Prothomalo:
2025-02-22@23:26:48 GMT

১৩ তারিখ গেল, কিছু তো ওল্টাল না!

Published: 15th, February 2025 GMT

ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে আমার এক ফেসবুক বন্ধু স্ট্যাটাস দিলেন, ‘১৩ তারিখের পর সব বদলে যাবে।’

আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক ওই বন্ধু ১২ ফেব্রুয়ারি লিখলেন, ‘কাল বিরাট সুসংবাদ আসছে।’

শুধু আমার ওই বন্ধু নন, আরও অনেক ফেসবুক বন্ধুকে দেখলাম একই ধরনের কথা লিখতে। কেউ কেউ খুব মারমুখী কথাও লিখেছিলেন।

যেমন, ‘কাল সব উল্টে যাচ্ছে। একজনও পালানোর পথ পাবে না’; ‘কাল ইউনূস সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজবে’; ইত্যাদি।

কেন তাঁরা ‘সব উল্টে যাবে’ বলে অতি আশায় উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলেন, তা বোঝা যাচ্ছিল। কারণ ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

আরও পড়ুনদিল্লিতে কেজরিওয়াল ‘ডাউন’, কিন্তু এখনো ‘আউট’ নন১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বৈঠকের আগের দিন আমেরিকায় বসবাসকারী আওয়ামী সমর্থকেরা ‘ওয়েলকাম, মোদিজি!’ লেখা প্ল্যাকার্ড ফেসবুকে পোস্ট করেছেন এবং সবাইকে মোদিকে স্বাগত জানানোর জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এরপর ‘মোদিজি’ ওয়াশিংটনে এলেন। ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখলাম, এক বয়স্ক লোক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘অয়েলকাম! অয়েলকাম!’ (সম্ভবত তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘ওয়েলকাম’) বাকিরা বলছেন, ‘মোদিজি! মোদিজি!’ এরপর তিনি বলছেন, ‘উই সাপোর (সম্ভবত তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘উই সাপোর্ট’), উই সাপোর!’ বাকিরা সম্মিলিতভাবে বলছেন, ‘মোদিজি! মোদিজি!’ এরপর ভদ্রলোক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘উই আর ফর, উই আর ফর!’ বাকিরা তখন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা! শেখ হাসিনা!’

এরপর ট্রাম্প-মোদি বৈঠকটি হলো। কিন্তু কিছুই ওল্টাল না।

আরও পড়ুনবিগ টেক যেভাবে ট্রাম্পের অভিবাসন দমননীতিকে শক্তিশালী করছে৪৭ মিনিট আগে

তবে কিছু একটা উল্টাল তাঁদের বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে ট্রাম্পকে একজন ভারতীয় সাংবাদিক বললেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইস্যুতে আপনার বলার কী আছে? কারণ আমরা দেখেছি, আমেরিকার ডিপ স্টেট বাইডেন আমলে দেশটির সরকার পরিবর্তনে জড়িত ছিল—এটি স্পষ্ট। এরপর মুহাম্মদ ইউনূস জুনিয়র সোরোসের সঙ্গেও দেখা করেন। বাংলাদেশ নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?’

জবাবে ট্রাম্প যা বললেন, তার মানে দাঁড়ায় ‘না, আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) এ নিয়ে বহু বছর কাজ করেছেন। আমার যা পড়াশোনা তাতে জেনেছি, এটা নিয়ে শত শত বছর ধরে (ভারতের দিক থেকে) কাজ করা হয়েছে। (এ কারণে) বাংলাদেশ (ইস্যুতে কথা বলার ভার) আমি প্রধানমন্ত্রীর (মোদির) ওপর ছেড়ে দিচ্ছি।’

এই বলে ট্রাম্প পাশে বসা নরেন্দ্র মোদির দিকে ইঙ্গিত করলেন। মোদি ট্রাম্পের এই কথার মানে বুঝতে পেরেছিলেন কিনা তা বোঝা গেল না।

তবে তাঁর চেহারায় যে বিষণ্নতা ও বিরক্তির ছাপ ছিল, তা যে কারও কাছে স্পষ্ট হবে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কাছে মোদি-পুতিনের বন্ধুত্বের অর্থ কী০২ আগস্ট ২০২৪

যা হোক, মোদি বাংলাদেশ নিয়ে একটি শব্দও বললেন না। তিনি প্রসঙ্গটিকে সোজা ইউক্রেনে নিয়ে ফেললেন এবং যুদ্ধ যে কোনো সমাধান আনতে পারে না—সেই চিরায়ত বাণীটি ঋষি বাক্যের মতো করে সাংবাদিকদের কাছে পরিবেশন করলেন।

বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের এমন জবাব এবং মোদির এমন পাশ কাটানো কায়দা ভারতের মোদি সমর্থকদের কতটা হতাশ করেছে, তা বোঝা না গেলেও ‘মোদিজি! মোদিজি!’ বলে গগনবিদারী আর্তনাদ করা আমার সেই বন্ধুরা যে মুষড়ে পড়েছেন, তা বুঝতে পারছি।

মোদির ডাউন পারফরম্যান্সে যতই তাঁদের হতাশ হতে দেখছি, ততই লজ্জা পাচ্ছি।
অবাক বিস্ময়ে ভাবছি, আওয়ামী লীগের রাজনীতি কোন পর্যায়ে নামলে দলটির কর্মী সমর্থকেরা ভিন্ন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আরেকটি দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে এভাবে ‘উই সাপোর! উই সাপোর! মোদিজি মোদিজি!’ বলে স্লোগান দেন।

বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ এখন তার সবচেয়ে বড় ত্রাতা মনে করছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, মোদি ট্রাম্পকে কিছু একটা বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাংলাদেশের ‘সব উল্টে’ দেবেন। কিন্তু ট্রাম্প তাঁদের আশার বাটি উল্টেই দিলেন।

অনুশোচনাহীনতা ও লজ্জার ঘাটতিই সম্ভবত আওয়ামী লীগের বন্ধুদের এই অপরিপক্ব আশার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। রাজনীতিতে নাকি সব চলে। তাই বলে রাজনীতি ব্যক্তির নিম্নতম ব্যক্তিত্ববোধও কেড়ে নেবে? হয়তো নেয়।

মানুষের নৈতিক বোধের অন্যতম পরিচয় তার লজ্জা। এই লজ্জা বেপরোয়াকে সংযত করে। আর লজ্জাবোধ হারিয়ে গেলে মানুষ হয়ে ওঠে নির্লজ্জ। নির্লজ্জতার সঙ্গে অনুশোচনাহীনতার যোগ ব্যক্তিত্ববোধকে হত্যাই করে ফেলে।

অনুশোচনাহীন ও লজ্জাহীনের শক্তিলাভ যে কত ভয়ানক হতে পারে তার প্রথম উদাহরণ হলেন সম্রাট নিরো। তিনিই দেখিয়েছিলেন, বেহালার সুরেলা বাদ্যও চরম মেজাজ খারাপ করার কারণ হতে পারে, যদি তা রোম পোড়ার সময় বাজানো হয়।

মোসাহেবরা নিরোকে একবার বলল, ‘গান তো আছেই। এবার খেলাধুলা করুন সম্রাট!’ নিরো তাই শুনে অলিম্পিকে নামলেন। তিনি যতবার, যত ইভেন্টে নেমেছেন, ততবারই জিতেছেন। কেউ জেতার সাহস পায়নি। তাঁর কাজকারবারের সমালোচনা করায় তিনি তাঁর মা আগ্রিপিনা, প্রথম স্ত্রী অক্তাভিয়া এবং অনেক শীর্ষ পর্যায়ের সিনেটরকে হত্যা করেছিলেন।

ইতিহাস বলছে, নিরো (৩৭-৬৮ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যের পঞ্চম সম্রাট। তিনি বেহালা বাজাতেন। গানও গাইতেন।

সামনে বসে মোসাহেবরা বলতেন, ‘দুর্দান্ত সম্রাট! ওয়ান মোর! ওয়ান মোর!’ তাই শুনে নিরো নিজেকে মহান শিল্পী ঠাওরে মঞ্চে গাওয়া শুরু করলেন। তাঁর গানের সময় কেউ দর্শকের আসন থেকে নড়তে পারত না। সেনারা নজর রাখত, তাঁর গান শুনে কেউ বিরক্তি প্রকাশ করে কিনা। করলেই তাঁর কল্লা যেত।

মোসাহেবরা নিরোকে একবার বলল, ‘গান তো আছেই। এবার খেলাধুলা করুন সম্রাট!’ নিরো তাই শুনে অলিম্পিকে নামলেন। তিনি যতবার, যত ইভেন্টে নেমেছেন, ততবারই জিতেছেন। কেউ জেতার সাহস পায়নি।

তাঁর কাজকারবারের সমালোচনা করায় তিনি তাঁর মা আগ্রিপিনা, প্রথম স্ত্রী অক্তাভিয়া এবং অনেক শীর্ষ পর্যায়ের সিনেটরকে হত্যা করেছিলেন।

৬৮ খ্রিষ্টাব্দে নিরোর বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল তাঁর অত্যাচারী শাসন, বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া এবং রাজ্যের অব্যবস্থাপনা। পাবলিক খেপে যাওয়ার পর সেনাবাহিনীও সরে পড়ে। নিরো তখন পালিয়ে যান।

শেষ পর্যন্ত নিরো বুঝতে পারেন, রোম তার হাতে নেই। তিনি পালিয়ে একটি গ্রাম্য ভিলায় আশ্রয় নেন। এ সময়ও কোনো অনুশোচনা ছিল না তাঁর।

তাঁর মধ্যে কোনো অপরাধবোধ কাজ করেনি। শুধু প্রতীক্ষা করেছেন, কখন অন্য দেশের কোনো শাসক এসে তাঁর গদি উদ্ধার করে দেবেন। শেষ পর্যন্ত কেউ আসেনি।

অনুশোচনাহীন ও লজ্জাহীনের শক্তিলাভ ও পতনের দ্বিতীয় উদাহরণের কথা চাইলে বলতে পারি। কিন্তু থাক, বলব না।

সারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক
[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ কর ষ পর য ফ সব ক আওয় ম প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

নিখোঁজ সন্তানের খোঁজ চান মা-বাবা

গাজীপুরে একটি ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কোলচুরি গ্রামের ১৯ বছর বয়সী যুবক বাদল সরদার। এরপর ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও সন্তানের কোন খোঁজ পাননি মা-বাবা। ছেলেকে খুঁজে পেতে এখন তারা বিভিন্ন স্থানে ছুটে বেড়াচ্ছেন।

নিখোঁজ বাদল সরদার মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কোলচুরি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এনাজুল সরদার ও মাজেদা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। 

পরিবার জানায়, গত বছরের ১৫ অক্টোবর বাড়ি থেকে বাদল সরদার ঢাকায় যায়। সেখানে ফুফুর বাসায় থেকেই রাজমিস্ত্রির যোগাল হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তিন মাস কাজ করার পর বন্ধুর মাধ্যমে গাজীপুরের একটি ইট ভাটায় কাজে যোগ দেন। যেখানে থেকে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগ হতো বাদলের। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার পর থেকে বাদলের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর বাদলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি পরিবারের। 

পরিবারের লোকজন গাজীপুরের ওই ইট ভাটায় গিয়েও বাদলের কোনো খোঁজ পাননি। পরে তারা গাজীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।  

নিখোঁজ বাদলের মা মাজেদা বেগম বলেন, “গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতেও মোবাইলে ছেলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সে ইট ভাটায় কাজ করে যে এক মাসের টাকা পেয়েছে, সেই টাকা পরের দিন পাঠানোর কথা বলেছে। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। পাগলের মতো অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাইনি। এখন যদি সংবাদটি প্রচার হলে সবার নজরে আসে। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।’

বাদলের বাবা এনাজুল সরদার বলেন, “আমার ছেলে কোথায় আছে, কেমন আছে কিছুেই জানি না। আমি আমার ছেলের সন্ধান চাই। ফিরে পেতে চাই আমার সন্তানকে।”

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইংলিশের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড গড়া জয়
  • ইংলিস-ঝড়ে ৪ ঘণ্টাও টিকল না ইংলিশদের রেকর্ড
  • ‘বড় ভাই আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি...’
  • ৫ হত্যার ১৫ বছর পর একই স্থানে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা 
  • আদালতের ভেতরে ঢুকে গ্যাংস্টারকে গুলি করে হত্যা
  • আশির দশকের বিয়ে ‘তেলাই থেকে ঘুরানি’
  • কুয়েতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
  • আফগানিস্তানকে ৩১৬ রানের টার্গেট দিলো দ. আফ্রিকা
  • আইসিসির মঞ্চে অভিষেক সেঞ্চুরিতে ভাস্বর রিকেলটন
  • নিখোঁজ সন্তানের খোঁজ চান মা-বাবা