই অর্থনীতিগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী হবে, যারা বাংলাদেশকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ চায়, যা দেশকে নতুন ব্যবস্থাপনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে হুমায়ুন কবীর বলেন, নতুন প্রজন্মের উত্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

নতুন এই বাস্তবতা মোকাবিলার জন্য জাতীয় সংহতি তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় থাকতে হবে। অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি লাগবে। বাংলাদেশের বাইরে যে ভূকৌশলগত পরিবর্তনগুলো হচ্ছে, সেসব বুঝতে হলে সজাগভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। রোহিঙ্গার মতো ঝড় আসার আগেই প্রতিরোধমূলক কূটনীতির মাধ্যমে সামাল দিতে হবে। বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকেই নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের ওপর ভরসা রাখতে হবে।

বাংলাদেশের স্বার্থ দেখার জন্য উপযুক্ত মানুষ প্রয়োজন বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। উপযুক্ত মানুষেরা মূল্যবোধের অবক্ষয়ে জর্জরিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাঁরা বিদেশনীতি নিয়ে কাজ করবেন তাঁদের দক্ষতা একটু কম হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু তাঁদের বাংলাদেশের স্বার্থ দেখতে হবে।

এই অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্কহীনতা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন কামরুল আহসান। তিনি বলেন, তবে সম্পর্ক খারাপ হলে সে জায়গায় থাকা যাবে না। আর সম্পর্ক হতে হবে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের চাপের কারণে চীনের সঙ্গে কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তিতে বাংলাদেশ যায়নি বলে উল্লেখ করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) আমিনুল করিম। তিনি বলেন, প্রকল্প নিলেই হবে না, এর প্রভাব সম্পর্কে বুঝতে হবে। বৃহৎ শক্তিগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ের রাজনীতিতে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়া উচিত হবে না।

দেশের অভ্যন্তরে নিজেরা ঠিক থাকলে বিদেশনীতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন আইনজীবী আফজাল এইচ খান। তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়তে পারলে ভূরাজনীতিসহ অন্যান্য সংকট ভালোভাবে মোকাবিলা করা যাবে।

বাংলাদেশের হুমকি বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আফজাল এইচ খান বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেনা মোতায়েনের কথা বলেছিলেন। তখন মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মিয়ানমার সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই দেশটির ওপর।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত নাক গলাচ্ছে, মন্তব্য করে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ভারত, চীনসহ সবার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক থাকতে হবে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের অন্যদের ভারতে বসে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের (বিআইপিএস) চেয়ার সিএএফ দৌলা। তিনি সেমিনার সঞ্চালনাও করেন। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর নির্ভর করে আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ভারতের জাতীয়তাবাদকে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হিসেবেও দেখছেন দৌলা।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপদেষ্টা আবুল কাশেম চৌধুরী।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য র জন ত ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

এপ্রিলে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড়ের আভাস

বঙ্গোপসাগরে চলতি এপ্রিল মাসে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এর ফলে তিন দিন তীব্র কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানতে পারে। এছাড়া, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।    

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) আবহাওয়াবিদ মো. মমিনুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিভিন্ন মডেল পূর্বাভাস, আবহাওয়া উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়ার মানচিত্র ও জলবায়ু মডেল বিশ্লেষণ করে এপ্রিল মাসের জন্য এ পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিসের বিশেষজ্ঞ কমিটি। 

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সময় দেশে ৫ থেকে ৭ দিন বজ্র এবং শিলাবৃষ্টিসহ হালকা বা মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, ১ থেকে ৩ দিন তীব্র কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।

এতে জানানো হয়, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
 
এপ্রিলে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এ সময় দেশে ২ থেকে ৪টি মৃদু অথবা মাঝারি এবং ১ থেকে ২টি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
 

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ